অঞ্জনা রহমান
বিয়ের জন্য হিন্দু থেকে হয়েছিলেন মুসলিম
বেশ কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর অবশেষে জীবন যুদ্ধে হার মানলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরের দিন শনিবার এফডিসিতে প্রথম ও চ্যানেল আইয়ে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সুপরিচিত মুখ ছিলেন। নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করা একমাত্র দেশীয় চিত্রনায়িকাও তিনি।
ছোটবেলা থেকে নৃত্যের প্রতি আগ্রহের কারণে বাবা-মা তাকে নৃত্য শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের অধীনে নাচের তালিম নেন এবং কত্থক নৃত্য শিখেন অঞ্জনা রহমান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাত্র চার বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে অঞ্জনার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর আর থেকে থাকেননি। নৃত্যশিল্পী হিসেবে ছোট থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন। সাদাকালো থেকে রঙ্গিন বাংলা চলচ্চিত্রের সাক্ষী গুণী এই অভিনেত্রী।
ক্যারিয়ারের শুরুতে অঞ্জনার নাম ছিল অঞ্জনা সাহা। বিয়ের কারণে নিজের ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন এই চিত্রনায়িকা। অঞ্জনা বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। তবে তাদের বিচ্ছেদও হয়ে যায়।
দেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে নিজের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে অঞ্জনা জানিয়েছিলেন, আমার বিয়ের পর নামের সঙ্গে রহমান যুক্ত হয়েছে। সেটা এখনো আছে। আমি সাহা পরিবারের, হিন্দু ছিলাম আমি।
যে বিয়ের কারণে নাম পরিবর্তন সেই বিয়ে না টেকার পরও একই নামে থাকার কারণ হিসাবে নায়িকার ভাষ্য, বিয়ে না টিকুক। যেহেতু আমি ধর্ম পরিবর্তন করে ফেলেছি, আর পেছনে যাওয়া যাবে না।
সেই সাক্ষাৎকারে নিয়মিত নামাজ-রোজা করার কথাও জানিয়েছিলেন এই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত অভিনেত্রী।
অঞ্জনার অভিনয়জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। ছবিতে তার নায়ক ছিলেন সোহেল রানা।
ক্যারিয়ারে তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা রহমান। ‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’-এ অভিনয়ের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। পাশাপাশি তিনবার পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার।
ঢাকাই সিনেমার নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে ৩০টি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। এর মধ্যে ‘অশিক্ষিত’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘আশার আলো’, ‘জিঞ্জির’, ‘আনারকলি’, ‘বিধাতা’, ‘বৌরানী’, ‘সোনার হরিণ’, ‘মানা’, ‘রাম রহিম জন’, ‘সানাই’, ‘সোহাগ’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ও ‘অভিযান’ উল্লেখযোগ্য।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো মাটির মায়া (খান আতাউর রহমান), অশিক্ষিত (আজিজুর রহমান), চোখের মণি ও সুখের সংসার (নারায়ণ ঘোষ মিতা), জিঞ্জির, অংশীদার ও আনারকলি (দিলীপ বিশ্বাস), বিচারপতি (গাজী মাজহারুল আনোয়ার), আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ (শফি বিক্রমপুরী), অভিযান (নায়করাজ রাজ্জাক), মহান ও রাজার রাজা (আলমগীর কুমকুম), বিস্ফোরণ (এফ আই মানিক), ফুলেশ্বরী (আজিজুর রহমান), রাম রহিম জন (সত্য সাহা), নাগিনা (মতিউর রহমান বাদল), পরীণিতা (আলমগীর কবির) প্রভৃতি।
আরটিভি/এএ/এআর
মন্তব্য করুন