• ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

জয়া আহসানের জন্মদিনে যা লিখলেন কলকাতার নির্মাতা

বিনোদন ডেস্ক, আরটিভি

  ০১ জুলাই ২০২৪, ১০:২৬

অভিনয়কে তিনি ধারণ করেছেন শিরা-উপশিরায়, হয়ে উঠেছেন এপার-ওপার দুই বাংলারই জনপ্রিয় মুখ। আজ অভিনেত্রী জয়া আহসানের জন্মদিন। এ উপলক্ষে কলকাতার নির্মাতা ও অভিনেতা অরিন্দম শীল তাকে নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা লেখা লিখেছেন।

আরটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘সোমবার জয়ার জন্মদিন। অভিনেত্রী হিসাবে ও অনেকটা পথ পেরিয়ে এলো। ভেবেই আমার ভালো লাগছে। অনেকেই জানেন, এপার বাংলায় জয়ার প্রথম ছবি (‘আবর্ত’) আমার পরিচালনায়। তাই আজ ওর জন্মদিন উপলক্ষে লিখতে বসে অনেক পুরনো কথা পরপর মনে পড়ছে।

অভিনেত্রী জয়া এপার বাংলার দর্শকদের কাছে এখন পরিচিত মুখ। কিন্তু আজকের এই লেখায় আমি ওকে কীভাবে খুঁজে পাই, সেই অজানা গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই।

আমি শুরু থেকেই তারকা নয়, চরিত্রের কথা ভেবে অভিনেতা নির্বাচনের চেষ্টা করি। সেই ভাবেই ‘আবর্ত’ ছবিতে জয়াকে নির্বাচন করা। এপার বাংলায় তখন ‘চারু’ চরিত্রের জন্য অভিনেত্রীর খোঁজ করছি। অথচ চরিত্রটির জন্য একাকিত্ব, নিষ্পাপ, শান্ত একটা মুখ কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। তখন বাংলাদেশের আমার কয়েকজন বন্ধু আমাকে জয়ার কথা বলেন। সেটি ২০১০ সাল। মনে আছে, আমার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে জয়াকে ফোন করেছিলাম। তখন মোবাইলে আইএসডি খুব খরচসাপেক্ষ ছিল। জয়া আমাকে বলল, দাদা আমি ঢাকা থেকে অনেক দূরে শুটিং করছি। আপনাকে আমার কাজের কিছু নমুনা পাঠাচ্ছি। আপনি দেখে নিন। তারপর আমরা কথা বলব।

জয়ার সঙ্গে সেই ফোনাফুনির পর বেশ কিছু দিন কেটে গেল। তত দিনে আমি বাংলাদেশে ওর অভিনীত কিছু নাটক দেখে ফেলেছি। ছবিতে ওকে নেওয়ার জন্য আমার সিদ্ধান্ত তখন চূড়ান্ত।

জয়া আর আমি এর পর নিয়মিত ফোনে ‘সিন’ পড়তাম। আলোচনা করতাম। ও ওর মতামত জানাতো। ওই দু’বছরে আমাদের ফোনের আইএসডি খরচ যে কত হয়েছিল!

সব হয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় ওর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ও আলাপ। ঢাকারই এক প্রযোজক ও পরিচালকের অফিসে বসে জয়াকে ছবির গোটা চিত্রনাট্যটি পড়ে শুনিয়েছিলাম।

মনে আছে, সে সময় বাংলাদেশের এক জন অভিনেত্রীকে ছবিতে ‘কাস্ট’ করার জন্য আমাকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। তখন ওটিটি ছিল না। কথায় কথায় দুই বাংলার শিল্পীরা একসঙ্গে কাজ করতেন না। সেখানে জয়া নতুন মুখ, কিন্তু আমি আমার ‘ইনস্টিংক্ট’ থেকে কিছু বিষয় বুঝে এগিয়েছিলাম। পরে ছবি মুক্তির পর আমার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা প্রমাণিত হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ের একটি ঘটনা মনে পড়ে। সেটি নিয়েও খুব তর্ক-বিতর্ক হয়। ‘ঈগলের চোখ’ ছবিতে অনির্বাণের (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) সঙ্গে ওর চুম্বন দৃশ্য! আমি দেখতাম, জয়া সে সব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে অভিনয়ে মন দিতে পারে বারবার।

জয়া প্রসঙ্গে একটি ঘটনা না বললেই নয়। ‘আবর্ত’ ছবির শেষ দিনের শুটিং। লোকেশনের ফ্ল্যাটটি আমার বন্ধু হর্ষ নেওটিয়ার। লাঞ্চ ব্রেকের পর কাজ শুরু হবে। হঠাৎ আমার একজন সহকারী এসে বললেন, দাদা, জলদি আসুন। জয়াদি খুব কান্নাকাটি করছেন! আমি ছুটে যেতেই দেখলাম, জয়ার দু’চোখ বেয়ে জল পড়ছে। করুণ মুখে বলল, দাদা, বাবা আর নেই!

আমি সঙ্গে সঙ্গে ওকে ঢাকা ফিরে যেতে বললাম, কিন্তু জয়া আমাকে যা বলেছিল, আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে। ও বলেছিল, দাদা, আজকে শুটিং শেষ করতে না পারলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি সিনটা করি।

আমি ওর কথা শুনে হতবাক। কী বলব, বুঝতে পারছি না, কিছু ক্ষণ চুপ থেকে আমি ওকে তাও কাজ করতে বারণ করেছিলাম। তৎক্ষণাৎ ওর ঢাকা ফেরার ব্যবস্থা করলাম। হর্ষকে জানাতেই ও বলল, বাড়িটা রাখাই থাকবে।

সব কিছু মিটিয়ে জয়া কলকাতায় আসার পর আমরা ছবির শুটিং শেষ করেছিলাম। এই হচ্ছে জয়া আহসান।

‘আবর্ত’-র পর টালিপাড়ার প্রায় প্রতিটি ভালো পরিচালকের সঙ্গে জয়া কাজ করেছে। চরিত্রের জন্য ও প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে। আর অভিনয় করতে গিয়ে ওর একটা দৃঙ্গিভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করে। সেটি হলো, সব সময় প্রশ্ন করে, দাদা, অভিনয় করিনি তো? ‘বিহেভ’ করেছি তো?

জয়া হলো আক্ষরিক অর্থেই ‘ডিরেক্টরস অ্যাক্টর’। মন দিয়ে কাজ করে। কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুটিং ফ্লোরে থাকলে, তখন বাইরের পৃথিবীতে কী চলছে, সেটি ও ভুলে যায়। তখন অভিনয়, অভিনয় এবং অভিনয়ই ওর শেষ কথা!

বাংলাদেশে গেলে আমার শপিং গাইড জয়া। কোথায় ভালো শাড়ি ও পোশাক পাওয়া যায়, সেখানে জয়া আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। ওর মায়ের হাতের রান্না অসাধারণ। ও জানে, আমি কী কী খেতে পছন্দ করি। তাই কলকাতায় এলে মায়ের হাতের লঙ্কার আচার ও ভুনা গোস্ত আমার জন্য নিয়ে আসে জয়া। সে স্বাদ ভোলা কঠিন।

জয়ার সঙ্গে মাত্র দুটি কাজ করেছি। প্রায় ১২ বছর হয়ে গেল। আমি ওর সঙ্গে আবার কাজ করতে চাই। জয়াও আমার সঙ্গে আবার কাজ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু পরিচালক হিসাবে যতদিন না কোনও শক্তিশালী মুখ্যচরিত্র ওর জন্য তৈরি করতে পারব, ততদিন আমিও অপেক্ষা করতে চাই।

জয়াকে নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। অভিনেত্রী হিসাবে ও বার বার আমাদের চমকে দিয়েছে। আরও অনেকটা পথ ওকে অতিক্রম করত হবে। জন্মদিনে আমার কামনা, জয়া যেন ওর পারিবারিক জীবনে সুখে শান্তিতে থাকে। ভবিষ্যতে যেন ও আরও ভাল কাজ করে, সেটাই চাই। ওর সঙ্গেও খুব দ্রুত একটা নতুন কাজ শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছি।’

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বিনোদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বর্ণাঢ্য আয়োজনে কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের জন্মদিন উদযাপন
কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের জন্মদিন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুক্রবার 
তারেক রহমানের জন্মদিন আজ
জয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ মালয়ালম অভিনেত্রী