চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুন: আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ তারকারা
কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে গেল বছর এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। ঘটনার ৫ মাস পর সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয় রায় নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন। এ রায়ের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কলকাতার তারকারা।
নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছিলেন ভারতীয় বাংলা সিনেমার অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। শুধু তাই নয় করতে হয়েছিল হাজতবাসও। রায়ের পর রুদ্রনীল ঘোষ বলেন, অভিনেতা বা নেতা হিসেবে নয়, পশ্চিমবঙ্গের একজন নাগরিক হিসেবে, যারা আন্দোলনে ছিলেন, প্রত্যক্ষ করেছি, তারা এই রায়ে খুশি তো নন বরং অসন্তুষ্ট। প্রথম কথা হচ্ছে যে ‘রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার কেস’ বলে সিবিআইকে বোঝাতে হবে কেন? এটা প্রমাণের দরকার কি? সম্মানীয় বিচারক, যিনি এই রায় দিয়েছেন তার রায়কে শিরোধার্য।
মৃত্যুদণ্ড না দেওয়ায় প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে এই অভিনেতা বলেন, সম্মাননীয় বিচারক কি জানতেন না ‘রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ার কেস’। যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল, তার তথ্যদি নিরিখে আজকে সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা হলো, কেন মৃত্যুদণ্ড নয়? আমার অনেক বন্ধুই ফোন করে বলছে, যদি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হতো, তাহলে আমি একা মারা যাব কেন, এটা ভেবে সঞ্জয় কি আর সবার নাম বলে দিত? এই প্রশ্নগুলোই জনমানসে উঠছে।
অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ মত নৃশংস এ ঘটনার বিচার চেয়ে রাজপথে নেমেছিলেন অভিনেতা পরমব্রত চ্যাটার্জিও। রায় ঘোষণার পর তিনি বলেন, আমি সবসময় চেয়েছি যাতে বিচার হয়। সুষ্ঠ বিচারের পক্ষে ছিলাম-আছি-থাকব। একটি শহরের কেন্দ্রস্থলে, একটি হাসপাতালে, কীভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারে! যারা দায়ী, সে যেকোনো স্তরের প্রশাসন হতে পারে, সর্বস্তরের প্রশাসন হোক কিংবা হাসপাতালস্তরে, প্রত্যেককে জবাব দিতে হবে। এটিই চেয়েছিলাম। এরপরও আদালতের বিচারে মনে হয়েছে, সঞ্জয় রায় একমাত্র দোষী। তাই তারা তাকে শাস্তি দিয়েছেন।
বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে আস্থা না হারানোর আহ্বান জানিয়ে পরমব্রত বলেন, সাধারণ মানুষের তো বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা না রেখে কোনো উপায় নেই। কারো মনে হতেই পারে এটা করে অনেককে হয়তো আড়াল করা হলো। কিন্তু বিচার ব্যবস্থার ওপর থেকে ভরসা উঠে গেলে তো হবে না। তাদের মনে হয়েছে সঞ্জয় একমাত্র না হলেও মূল দোষী, তাই শাস্তি দিয়েছে। যাবজ্জীবন কারাবাস নিঃসন্দেহে বড় একটা শাস্তি।
কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় রাজপথে নেমেছিলেন টালিউডের অনেক তারকাই। তাদের মধ্যে অন্যতম অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তারকাদের মধ্যে বিচার চেয়ে সর্বপ্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন তিনি। রায় ঘোষণার পর হতাশা ব্যক্ত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ অভিনেত্রী লিখেন, তিলোত্তমা, কলকাতার তিলোত্তমার বিচার নাই।
প্রসঙ্গত, গেল বছরের ৯ আগস্ট এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটনা ঘটে। এর পরপরই ভারতজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জুনিয়র ডাক্তাররা দেশের অনেক অংশে রোগীদের দেখতে অস্বীকার করে দেন বিচারের দাবি। তারা ভুক্তভোগীর বিচার এবং হাসপাতালে নারীদের নিরাপত্তা দাবি করেন।
মন্তব্য করুন