• ঢাকা বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

লক্কড়-ঝক্কড় গণপরিবহন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন যাত্রীরা

জুবায়ের সানি

  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:১২

নানা আশ্বাস ও অভিযানের পরেও ঢাকার রাস্তায় চলছে ফিটনেসবিহীন বাসসহ বিভিন্ন গণপরিবহণ। লক্কড়-ঝক্কড় এসব বাস একদিকে যেমন নষ্ট করছে রাজধানীর সৌন্দর্য, ঠিক তেমনি বাড়াচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। আর পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে এসব গণপরিবহন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। আর যারা বাধ্য হয়ে এসব বাসে চলাচল করছেন তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।

প্রায় তিন কোটি মানুষের ঢাকা শহরে প্রতিদিন যানবাহনে যাতায়াত করে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। আর এ যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম বাস। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় নিবন্ধিত মোট বাসের সংখ্যা ২৭ হাজার ৩০২টি আর মিনিবাসের সংখ্যা ১০ হাজারের অধিক।

বাসগুলোর মধ্যে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাসের সংখ্যাই বেশি। কোনোটির রং চটা, কোনোটির ছাল ওঠা। কোনোটির জানালার গ্লাস ভাঙা, আবার কোনটার দরজাই নেই। ভেতরের অবস্থা আরও করুণ। নেই ব্যাক লাইট বা ইন্ডিকেটর। আবার কিছু বাসের চাকার দুরবস্থাই বলে দেয় কতটা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে রাজধানীবাসী।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: মাত্র কদিনেই ফুটপাত নষ্ট হচ্ছে দামি টাইলসে!
--------------------------------------------------------

বেসরকারি একটি সংস্থার গবেষণা বলছে, রাজধানীতে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় মারা যায় প্রায় এক হাজার মানুষ। আহতের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি। এজন্য অন্যতম দায়ী পরিবহন খাতের এমন দুরবস্থা।

তাহলে এসব বাস কিভাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট পাচ্ছে? অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব ভাঙাচোরা বাসে রঙের আলতো প্রলেপ দিয়েই পেয়ে যাচ্ছে বিআরটিএ থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট।
তবে বিআরটিএ বলছে, এতে তাদের কোনো গাফিলতি নেই, নিয়ম মেনেই ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে।

বিআরটিএ’র পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই রব্বানী বলেন, সঠিক নিয়ম মেনেই যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে। বিআরটিএ তৎপর না হলে রাস্তায় চলাচলকারী সব গাড়িরই ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকতো। নির্দিষ্ট শর্তপূরণে সার্টিফিকেট দেয়া হয় বলেই অনেক গাড়ি সেটা পায় না। তারপরও সার্টিফিকেট ছাড়াই রাস্তায় নামে তারা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বাস রাজধানীর রাস্তা থেকে না সরালে গণপরিবহন খাতের উন্নতি কোনদিনই সম্ভব নয়।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, যাত্রীসেবা বাড়াতে মেয়াদোত্তীর্ন বাসগুলো সরিয়ে র‌্যাপিড বাস ট্রানজিটের মতো প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আধুনিক বাস রাস্তায় নামানোর বিকল্প নেই।

অন্যদিকে রাজধানীর গণপরিবহন খাতে বাসের পরেই অবস্থান সিএনজি ও লেগুনার। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় এই দুই বাহনেরও আজ করুণ অবস্থা।
রাজধানীর রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব মেয়াদউর্ত্তীণ সিএনজি অটোরিকশা। লাইসেন্সহীন ড্রাইভার আর ফিটনেসবিহীন লেগুনার অবস্থা আরও ভয়াবহ।

জানা গেছে ২০০২ সালে ঢাকার রাস্তায় নামানো হয় পাঁচ হাজার পাঁচশ ৬১টি সিএনজি অটোরিকশা। যার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় নয় বছর। এরপর দুই দফায় আরো পাঁচ বছর বাড়ানো হয় সময়সীমা। যা শেষ হয় ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরে গ্যাস সিলিন্ডার ও ইঞ্জিন পরিবর্তন করে আবারো এসবের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানায় মালিকদের একটি পক্ষ। তাদের দাবিতে বাড়ানো হয়েছে তিন মাসের মেয়াদ। যা শেষ হবে আগামী মার্চে।
এর বাইরেও ঢাকার রাস্তায় আরো প্রায় ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে। এগুলোর অবস্থাও খুব নাজুক। খোদ চালকরাই বলছেন, এসব সিএনজি ঢাকার রাস্তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

অপরদিকে রাজধানীর রাস্তায় চলাচল করে প্রায় আড়াই হাজারের মতো লেগুনা। ফিটনেসবিহীন এসব লেগুনার বেশিরভাগ চালকেরই বয়স আঠারো বছরের নিচে। আর হেলপার হিসেবে থাকে ১২ বছরের নিচের শিশুরা। এসব লেগুনায় কারণে ঢাকার রাস্তায় প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।

অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ঢাকার গণপরিবহনকে আধুনিকায়ন করতে হলে এসব সিএনজি ও লেগুনার মতো ছোট যানবাহনগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ এসব যানবাহনগুলো সরিয়ে আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন:

এসএইচ/এসএস

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • এক্সক্লুসিভ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাস ভাড়া না কমালে হরতালের ঘোষণা
রাজধানীর সড়কে নেই গণপরিবহন, জনমনে আতঙ্ক
রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট, যাত্রীদের ভোগান্তি
স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি, কুয়াকাটা থেকে চলছে ঢাকাগামী গণপরিবহন