মৃত্যুর আগে সবশেষ যা বলে গিয়েছিলেন রাজীব
ঢালিউডের শক্তিমান অভিনেতা ওয়াসীমুল বারী রাজীব। সিনেমার পর্দায় নেতিবাচক চরিত্রেই বেশি দেখা গেছে তাকে। অভিনেতার বাঘের মতো সংলাপ আর ভয়েস যেন পর্দায় কাঁপন ধরাতো সিনেমাপ্রেমীদের মনে। অভিনয়ে যেমন ছিলেন দুর্দান্ত, তেমনি তার বাচনভঙ্গি, এক্সপ্রেশনও ছিল যেকোনো অভিনেতার জন্য ঈর্ষণীয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজীবের চলে যাওয়ার ২০ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৪ সালের ১৪ নভেম্বর ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫২ বছরেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। তবে অভিনেতা হিসেবে এখনও মানুষের হৃদয়ে রয়েছেন তিনি।
রাজীব যখন ক্যানসারের সঙ্গে লড়ছেন, তখন তাকে দেখতে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই। ততদিনে রাজীব হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন, আর বেশিদিন হাতে নেই। চলে যেতে হবে পরকালে। এরই মধ্যে একদিন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কয়েকজন তার সঙ্গে দেখা করেন।
সেদিন হুইল চেয়ারে বসে চোখ মুছতে মুছতে রাজীব বলছিলেন, সবাই কাজকর্মে অনেক ব্যস্ত থাকে। সবাই আমাকে দেখতে আসতে হবে এমন কোনো কথা নয়, দূর থেকে তোমরা আমার জন্য দোয়া কইরো।
ইলিয়াস কাঞ্চনের অনুরোধে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সবার উদ্দেশে কথা বলেন রাজীব। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রাজীব বলেন, আমি দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। কাজের সময়ে আপনাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকতে পারি। এটা থেকে যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে আমাকে মাফ করে দেবেন। আর আমার জন্য সবাই আল্লাহর কাছ দোয়া করবেন। যাতে আমি পরকালে সিফা লাভ করতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি। আমি আপনাদের সবার জন্য দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের যেন সুখে-শান্তিতে রাখেন।
প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রাজীব। চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে খল অভিনেতা হিসেবেই বেশি খ্যাতি তার। ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সিনেমায় আসার আগে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
১৯৮১ সালে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় রাজীবের। এরপর কাজী হায়াতের ‘খোকন সোনা’ সিনেমার মাধ্যমে তারকাখ্যাতি পান এই অভিনেতা।
রাজীব চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ফ্রেন্ডস মুভিজ। বিএফডিসির ব্যবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী চলচ্চিত্র পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সিনেমায় অভিনয় শুরুর আগে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন রাজীব।
অভিনয়ের পাশাপাশি নেতৃত্বেও অসামান্য গুণের অধিকারী ছিলেন রাজীব। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংসদ (জাসাস)-এর প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন অভিনেতা।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সিনেমাগুলো হলো— হীরামতি (১৯৮৮), দাঙ্গা (১৯৯১), বিদ্রোহ চারিদিকে (২০০০) ও সাহসী মানুষ চাই (২০০৩)।
রাজীবের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- উছিলা, মিয়া ভাই, সত্য মিথ্যা, বীরাঙ্গনা সখিনা, হুমকি, মা মাটি দেশ, প্রেম প্রতিজ্ঞা, দাঙ্গা, ত্রাস, দুর্নীতিবাজ, প্রেম দিওয়ানা, টাকার অহংকার, মৃত্যুদণ্ড, বন্ধন, চাঁদাবাজ, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, মীরজাফর, মিথ্যার রাজা, বেনাম বাদশা, আখেরি রাস্তা, বিদ্রোহী কন্যা, ক্ষমা, জবরদখল, প্রিয় তুমি, বিক্ষোভ, খলনায়ক, দেশদ্রোহী, লুটতরাজ, ভণ্ড, হাঙর নদী গ্রেনেড, ভাত দে, সত্যের মৃত্যু নেই, স্বপ্নের পৃথিবী, মগের মুল্লুক ও স্বপ্নের বাসর প্রভৃতি।
আরটিভি/এএ/এসএ
মন্তব্য করুন