‘কখনও চাইনি ভদ্র নায়ক হিসেবে কাজ করব’ (ভিডিও)
সুদর্শন অভিনেতা সাঈদ বাবু। ছোট পর্দার নিয়মিত এই অভিনেতা বড় পর্দায়ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। বিশেষ করে ‘পোড়ামন টু’ ছবিতে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। এই ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে কাজ করেছিলেন। অভিনয় দক্ষতা দিয়ে মাঝেমধ্যে আলোচনায় আসেন। সম্প্রতি ‘ন ডরাই’ নামের একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। ছবিটি শীঘ্রই মুক্তি পাবে। ছবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
আরটিভি অনলাইন: কেমন আছেন?
সাঈদ বাবু: ভালো আছি।
আরটিভি অনলাইন: আপনার ‘ন ডরাই’ ছবিটি মুক্তির আগেই বেশ আলোচনায়, কীভাবে দেখছেন?
সাঈদ বাবু: আসলে আমার ভালো লাগার দিক হচ্ছে এখন পর্যন্ত যে কয়টা মুভি করেছি প্রত্যেকটা রিলিজের পর আলোচনায় এবং কিছু রিলিজের আগে থেকে আলোচনায়। ‘ন ডরাই’ মুভিটা করেছি এটা এখনও রিলিজ হয়নি, কিন্তু মোটামুটি সবার কাছে অনেক ভালোবাসা পাচ্ছি। ছবির ফাস্ট লুক সবাই ভালোভাবে নিচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশ ছোট, বাজেট ছোট সেই হিসেবে সেই হিসেবে আমরা যদি ভালো মুভি করি অনেকেই তাকিয়ে থাকে যে সীমাবদ্ধতা স্বত্বেও এখানে ভালো চলচ্চিত্র হচ্ছে।
আরটিভি অনলাইন: ছবিটির ভাষা নিয়ে অনেকের মাঝে বিভ্রান্তি আছে, বিষয়টি নিয়ে কিছু বলুন।
সাঈদ বাবু: ‘ন ডরাই’ নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, চলচ্চিত্রটি চট্টগ্রামের ভাষায় হচ্ছে, এটা অনেকেই বুঝবে না। এই কথাটা এক ধরণের বোকামি। যেহেতু এই ফিল্মটা চট্টগ্রামের ভাষায়, আর এটা কান চলচ্চিত্র উৎসবে জমা পড়েছে, সুতরাং তারাও তো বলতে পারে আমরা এই ভাষা বুঝছি না। সুতরাং এই প্রশ্ন তোলা একেবারে বোকামি এই কারণে ওখানে সাবটাইটেল থাকবে। আর বাংলাদেশের ভাষার মধ্যে এতটা ভয়াবহ পরিবর্তন নেই যেটা গল্প দেখার পর দর্শক বুঝবেন না।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার কাছে ভালো বার্তা এসেছে। তারা বলছেন ভাই, চট্টগ্রামের ভাষা হলেও আপনাদের যে সম্পৃক্ততা দেখলাম আশা করছি ভালো কিছু হবে। আপনাদের প্রচেষ্টা অসাধারণ।
আরটিভি অনলাইন: ছবিতে কাজ করতে গিয়ে কী ধরণের সহযোগিতা পেয়েছেন?
সাঈদ বাবু: বিশেষ করে আমাদের পরিচালক তানিম রহমান অংশু, প্রযোজকসহ আমার সহশিল্পীরা একেবারেই মন উজাড় করে কাজ করেছেন। আমার সহশিল্পী শরিফুল রাজ ও সুনেরাহ অভিনয়ে নতুন হলেও দুই থেকে তিন মাস তারা কক্সবাজার ছিল শুধুমাত্র সার্ফিং শেখার জন্য। মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছে।
আরটিভি অনলাইন: আপনার কাছে ছবিটি কেমন লেগেছে?
সাঈদ বাবু: আমি সবসময় মনে করি, ভালো কাজ করলে অবশ্যই সেটা দর্শকদের দোরগোড়ায় পৌঁছাবে। যখন তাদের কাছে ভালো কাজ পৌঁছাবে তারা অবশ্যই হলে এসে ছবি দেখবেন। ছবি দেখার পর তারা ভালো মন্দ বিচার করবেন। আমার শেষ ছবির সফলতার পর আমি এই ছবিটি নিয়ে আশাবাদী। শুধু আমার দিক থেকে আশাবাদী না, সাধারণ মানুষকে দেখেছি তারাও ছবিটিকে অনেক সাধুবাদ জানাচ্ছেন, এজন্য আশাটা দ্বিগুণ হয়েছে। ন ডরাই রিলিজ হলে অবশ্যই ভালো কিছু দেখবেন।
আরটিভি অনলাইন: আপনি তো চট্টগ্রামের ভাষা জানতেন না, সমস্যা হয়নি?
সাঈদ বাবু: আমি চট্টগ্রামের ভাষা কখনই জানতাম না। তবে ভাষা শিখেছি। আমাকে সহকর্মীরা সহযোগিতা করেছেন। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, আমার অনেকগুলো সহশিল্পী বিদেশি। এখানে আমার স্ত্রী চরিত্রের একজন বিদেশি ছিলেন। তার বাড়ি ইউরোপে। এছাড়া ডেনমার্ক ও অস্ট্রেলিয়ানও ছিলেন। বিদেশি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করা অনেকটা কষ্টের ছিল। কারণ এখানে ভাষাগত একটা জটিলতা ছিল। ছবিটি দেখলে বোঝা যাবে আমাদের কী পরিমাণ চেষ্টা আছে।
আরটিভি অনলাইন: আপনি আগে থেকে সার্ফিং জানতেন না, কীভাবে কাজটি করলেন?
সাঈদ বাবু: আমার জন্য সবচেয়ে বড় জটিলতা ছিল আমি সার্ফার না। কিন্তু এটা আমাকে শিখতে হয়েছিল। বিষয়টা কষ্টকর ছিল কারণ পানির বিরুদ্ধে আমাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। বাংলাদেশের সার্ফাররা কত কষ্ট করে যে সার্ফিং শেখে তারপর বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়ায়। ছবিটি দেখলে বোঝা যাবে।
আরটিভি অনলাইন: আপনার সহশিল্পী সুনেরাহ বিনতে কামালকে খুব বেশি প্রচারে দেখা যাচ্ছে না।
সাঈদ বাবু: সুনেরাহ বিনতে কামাল খুবই ভালো একজন অভিনেত্রী। সে মূলত মডেলিং করত। তবে সে সাহসিকতার সঙ্গে কাজটি নিয়েছে। বড় পর্দায় কাজ করার জন্য সে অনেক সাহসিকতা দেখিয়েছেন। আমি তার সঙ্গে যে কয়টি দৃশ্যে অংশ নিয়েছি, তার যথেষ্ট সম্পৃক্ততা ছিল। আলোচনা বা মার্কেটিংকে আমি বড় করে দেখছি না। আমি বলব এটা একটা দলীয় কাজ। হয়তো এমনও হতে পারে আমি একটু সবার সঙ্গে কথা বলছি এটা কিন্তু আমার দলের স্বার্থে। হয়তো সুনেরাহ এবং শরিফুল রাজ পরে আলোচনায় আসবেন। অথবা এমন হতে পারে ফিল্ম দেখার পর দর্শক তাদের নিয়ে আলোচনায় থাকবেন। এটা একেবারে দর্শকদের ওপর নির্ভর করে। হয়তো দর্শকরা ভাবছেন সাঈদ বাবু আগের ছবিটা ভালো হয়েছে, দেখি নতুন ছবিটা কেমন হয়। আসলে আলোচনাটা সবার জন্য ভালো।
আরটিভি অনলাইন: ‘পোড়ামন ২’ ছবিতে আপনাকে ব্যতিক্রমী একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল? নতুন এই সিনেমায়ও ভিন্নভাবে হাজির হচ্ছেন, অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
সাঈদ বাবু: দুটোর অভিজ্ঞতা দুই রকম। ছোট থেকে আমি থিয়েটারে কাজ করেছি। আমার কমেডি ও খল চরিত্রের প্রতি অন্যরকম আগ্রহ। আমি কখনও চাইনি ভদ্র নায়ক হিসেবে কাজ করব। এই দুই চরিত্র আমায় জন্য উপযুক্ত। ‘পোড়ামন ২’ হলো বানিজ্যিক মুভি। এর আগে আমি ‘চ্যাম্প’ নামের একটা চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। দুর্ভাগ্য যে ছবিটি রিলিজ হয়নি। এই ছবিটিও নিয়ে অনেক পরিশ্রম করেছি। বাংলাদেশের জাতীয় কোর্সের কাছ থেকে শিখে ছবিতে অভিনয় করেছি। আমার প্রত্যেকটা কাজের পেছনে একটা ইচ্ছে কাজ করে যে আমি সবকিছু শিখে অভিনয় করব। এছাড়া আমি ‘রাবেয়া’, ‘এই তো প্রেম’ ছবিতেও কাজ করেছি। তবে ‘পোড়ামন ২’তে আমার সফলতার কারণ হলো আমি মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছি।
আরটিভি অনলাইন: এই চলচ্চিত্রে আপনার চরিত্রটি কেমন?
সাঈদ বাবু: ‘ন ডরাই’ হলো একেবারে ব্যতিক্রম। কারণ এখানে বাংলাদেশের ফাদার অব সার্ফারের চরিত্র প্লে করেছি। এটাও অনেক বড় প্রাপ্তি। এজন্য আমার তার সম্পর্কে জানতে হয়েছে। তার হাঁটা, চালচলন জেনে তারপর অভিনয় করেছি। এটা অন্যরকম একটা অর্জন। তার সম্পর্কে আমার জানতে হয়েছে, পড়তে হয়েছে। যদিও এখানে আমার নামটা পরিবর্তন হয়েছে। আমি আমির চরিত্রে অভিনয় করেছি। সুনেরাহ বিনতে কামালের চরিত্রের নাম আয়েশা। একজন নারী সার্ফারের জীবন থেকে উৎসাহিত হয়ে এই ছবির গল্প। আয়েশা (সুনেরাহ) ও সোহেল (রাজ) নামক দুইজন চরিত্রকে ঘিরে সিনেমাটির গল্প গড়ে উঠেছে। সামাজিক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে একজন সার্ফার হওয়ার স্বপ্ন দেখে দরিদ্র ও রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে আসা এই দুই তরুণ-তরুণী। সমুদ্রঘেঁষা তাদের শহরে আমির একজন সেলফ-মেড সার্ফার। তার মত সার্ফার বাংলাদেশে বিরল। সার্ফার হওয়ার স্বপ্ন দেখা তরুণদের সার্ফিং শেখায় আমির।
আরটিভি অনলাইন: তাহলে কী ছবিটাতে বাংলাদেশের ফাদার অব সার্ফারের বায়োপিক হাইলাইট হয়েছে?
সাঈদ বাবু: না, বিষয়টি এমন নয়। আমি এটাকে বায়োপিক বলব না। কারণ আমার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে আমি তার সম্পর্কে জেনেছি। গল্প একটাই বাংলাদেশের সার্ফারদের নিয়ে। প্রথম থেকে বাংলাদেশের সার্ফারদের জীবন কীভাবে কাটছে তা নিয়ে। কেউ হয়তো ভাববেন সার্ফার জাফরের জীবনী নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। এছাড়াও উঠে আসবে জীবন সংগ্রামের বিভিন্ন দিক। সবকিছু মিলায়ে কাজটি করা হয়েছে।
আরটিভি অনলাইন: আপনার অভিনয় জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিয়ে বলুন।
সাঈদ বাবু: আমি ১৯৯৫ সাল থেকে অভিনয়ে পা রেখেছি। তখন থিয়েটার দিয়ে শুরু করেছিলাম। আচার-আচরণ, চালচলন সবকিছু মূলত থিয়েটার থেকে শিখেছি। এমনকি ঘর ঝাড়ু দেওয়া। অভিনয়ের ধরণ শিখেছি। মিশ্র দা আমার একজন গুরু ছিলেন তার হাত ধরে এগিয়েছি। থিয়েটার করতে করতে মাঝে আমি মালয়েশিয়ায় পড়তে যাই। আবার ফিরে আসি দেশে কাজ শুরু করি। আমার সবসময় পছন্দের মানুষ ছিলেন হুমায়ূন ফরীদি ভাই ও আফজাল হোসেন। ২০০৫ সালের নভেম্বরের ১৯ তারিখে আফজাল ভাইয়ের কাজে অংশ নিই। আফজাল ভাই আমাকে দেখলেন, প্রশ্ন করলেন সেসব মুহূর্ত এখনও মনে আছে। আফজাল ভাইয়ের হাত ধরে পাঁচটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি। এরপর মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। এরপর এক সেটে বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজা ভাই আমাকে দেখেন, কল করেন। বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করে আমার ভাগ্য বদলে যায়।
জিএ/এম
মন্তব্য করুন