• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

‘ফাহিমের সাথে বোন নয়, মায়ের মতো করে বেড়ে উঠেছিলাম’

অনলাইন ডেস্ক
  ১৪ আগস্ট ২০২০, ১১:০০
Fahim with sister
বোনের সাথে ফাহিম

তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তরুণ উদ্যোক্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফাহিম সালেহর মৃত্যুর এক মাস পূর্তিতে তার বোন রুবী সালেহ হৃদয়স্পর্শী একটি প্রতিবেদন লিখেছেন জনপ্রিয় ব্লগ ‘মিডিয়াম’ এ। তা বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) সিএনএন, ডেইলি মেইল সহ আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়।

রুবী সালেহ লেখেন, ১৪ জুলাই সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে যখন আমার ফোন বেজে ওঠে, তখনো আমি ছিলাম বিছানায়।

আমার এক আত্মীয়ের ফোন, যিনি এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। ফোনে তিনি যখন বলেন যে একটি দুঃসংবাদ আছে, তখনো বোঝা সম্ভব ছিল না যে ঠিক কী খবর শুনতে হবে। ভেবেছিলাম, মা-বাবা বা পরিবারের কারও হয়তো কোভিড-১৯ হয়েছে। এই ভেবেই শঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু যখন শুনি দুঃসংবাদটি ভাই ফাহিম সালেহ–সম্পর্কিত, তখন স্তম্ভিত হয়ে যাই। ফাহিম আর আমাদের মধ্যে নেই—এই কথাটির কোনো অর্থই তৈরি করছিল না আমার মাঝে। কী করে আমার স্বাস্থ্যবান, তারুণ্যে ভারা সৃষ্টিশীল ও সুন্দর ৩৩ বছর বয়সী ভাই আমাদের মধ্যে নেই? আমার আত্মীয় জানালেন তাকে খুন করা হয়েছে।

এ খবর পাওয়ার পর আক্ষরিক অর্থেই চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরদিনই নিউইয়র্ক যাই। ততক্ষণে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম একজন তরুণ উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার খুন হওয়ার সংবাদে সয়লাব। সেই খবরগুলো কতটা পীড়া দিচ্ছিল, তা বোঝানো যাবে না। পাশের মানুষগুলো কথা বলছিল আমার ছোট ভাই সম্পর্কে। আমার ফাহিম, যাকে আমার মা-বাবা আমার আট বছর বয়সে থাকতে হাসপাতাল থেকে কম্বলে জড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন। ফাহিমের সঙ্গে আমি বেড়ে উঠেছি। একজন বোন নয়, একজন মায়ের মতো করে। তাকে আমি খাইয়েছি, তাকে গোসল করিয়েছি, তার ডায়াপার বদলে দিয়েছি। আর আজ তিরিশ বছর পর আমার কাছে খবর এল যে ফাহিমের খণ্ডিত দেহ গার্বেজ ব্যাগে পাওয়া গেছে, যেন তার জীবনের কোনো মূল্যই নেই।

রুবী জানান, ঘরের ফায়ারপ্লেসের সামনে তার বাবা ফাহিম সালেহর ছবি রেখে ছেলের স্মৃতি ধরে রেখেছেন। রুবী বলেন, ছবিগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়া-আসার সময় মনে পড়ে ফাহিম সালেহ প্রকৃতই কে ছিল। মনে পড়ে, সে আজ আমাদের মধ্যে আর নেই!

রুবি বলেন, তিনি ও তার পরিবার ফাহিম সালেহর হত্যার বিচার নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ করে যাবেন। তিনি বলেন, আমার ভাইকে বড় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে।

১৩ জুলাই বেলা ১টা ৪০ মিনিটে ফাহিম যখন ম্যানহাটানে তার অ্যাপার্টমেন্টের লিফটে ওঠেন, তখন তার পিছু নিয়ে দ্রুত লিফটে ঢুকে পড়েন এক ব্যক্তি। তদন্তকারীরা বলছেন, ওই ব্যক্তিই টাইরেস হ্যাসপিল। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগে ইলেকট্রিক করাত ছিল বলে তাদের ধারণা। লিফটের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, ফাহিম ওই ব্যক্তিকে কিছু জিজ্ঞেস করছেন। এরপর দুজনের মধ্যে কিছু আলাপ হতেও দেখা গেছে। পরে ফাহিমকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখাচ্ছিল।

ফাহিম লিফট থেকে ঘরে পা রাখতেই মাস্ক পরিহিত ওই ব্যক্তি ফাহিমকে আক্রমণ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, পেছন থেকে আঘাতের পর ফাহিম লিফট থেকে বের হতেই সামনের দিকে পড়ে যান। এরপর লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ায় সিসিটিভির ফুটেজ আর রেকর্ড হয়নি।

নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরপরই টাইরেস ছুরিকাঘাত করে ফাহিমকে হত্যা করেন। পরে তিনি কার সার্ভিস ডেকে হোম ডিপোয় যান। কার সার্ভিসের সেই পেমেন্ট তিনি পরিশোধ করেন ফাহিমের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। হোম ডিপো থেকে কিছু ক্লিনিং আইটেমও কেনেন টাইরেস।

অ্যাপার্টমেন্টের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, পরদিন ১৪ জুলাই দুপুরে আবার ফিরে আসেন টাইরেস। সঙ্গে ছিল রিচার্জেবল ভ্যাকুয়াম। পুলিশের মতে, এটি হত্যার চিহ্ন মুছে ফেলতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৪ জুলাই দুপুরে ইলেকট্রিক করাত ব্যবহার করে ফাহিমের দেহ খণ্ড খণ্ড করেন হ্যাসপিল। এ সময় ফাহিমের বোন অ্যাপার্টমেন্টের দরজা নক করেন। আর তখনই হত্যাকারী অন্য দরজা দিয়ে পালিয়ে যান।

পুলিশ ফাহিমের ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের সূত্র ধরেই ১৭ জুলাই প্রায় এক মাইল দূরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে হ্যাসপিলকে গ্রেপ্তার করে।

এমকে

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের জয় ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত, বলছে নিউইয়র্ক টাইমস
নির্বাচনী প্রচারণা ফেলে হঠাৎ নিউইয়র্কে কমলা, নেপথ্যে যে কারণ
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বাংলাদেশ সোসাইটির সেলিম-আলী পরিষদের নির্বাচনী সভা
হিজবুল্লাহপ্রধানকে হত্যার নির্দেশ নিউইয়র্ক থেকে: ইরানি প্রেসিডেন্ট