অশ্রুসিক্ত স্বজন-সহকর্মীরা শেষ বিদায় জানালেন রুবেলকে
সবাইকে কাঁদিয়ে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় না ফেরার দেশে চলে গেছেন গুণী অভিনেতা আহমেদ রুবেল। তিনি আর সবার মাঝে নেই, এখনও বিষয়টি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে অভিনেতার সহকর্মী থেকে শুরু করে ভক্তদেরও। শোকাহত হৃদয়ে রুবেলকে শেষ বিদায় জানালেন তার স্বজন-সহকর্মীরা।
নিজের অভিনীত নতুন সিনেমা ‘পেয়ারার সুবাস’র বিশেষ প্রদর্শনী দেখতে এসে মারা যান আহমেদ রুবেল। অভিনেতার আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক, শোকস্তব্ধ গোটা শোবিজ অঙ্গন।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রুবেলের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্লাজায় আনা হয় অভিনেতার মরদেহ। ঢাকা থিয়েটারের উদ্যোগে আয়োজিত এই শ্রদ্ধা নিবেদনে হাজির হন দেশের নাট্য ও সিনেমা অঙ্গনের অনেক শিল্পী-তারকারা।
সেখানে অভিনেতাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি টুকরো টুকরো স্মৃতিও শেয়ার করেছেন তারা। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সেসব বলে রুবেলের আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করেছেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, অত্যন্ত অকালে চলে গেলো রুবেল। অভিনয় শিল্পে তার আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। আমার নির্মিত ‘গেরিলা’ সিনেমায় শহীদ আলতাফ মাহমুদের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছিল রুবেল। সেই স্মৃতিগুলো আজও মনে ভাসে। এত দারুণ অভিনয় করেছিল যে, আলতাফ মাহমুদ যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিলেন।
ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, এমন একটা মুহূর্তে কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। অসাধারণ একজন অভিনেতা, একজন ভালো মানুষ। আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে, কিন্তু অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নেওয়াটা সত্যিই কঠিন। হুমায়ূন আহমেদের ‘চন্দ্রকথা’ সিনেমায় তার সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। অন্তর থেকে চাইব, আহমেদ রুবেলের মতো অসময়ে যেন কেউ চলে না যায়।
একটা স্মৃতি শেয়ার করে অভিনেতা ফারুক আহমেদ বলেন, সিলেটে গিয়েছিলাম শুটিং করতে। আমি বাসে করে, সে তার গাড়িতে। শুটিং শেষে রুবেল জোর করে আমাকে গাড়িতে নিয়ে বসালো। আমাকে পেছনের সিটে বসিয়ে একটি বালিশ দিয়ে বলল, আপনি ঘুমান। আমি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলতে থাকি, যাতে সে না ঘুমায়। ভোরে যখন আজান দেয়, তখন দেখি আমি আমার বাসার সামনে। সেখানে নামিয়ে দিয়ে তবেই রুবেল তার বাসায় ফিরেছিল। তার মতো এমন ভালো মানুষের এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নেওয়া সত্যি কষ্টসাধ্য।
অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতা-সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি ও অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম বলেন, এটা সত্যি যে, আমরা একজন অসামান্য শিল্পীকে হারালাম। যার আরও অসাধারণ সব চরিত্রে কাজ করার কথা ছিল। যিনি সবসময় অভিনয় নিয়েই ছিলেন। এমন একজন মানুষ সবাইকে হঠাৎ স্তব্ধ করে দিয়ে চলে গেলেন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেন, রুবেল ভাই আমার সহশিল্পী ছিলেন। প্রচুর কাজ করেছি তার সঙ্গে। তিনি শুধু একজন গুণী অভিনেতাই নন, একজন ভালো মানুষ। শুটিং এলে বাড়তি কথা বলতেন না, শুধু নিজের চরিত্রে থাকতেন। সবাইকে বলব, তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমিও তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘সবসময় দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতেন, ‘পেয়ারার সুবাস’ কবে আসছে? অথচ আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে কিন্তু তিনি নেই। তার প্রয়াণে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি একজন গুণী মানুষকে হারাল।
জানা গেছে, শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে রুবেলের প্রথম জানাজা। এরপর অভিনেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গাজীপুরে। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে রুবেলকে আসর নামাজের পর দাফন করা হবে।
মন্তব্য করুন