আমার মেয়ের খুনি কে, আমি কি বিচার পাব না: প্রশ্ন তিন্নির বাবার
মডেল ও অভিনেত্রী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি হত্যা মামলায় বহুল আলোচিত বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভিকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) মেয়ে হত্যার রায়ের বিষয়টি জানতেনই না তিন্নির বাবা মামলার বাদী সৈয়দ মাহবুব করিম। এমনকি রায়ে অভি খালাস পাওয়ার খবরটিও জেনেছেন এক সাংবাদিকের কাছে।
মাহবুব করিম বলেন, তিন্নি খুনের পর অভিকে বিদেশ পালাতে সাহায্য করে তৎকালীন সরকার। এরপর অভিকে দেখিয়ে দেখিয়ে মামলায় এতদিন পার করল। এখন রায় প্রচার হলো, অভি খালাস। আমার মেয়েকে যে খুন করা হয়েছে সেটা তো সত্য। তাহলে আমার মেয়ের খুনি কে? তা জানার অধিকার কি আমার নেই। আমি কি মেয়ে হত্যার বিচার পাব না।
তিন্নি খুনের ২২ বছর পর আজ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শাহীনুর আক্তার। আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীত প্রমাণ করতে না পারায় তাকে খালাস দেওয়া হলো এই মর্মে রায়ে উল্লেখ করেন তিনি। রায় ঘোষণার আগে চার্জশিটের ৪১ সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
রায়ের বিষয়টি জানতেন না উল্লেখ করে দেশের একটি গণমাধ্যমকে তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিম বলেন, আজ রায় তা আমি জানতামই না। আমাকে কেউ জানায়নি। রায় হওয়ার পর এক সাংবাদিক আমাকে ফোন করে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিষয়টি জানতে পারি।
আক্ষেপের সুরে তিন্নির বাবা আরও বলেন, আমার বয়স ৭৮। শরীর ও মাথা আগের মতো কাজ করছে না। এই বয়সে এসে আর দৌড়াদৌড়িও করতে পারব না। আমার বড় ভাই সৈয়দ রেজাউল করিম তার অবস্থা আরও খারাপ। তিন্নির আরেক বোন তার মাকে নিয়ে আমেরিকার সানফ্রানসিস্কোতে থাকে। আবার নতুন করে দৌড়াদৌড়ি করার কেউ নাই। মৃত্যুর আগে আমার মেয়ের খুনিকে দেখে যেতে পারব না।
তিন্নি হত্যার রায় প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি সৈয়দ আবু জাফর রিজভী জানান, আদালতের এ রায়ে সন্তুষ্ট নন তিনি। রায়ের কপি হাতে পেয়ে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যা করা উচিত তিনি করবেন।
অন্যদিকে অভির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন জানান, তিনি অভির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। মামলায় অভি খালাস পেয়েছেন। এ রায়ে খুশী তিনি।
উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাত্রে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলারের পাশে লাশ পাওয়া যায় তিন্নির। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানার এএসআই সফি উদ্দিন থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করলেও পরে মামলা স্থানান্তর হয় সিআইডিতে।
এর ৬ বছর পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর একমাত্র গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। তবে এই মামলায় তিন্নির স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় মামলায় দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাদেরকে।
তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভি অভিযুক্ত হলেও তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। অভির অবর্তমানেই ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ‘তিন্নি হত্যা ও লাশ গুম সংক্রান্ত মামলা’য় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
আরটিভি/এইচএসকে
মন্তব্য করুন