মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুতে বন্ধ ছিল গুগল, ভেঙে পড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা
‘কিং অব পপ’ নামে খ্যাত মাইকেল জ্যাকসন। যিনি ছিলেন একাধারে একজন মার্কিন সংগীতশিল্পী, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুল বিক্রিত অ্যালবামের গায়ক তিনি। আশির দশকে মাইকেল জ্যাকসন জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছান। ২০০৯ সালের এই দিনে ৫০ বছর বয়সে মারা যান তিনি, যার মাধ্যমে সংগীত দুনিয়ার অবিস্মরণীয় এক অধ্যায়ের ইতি ঘটে। মাত্রাতিরিক্ত প্রপোফল সেবনে ৫০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় বিশ্ব সংগীতের ইতিহাসের জনপ্রিয় এই মানুষটি।
তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সংগীতশিল্পী, যিনি এমটিভিতে এত জনপ্রিয়তা পান। বলা হয়, তার গানের ভিডিওর জন্যই এমটিভির ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। গানের সঙ্গে জ্যাকসনের নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রয়েছে রোবোট ও মুনওয়াক।
মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর ঘটনায় সারা পৃথিবীতে শোরগোল পড়ে যায়। ভেঙে পড়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে তার ভক্ত ও সাধারণ মানুষ গুগলে সার্চ শুরু করে। মাইকেল জ্যাকসন শব্দটি মিলিয়ন মিলিয়ন বার ইনপুট হওয়ায় গুগল কর্তৃপক্ষ মনে করে, তাদের সার্চ ইঞ্জিন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। যে কারণে তার মৃত্যুর দিনে আধাঘণ্টা বন্ধ থাকে গুগল। কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম।
মাইকেল জ্যাকসনকে ডাকা হতো ‘পপ কিং’ নামে। ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকান-আমেরিকান একটি পরিবারে জন্ম হয়েছিল তার। জ্যাকসনের ডাকনাম ছিল ওয়াকো জ্যাকো। কিন্তু নামটি খুবই অপছন্দ ছিল জ্যাকসনের। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম ছিলেন তিনি।
জ্যাকসনের বাবা জো জ্যাকসন পেশায় ছিলেন ইস্পাত শ্রমিক। তিনি মুষ্টিযোদ্ধাও ছিলেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় একটি ব্যান্ডদলে গিটার বাজাতেন। মাইকেলের মা ক্যাথরিন জ্যাকসন বাড়তি উপার্জনের জন্য খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। পিয়ানো বাজানোতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন ক্যাথরিন।
মাত্র চার বছর বয়স থেকে গান গাওয়া শুরু করেন মাইকেল জ্যাকসন। পাঁচ বছর বয়সে প্রথম জনসমক্ষে গান করেন। ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে ব্যান্ডদল ‘দ্য জ্যাকসন ফাইভ’। ব্যান্ডটির সদস্য ছিলেন জ্যাকসন ও তার চার ভাই। ১৯৭১ সাল থেকে জ্যাকসন একক শিল্পী হিসাবে গান গাইতে শুরু করেন।
জ্যাকসনের গাওয়া পাঁচটি সংগীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকর্ডের মধ্যে রয়েছে। সেগুলো হলো ‘অব দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)। এর মধ্যে ‘থ্রিলার’ আজ পর্যন্ত ১১২ মিলিয়নের উপর বিক্রি হয়েছে, যা সর্বোচ্চ বিক্রিত হওয়া অ্যালবাম।
সংগীতের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৪ সালে আটটি গ্র্যামি পুরস্কার অর্জন করে রেকর্ড গড়েছিলেন ‘পপ কিং’ মাইকেল জ্যাকসন। এক আসরে এতগুলো গ্র্যামি পুরস্কার ঝুলিতে ভরার রেকর্ড এত বছরেও ভাঙতে পারেননি আর কোনো সংগীতশিল্পী।
জীবদ্দশায় মোট ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছিলেন জ্যাকসন। তিনিই সবচেয়ে বেশি অ্যাওয়ার্ড ও নমিনেশন পাওয়া তারকা। এ জন্য হলিউড ওয়াক অব ফেমে ঠাঁই পেয়েছে তার নামে দুটি তারা। একটি তার নিজের জন্য। আরেকটি জ্যাকসন ফাইভ ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে।
মন্তব্য করুন