রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় যাদের
রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিষ প্রয়োগ নতুন কোনো বিষয় নয়। সেই আদিকাল থেকেই রাজা-বাদশাহরা তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিষের ব্যবহার শুরু করে। তবে আধুনিককালেও এই মাধ্যমটি যে শেষ তা বলা যাবে না। সম্প্রতি বিশ্বের পরাশক্তি রাশিয়ায় বিরোধী দলীয় নেতাকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ইতিহাসে এরকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদের ওপর বিষ প্রয়োগের ঘটনার বর্ণনা করা হলো-
গ্রিগরি রাসপুটিন
রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে রাসপুটিন একজন আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন গুনিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ ১৯১৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর প্রিন্স ফেলিক্স ইয়ুসুপভের আমন্ত্রণে তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের ইয়ুসুপভ প্রাসাদে যান। প্রিন্স তাকে পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ মাখানো কেক খেতে দেন ও সায়ানাইড মাখানো পাত্রে সুরা পরিবেশন করেন৷ কিন্তু সেই বিষাক্ত কেক ও সুরা খেয়ে রাসপুটিনের মৃত্যু হয়নি। তবে প্রিন্স থেমে থাকেননি, তিনি রাসপুটিনকে গুলি করে হত্যা করেন।
গেয়র্গি মার্কভ
১৯৭৮ সালে বুলগেরীয়ায় সরকারবিরোধী মার্কভ বিবিসি-তে কাজ শেষ করে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ কিছু একটা তার থাই ফুঁড়ে দেয়৷ ছুঁচ ফোটার জায়গাটা ফুলে উঠে আর চারদিনের মধ্যে মার্কভ মারা যান। পরে ময়না তদন্তে জানা যায়, একটি শূন্য দশমিক দুই মিলিগ্রাম রিসিন বিষের পেলেট থেকে মার্কভের মৃত্যু ঘটেছে৷
খালেদ মেশাল
১৯৯৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের গোয়েন্দা বিভাগ মোসাদ হামাস নেতা খালেদ মেশালকে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ সংবাদ মাধ্যমে খবর হয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বয়ং নাকি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ মেশাল জর্ডানের আম্মানে হামাসের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় দু’জন ইসরায়েলি গুপ্তচর তার কানে কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করে৷ মেশাল অক্ষতই থাকেন এবং পরে ঐ দুজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ধরাও সম্ভব হয়৷
ভিক্টর কালাশনিকভ
রাশিয়ার কেজিবি গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্নেল ভিক্টর কালাশনিকভ ও তার স্ত্রীকে ২০১০ সালের নভেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ তাদের রক্তে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭ ও ৫৬ মাইক্রোগ্রাম পারদ পাওয়া যায়৷ স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে এক থেকে তিন মাইক্রোগ্রাম পারদ থাকা নিরাপদ৷ পরে এক সাক্ষাৎকারে কালাশনিকভ জানান, মস্কো আমাদের বিষ দিয়েছে।
ভিক্টর ইউশ্চেঙ্কো
২০০৪ সালের নভেম্বরে ইউক্রেনের বিরোধী নেতা ইউশ্চেঙ্কো অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটি ভাইরাল ইনফেকশন ও সেই সঙ্গে রাসায়নিকের বিষক্রিয়ার ফলে তার অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটিস হয়েছে৷ এর ফলে ইউশ্চেঙ্কোর জন্ডিস হয়, মুখ ফুলে যায় এবং ত্বকে এক ধরণের দাগ থেকে যায়, যা ডাইঅক্সিন বিষের প্রভাবে ঘটে থাকতে পারে বলে চিকিৎসকদের ধারণা৷ সরকারি চররা বিষ দিয়েছে বলে করেন ইউশ্চেঙ্কো।
আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো
সাবেক রুশ গুপ্তচর লিটভিনেঙ্কো দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেবার পর ২০০৬ সালের ২৩শে নভেম্বর দু’জন সাবেক কেজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন ও পরে হাসপাতালে মারা যান। পরে তদন্তে দেখা যায় তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম-২১০ বিষের ক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে৷
কিম জং নাম
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈমাত্রেয় ভাই কিম জং নাম ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে মারা যান। দুই নারী তার মুখে ভিএক্স নামের একটি রাসায়নিক মাখিয়ে দিয়েছিলেন৷ আক্রান্ত হওয়ার সময় কিম জং নাম-এর পিঠের ব্যাগে ভিএক্স বিষের ডজন খানেক অ্যাম্পুল ছিল৷
আলেক্সি নাভালনি
বিষের এই রাজনীতির খেলার সবশেষ শিকার হয়েছেন রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি নাভালনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সাইবেরিয়া থেকে জার্মানিতে নেওয়া হয়েছে৷ নাভালনির শরীরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১৯ আগস্ট ৪৪ বছর বয়সি সাবেক এই আইনজীবী চা খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন৷
এমকে
মন্তব্য করুন