চোখের সামনে ঘর তলিয়ে গেলেও কাঁদতে দেখিনি: তাসরিফ খান
তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বেড়ে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়ে বন্যার্তদের দুর্ভোগের চিত্র দেখে এসেছেন কুঁড়েঘর ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও সংগীতশিল্পী তাসরিফ খান।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তাসরিফ লিখেছেন, উত্তরবঙ্গে তিস্তার পাড়ের চরাঞ্চলে, নদীভাঙনের কবলে পড়ে চোখের সামনে একটা ঘর তলিয়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু ঘরের মালিকের চোখে একবিন্দু কান্নার পানি দেখি নাই। নৌকা থামিয়ে নেমে কিছুটা কাছে গিয়ে ভয়ে ভয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এই যে আপনাদের ঘর নিয়ে গেলো, এখন কী করবেন?। তিনি সোজাসাপ্টা উত্তরে বললেন, কী করমু জানিনে।’
আরও কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলাম, যারা বাপ-দাদার ভিটা এবং ঘরবাড়ি হারালো তারা এখন কোথায় যাচ্ছে সবাই? প্রায় প্রত্যেকেই একই রকমের উত্তরে জানালেন, তারা এখন অন্যের জমিতে গিয়ে আশ্রয় নেবে। আর ঋণ হাওলাত করে যে যার মতো আবার জীবন শুরু করবে।
এরপর তাসরিফ প্রশ্ন রেখে বলেন, আচ্ছা আপনার বিবেকের কাছে একবার জিজ্ঞেস করে দেখুন তো, আমার-আপনার এক শতক জমি কেউ নিয়ে গেলে আমরা কী মেনে নিতে পারতাম? এক শতক কেন, আমাদের এক হাত জমি কেউ দখল করতে চাইলে আমরা মারামারি এমনকি থানা পুলিশ ডেকে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলি। আর এই মানুষগুলো বছরের পর বছর ধরে নিজের ঘর, বাপ-দাদার ভিটা আর ফসলের জমি হারাতে হারাতে এই সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
আক্ষেপ প্রকাশ করে এই গায়ক বলেন, সত্যি বলতে অভ্যস্ত হয়ে যায় নাই, আমরা তাদের অভ্যস্ত হতে বাধ্য করেছি। কারণ, তারা চরের মানুষ, তারা গরিব মানুষ। তারা স্থানীয় প্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনকে ভেদ করে আমার আপনার মতো ফেসবুকে যুদ্ধ করাটা শেখে নাই। মন খারাপের চেহারায় স্যাড মিউজিক লাগিয়ে ইমোশন তৈরি করার মতো লোক তাদের নাই। তাদের দুঃখ বোঝা কিংবা কান্না দেখার জন্য আমার আপনার কখনও সময়ই হয় নাই।
তাসরিফ বলেন, তাদের মুখে শুনেছি, বহুবার সরকারের পরিবর্তন দেখেছেন কেবল ভাগ্যের পরিবর্তন দেখতে পাননি। বছরের পর বছর ধরে বন্যা আর ভাঙা-গড়ার এই নির্মম খেলার পুতুল হয়ে থাকা চরাঞ্চলের মানুষগুলো এতকিছু হারানোর পড়েও শুধু চান, ‘এই তিস্তা নদীর খনন এবং নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ’।
আমাদের নতুন সরকারের কাছে উত্তরবঙ্গের এই চরাঞ্চলের মানুষগুলোর জন্য এতটুকু কী চাইতে পারি আমরা?
আরটিভি /এএ/এসএ
মন্তব্য করুন