যা গেছে গেছে, আর যেন সম্মানহানি না হয়: সৈয়দ আব্দুল হাদী
দেশীয় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির জীবন্ত কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর ৮০তম জন্মদিন আজ (১ জুলাই)। ‘আছেন আমার মোক্তার’, ‘এমনও তো প্রেম হয়’, ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে’, ‘চোখ বুঝিলে দুনিয়া আন্ধার’, ‘যেও না সাথী’, ‘চক্ষের নজর এমনি কইরা’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’ এমন অনেক কালজয়ী গানের শিল্পী তিনি। কোটি কোটি সঙ্গীতপ্রেমী তাকে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধার সঙ্গে তার নামটি উচ্চারিত হয়। জন্মদিনের ঠিক আগের দিন বরেণ্য এই শিল্পীর সঙ্গে কথা হয় আরটিভি নিউজের। সৈয়দ আব্দুল হাদী মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির নানা সংকট নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।
অন্যের গান গাওয়ার ক্ষেত্রে মূল শিল্পী, গীতিকার ও সুরকারের নাম না নেয়া বিতর্ক চলমান? এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
এটা অন্যায়। এটা স্রেফ অন্যায়। অবশ্যই অন্যায়। নাম তো অবশ্যই থাকবে। নাম না থাকা তো অপরাধ। গানটি কে অরিজিনালি গেয়েছেন সেটার মূল শিল্পী কে, এটা বলতে হবে এবং সম্মানের সঙ্গে বলতে হবে। না হলে তোরা গাচ্ছিস কেন আমাদের গান।
খানিকটা থেমে কিংবদন্তি এই শিল্পী বলেন…
আমি একটা অনুষ্ঠান করতাম তোমাদের চ্যানেলের পাশেই এনটিভিতে। মনে আছে? ‘কিছু কথা কিছু গান’। সেই অনুষ্ঠানে আমি প্রথমেই গানটি কার রচনা, সুর কার, মূল শিল্পী কে এটা বলতাম। এই বিষয়টি আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। একটা গানের পেছনে প্রথম কন্ট্রিবিউশন হলো গীতিকার, সুরকারের। তারপরে শিল্পী যারা মূর্তির কাঠামোতে রঙ, তুলি মাখিয়েছে দর্শকের কাছে তার শ্রোতার কাছে উপস্থাপিত করেন। তিনজনের কিন্তু তিন রকমের ভূমিকা। এই বিষয়টি আমিই প্রথম শুরু করেছিলাম। তখন থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গীতিকার, সুরকার এবং মূল শিল্পীর নামটা বলা হয়। ইট ইজ অ্যা মাস্ট গীতিকার, সুরকার এবং মূল শিল্পীর নাম বলতে হবে।
আরে বাবা তোমরা এই গানটা কেন গাইছো কারণ এই গানটা পপুলার। পপুলারিটির জন্যই তো গাইছো। পপুলার কি করে হলো আকাশ থেকে পড়েছে পপুলারিটি? হু মেড দিজ পপুলার?
দেশের কপিরাইট আইন নিয়ে অনেক অভিযোগ, আপনার মতামত কী?
এই নিয়ে আর নতুন করে কী বলবো। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমরা হয়েছি। এখনকার শিল্পীরা তো যার যার গান কপিরাইট করে নিচ্ছে। কিন্তু আমরা আমাদের গানের কিছুই রয়্যালটি পেলাম না।
বাণিজ্যিকভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মূল শিল্পীর গান কাভার সং প্রকাশ করা প্রসঙ্গে জানতে চাই?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পারমিশন নেয়া হয় না। তবে তোমরা পারমিশন নাও আর নাই নাও; এটাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে যিনি আগে গেয়েছেন তাদের নামটা বলতে হবে। কারণ গানটা যে পরিচিত করিয়েছেন, জনপ্রিয় করিয়েছেন তারাই।
এক সিনিয়র শিল্পী আক্ষেপ করে বলছিলেন তার গান স্টেজে গাইছিলেন অথচ একজন বলেই বসেন বুড়ো বয়সে অমুক শিল্পীর গান গাইছেন?
এটা খুব দুঃখজনক। আমারও এরকম গান রয়েছে। নাম বলবো না আমি। আমাদের শিল্পী একজন সবখানে বলে আমার গাওয়া এই গান… ইত্যাদি ইত্যাদি। একবার মেনশনও করে না অরিজিনালি কার গান।
মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির চলমান সংকট নিয়ে আপনার একটি লেখা পড়েছিলাম।
আমার লেখার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এই নিয়ে শিল্পীদের নিজেদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুঁড়ি এটা যাতে না হয়। সাংবাদিকদের কাছেও আমার অনুরোধ এইটা নিয়ে আর বাতাস দিও না। তাতে কিন্তু শিল্পীদের বদনামই হচ্ছে। সিনিয়র হোক বা জুনিয়র হোক তারা শিল্পী তো। বদনাম হলে জুনিয়র-সিনিয়র সবারই হবে। মানুষ কী বলবেন যে এরা বড় ছোট মানে না। একজন জুনিয়র শিল্পীকেও যদি কেউ বলে যে কী অভদ্র ছেলেগুলো সেটাও কিন্তু একজন শিল্পীকেই বলা হয়। আমার লেখার একটাই উদ্দেশ্য ছিল যা হবার হয়েছে। যাতে এ নিয়ে তর্ক করে পানি ঘোলা করা না হয়। যতটুকু সম্মান গেছে তা গেছে, আর যেন সম্মান হানি না হয়। এটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল।
এম/পি
মন্তব্য করুন