রাজধানীতে পরিবেশ দূষণে বাড়ছে মানসিক রোগী
প্রায় পৌঁনে দুইকোটি মানুষের ঢাকা শহর । এর বাইরে প্রতিদিন অন্তত তিন লাখেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করে এই শহরে। কিন্তু রাজধানীর বাতাস দিনকে দিন ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। দূষণের মাত্রা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। আর শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর একটিতে পরিণত হয় ঢাকা। এ সময়ে বায়ুদূষণের মাত্রা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে বেড়ে যায় ১৩ থেকে ১৬ গুণ। ফলে রাজধানীবাসীর বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানসিক বিষণ্ণতা। এজন্য নগরীর অতিরিক্ত জনসংখ্যা, গাড়ির ধীরগতি, কারখানা আর এর আশপাশে ছড়িয়ে থাকা ইট ভাটাকেই দায়ী করছেন পরিবেশ গবেষকরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা বলছে, দেশের মোট আয়তনের মধ্যে ঢাকার আয়তন মাত্র ১ শতাংশ, অথচ এখানে বসবাস করছে, মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মানুষ। ২০১৪ সালে প্রতি ঘন মিটার বাতাসে যেখানে বিষাক্ত সালফার ডাই অক্সাইড ছিল, ৩৩৯ মাইক্রোগ্রাম, তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২৮ মাইক্রোগ্রামে। গেল এক দশকেই ঢাকার বাতাসের বিষাক্ত কার্বন বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাংশ।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: মাদক চোরাচালানে অভিনব পদ্ধতি, অসহায় প্রশাসন
--------------------------------------------------------
ইউএনডিপির তথ্য বলছে, ঢাকার আশপাশে যত ইটের ভাটা রয়েছে তা থেকে প্রতিবছর ২,৫০০ টন পার্টিকুলেটেড মেটার, ১৫৫০ টন সালফার ডাই অক্সাইড, ২৫ হাজার টন কার্বন মনোক্সাইড, ৬০০ টন ব্ল্যাক কার্বনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান মিশছে, ঢাকার বাতাসে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবার গবেষণা বলছে, রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ এর আশপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটের ভাটাগুলো। শতাংশের হিসেবে যার পরিমাণ ৫৮ ভাগ। এছাড়াও গাড়ির ধোঁয়া ১৪ শতাংশ, পথের ধুলা ১৮ শতাংশ আর বাকি ১০ শতাংশের জন্য দায়ী কলকারখানা। শতাংশের হিসেবে ঢাকায় বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ইটের ভাটাগুলো যার পরিমাণ ৫৮ ভাগ। এছাড়াও গাড়ির ধোঁয়া ১৪ শতাংশ, পথের ধুলা ১৮ শতাংশ আর বাকি ১০ শতাংশের জন্য দায়ী কলকারখানা।
ঢাকার বাতাস দুষণমুক্ত রাখতে কলকারখানা এবং ইটের ভাটাগুলোর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও সরিয়ে নেয়ার পরামর্শ ছিল পরিবেশবাদীদের। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, যেসব উৎস হতে বায়ু দূষণ হয় সে উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। গাড়ির পরিমাণ কমাতে হবে। ইটের ভাটাগুলো রাজধানী থেকে আরো দূরে সরাতে হবে। এছাড়া উন্নত মানের কয়লা ব্যবহার করতে হবে। রেগুলিটি অথরিটি হিসাবে সিটি করপোরেশন, রাজউক, পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ পরিবেশ আইন মানছে না।
ঢাকার বাতাস ঠিক রাখতে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তো বটেই, সচেতন হতে হবে খোদ ঢাকাবাসীকেও। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডক্টর আতিক রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ঢাকার বাতাস ঠিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সরদার আতিক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বায়ু দূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। মানুষ অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, হাইপারটেনশন, এমনকি ডায়াবেটিসসহ, লিভার-কিডনির নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি মানসিক হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভুগছে রাজধানীবাসী। ফলে দিনকে দিন মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
আরও পড়ুন:
এমসি / এমকে
মন্তব্য করুন