‘এদের ছেড়ে আমি একা কবরে কেমনে যাব’
‘ছবিয়াল’ শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক আবেগ। দর্শকপ্রিয় এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির মালিক নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারেই তিনি নির্মাণ করে আসছেন বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমা। ১৯৯৮ সাল, ছবিয়াল থেকে ফারুকীর প্রথম নির্মাণ ‘ওয়েটিং রুম’, সেই সময় কোনো টিভি চ্যানেল কিনতে চায়নি ফিকশনটি। ২৫ বছরে এসে চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নামের আগে যুক্ত হয়েছে বিশেষণ। তিনি এখন অন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে সেই স্বীকৃতি দিয়েছে।
সম্প্রতি ছবিয়ালের ২৫ বছর পূর্তিতে সহকর্মীদের নিয়ে একত্রিত হয়েছিলেন ফারুকী। যেখানে হাজির ছিলেন দীর্ঘ ২৫ বছরের এই পথচলায় তার সঙ্গে কাজ করা অসংখ্য নির্মাতা, প্রযোজক ও শুটিং ইউনিটের সদস্যরা। পুরো আয়োজনের পেছনে ছিলেন অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।
সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন ফারুকী। এক স্ট্যাটাসে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। একইসঙ্গে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়েই শেষে প্রশ্ন রাখলেন, সবাইকে ছেড়ে তিনি কবরে একা থাকবেন কীভাবে।
ফারুকী তার স্ট্যাটাসে লেখেন, মানুষের আয়ু কয়েক দশক মাত্র। এই ছোট জীবন লইয়া দুনিয়াতে আইসা দুনিয়াটাকে বুঝতে বুঝতে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাইয়া যায়। আরেকদল নতুন যাত্রী দুনিয়া বোঝার অভিযানে বাহির হয়। সংক্ষেপে এই হইলো মানুষের ইতিহাস। আমার ইতিহাসের অর্ধেকটা কাটছে আমার এই পরিবারটার সাথে। যার নাম ছবিয়াল। কালকে আমাদের ২৫ বছর পূর্তির মিলনমেলা ছিল। সেখানে আমার ভাইব্রাদার-নাতি-পুতি সবাই আসছিলো। আর আমার কানে বাজতেছিল, পুরনো সেই দিনের কথা, লিটারেলি বাজতেছিল।
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই নির্মাতা লেখেন, আরও আসছিলেন আমার সুপার ট্যালেন্টেড খালাতো ভাই-বোনেরা। শিহাব শাহীন ভাই, তানিম নুর, অনিম, শাওকী, নুহাশ, আরিফ, শঙ্খ, রাকা, রায়হান রাফি, অনম, রেজা, কারিনাসহ যারা আমাদের শুভেচ্ছা জানাইতে আসছেন তাদের কৃতজ্ঞতা। অমিতাভ রেজাসহ অন্যরা যারা কাজের জন্য আসতে পারেনি তাদের জন্যও কৃতজ্ঞতা। দর্শকদের প্রতি অনেক বড় কৃতজ্ঞতা, যারা আমাদের অক্সিজেন হয়ে ছিলেন, আছেন। আমরা সবাই মিলেই একটা বড় পরিবার আসলে।
এরপর স্ত্রী তিশাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফারুকী লেখেন, স্পেশাল থ্যাংকস টু মাই ভাই-ব্রাদারস ফর অরগানাইজিং দিস। অ্যান্ড আ বিগ থ্যাংকস টু তিশা ফর এভরিথিং। এই বৃহৎ পরিবার আগলে রাখার আসল কারিগর। সে জানে আমি একা চলতে পারি না। ফলে ও সারাক্ষণ উপলক্ষ খোঁজে আমাদের গ্যাদারিংয়ের। আগে এইসব আয়োজনে আমি জড়িত থাকতাম। এখন তিশা আর ভাই-ব্রাদাররা আমাকে ঢুকতে দেয় না। আমি ভাই-ব্রাদারদের প্রাউড ফাদার হয়ে তাকাইয়া থাকি আর আমার চোখ ভিজে আসে। এদের ছেড়ে আমি কবরে যাবো কেমনে একা?
প্রসঙ্গত, চলচ্চিত্র, নাটক নির্মাণের পাশাপাশি ছবিয়াল আরও একটি বিরল দৃষ্টান্ত রেখে গেছে দেশের মিডিয়াঙ্গনে। সেটি হলো তরুণ নির্মাতা তৈরি করা। যারা একসময় সহকারী পরিচালক হিসেবে ছিলেন ছবিয়ালে, তারাই এখন নিজেদের নামে খ্যাতি অর্জন করেছেন। অনেকেই তাদের গুচ্ছ আকারে ‘ভাই বেরাদার’ নামে চেনেন। যাদের মধ্যে অন্যতম রেদওয়ান রনি, আশুতোষ সুজন, শরাফ আহমেদ জীবন, আশফাক নিপুণ, ইফতেখার আহমেদ ফাহমী, মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, আদনান আল রাজীব প্রমুখ।
আরটিভি /এএ-টি
মন্তব্য করুন