কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী চলে যাওয়ার তিন বছর
ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরীর চলে যাওয়ার তিন বছর পূর্ণ হলো বুধবার (১৭ এপ্রিল)। ২০২১ সালের আজকের এই দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত এই অভিনেত্রী। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে একাধারে কবরী ছিলেন অভিনেত্রী, সংগঠক, নির্মাতা, প্রযোজক ও রাজনীতিক।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেন কবরী। তার আগের নাম ছিল মিনা পাল। অভিনেত্রীর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারে। তার বাবা কৃষ্ণদাস পাল ও মা লাবণ্য প্রভা পাল।
১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন কবরী। কাজ করেন টেলিভিশনে। এরপর দ্রুত সময়ে যুক্ত হন চলচ্চিত্রে। ১৯৬৪ সালে মাত্র নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মিনা পাল থেকে কবরী হয়ে ওঠেন তিনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে হিসেবে পরিচিতি পান এই নায়িকা।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হয় কবরীর। এরপর ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘দেবদাস’, 'অধিকার', ‘বেঈমান', ‘সারেং বউ’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘সুজন সখি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই কিংবদন্তি।
৫০ বছরের বেশি সময়ে চলচ্চিত্রে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী। ঢাকার চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন রাজ্জাক-কবরী।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কবরী। যুক্ত ছিলেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সঙ্গে। ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’ প্রকাশ পায়।
মৃত্যুর আগে সরকারি অনুদান পাওয়া ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’ সিনেমায় কাজ করছিলেন কবরী। সিনেমায় তিনি নিজেও অভিনয় করেন। এখানেও কবরী তুলে ধরার চেষ্টা করেন নতুন মুখ নিশাত সালওয়াকে। এর শুটিং ছিল প্রায় শেষ পথে। পাশাপাশি চলছিল ডাবিং ও সম্পাদনার কাজ। তবে ছবিটি পুরোপুরি শেষ করে যেতে পারেননি কবীর। বছর দুয়েক আগে তার ছেলে শাকের চিশতী সিনেমাটির শুটিং পুরো সম্পন্ন করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে চিত্ত চৌধুরীকে বিয়ে করেন কবরী। সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ১৯৭৮ সালে তিনি সফিউদ্দীন সরোয়ারকে বিয়ে করেন। ২০০৮ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পাঁচ সন্তানের মা ছিলেন কবরী।
অভিনয় ক্যারিয়ারে সেরা অভিনেত্রীর স্বীকৃতি স্বরূপ ছয়বার বাচসাস পুরস্কার, একবার বিসিআরএ অ্যাওয়ার্ডস এবং দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন কবরী। ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
মন্তব্য করুন