নিপুণের হুঁশ আসা জরুরি : ডিপজল
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নাসরিন আক্তার নিপুণ। রিটে মিশা-ডিপজলের নেতৃত্বাধীন কমিটির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় চলচ্চিত্রাঙ্গণে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিপুণের চরম সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ ও কুৎসিৎ মন্তব্য করার কারণে তাকে নিয়ে এ সমালোচনা হচ্ছে। এক সাক্ষাৎকারে ডিপজলকে অশিক্ষিত বলেন নিপুণ।
এ ঘটনার পরপর এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব বলেছেন, নিপুণের এ বক্তব্য শিল্পী সমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। আমাদের সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলকে নিয়ে তিনি যে অশালীন মন্তব্য করেছেন, তা আমাদের শিল্পী সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। তার এ মন্তব্য নিয়ে আমরা দুঃখিত ও লজ্জিত। কমিটির মিটিংয়ে অনেকে তাকে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত এবং মাথায় সমস্যা আছে বলে মন্তব্য করেছেন। তার চিকিৎসা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
ডি এ তায়েব বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার এহেন অযাচিত মন্তব্যের জন্য তাকে শোকজ করার। সন্তোষজনক উত্তর না পেলে আমরা তাকে সমিতি থেকে বহিষ্কার করে দেব। কারণ, তিনি আমাদের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ডি এ তায়েব বলেন, মনোয়ার হোসেন ডিপজল যাকে চলচ্চিত্রে নিয়ে এসেছেন, চলচ্চিত্রে জন্ম দিয়েছেন এবং যিনি তাকে ‘বাবা’ বলে ডেকেছেন, সেই তাকে বাজে ভাষায় ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার অর্থ হচ্ছে, তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। তা নাহলে, এমন মন্তব্য করতে পারেন না। তিনি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন, যে কেউ পারেন। তার অর্থ এই নয়, সমিতির সাধারণ সম্পাদককে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করবেন। এটা মানসিক বিকারগ্রস্ততা ছাড়া কিছু নয়।
এদিকে, এ ব্যাপারে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে খুব একটা আগ্রহী নন বলে জানান।
ডিপজল বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কমিটির সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
ব্যক্তিগত আক্রমণ নিয়ে তিনি বলেন,‘নিপুণকে চলচ্চিত্রে আমি এনেছি। তাকে আমি সন্তানের মতোই স্নেহ করি। নির্বাচনের আগে সে আমাকে ফোন করেছে। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। একটি টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে পা ধরে সালামও করেছে। সুসম্পর্কের মধ্য দিয়েই আমরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। নির্বাচনের পর তিনি আমাদেরকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারপর কী এমন হলো যে, তিনি পাগলামি করা শুরু করেছেন। অথচ আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা বাবা-মেয়ের মতো। শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি সম্পর্ককে তিক্ত করা হয়, তাহলে কী বলার থাকতে পারে? তাকে অনেকে ‘নির্লজ্জ’ বলছে। তার এ ‘নির্লজ্জ’ কথার জবাব দেয়ার মনমানসিকতা আমার নেই।
কথা প্রসঙ্গে ডিপজল বলেন, আমি যদি তাকে চলচ্চিত্রে না আনতাম, তাহলে চলচ্চিত্রে তার জন্মই হতো না। সে এখন কোথায় থাকত? ন্যূনতম জ্ঞানবুদ্ধি ও কৃতজ্ঞতাবোধ যাদের রয়েছে, তারা তো এ কথা বলতে পারে না! কেবলমাত্র মানসিক সমস্যা হলেই এ ধরনের আবোল-তাবোল বকতে পারে। তা নাহলে, তিনি এমন কথা বলবেন কেন? শিল্পী সমিতিতে যদি এমন সদস্য থাকে, তাহলে পুরো শিল্পী সমাজ তার দ্বারা বদনামের শিকার হবে। একমাত্র তার কর্মকাণ্ডের জন্যই গত দুই বছর শিল্পী সমিতির বদনাম হয়েছে। এবারের নির্বাচনে আমরা সবাই মিলে চেয়েছি, সমিতির ভাবমর্যাদা যাতে পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়। কিন্তু তিনি আবারও সেই একই কাজ করছেন। এতে সমিতি ও শিল্পী সমাজের বদনাম হচ্ছে। আজ আমাকে, কাল আরেকজনকে নিয়ে বলতে থাকবে। আমরা তা মেনে নিতে পারি না। কাজেই, তার এই ‘নির্লজ্জ’ আচরণ থেকে সমিতির মর্যাদা রক্ষায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, তাই নেয়া হবে। একজনের জন্য সবার বদনাম হবে, তা আমরা বরদাস্ত করতে পারি না।
ডিপজল বলেন, আমি তাকে বলব, আগে নিজের দিকে তাকাতে। নিপুণ কে, কি এবং কি করেন, তা তার নিজেরই ভেবে দেখা উচিত। এ ব্যাপারে তার হুঁশ আসা জরুরি।
মন্তব্য করুন