• ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

মহানবী (সা.) এর বিতর্কিত কার্টুন আবার ছেপেছে শার্লি এব্দো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩৮
Charlie Hebdo re-publish cartoons of the Prophet Mohammad
শার্লি এব্দোর অফিসে হামলার বিচার শুরু হচ্ছে আজ

পাঁচ বছর আগে ফরাসি রম্য সাময়িকী শার্লি এব্দোর অফিসে ইসলামপন্থীদের যে হামলা হয়, তার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১৪ জন কথিত ষড়যন্ত্রকারীর বিচার বুধবার শুরু হচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলার।

বিচার শুরুর একদিন আগে শার্লি এব্দো মহানবী (সা.) নিয়ে বহুল বিতর্কিত কিছু কার্টুন আবার প্রকাশ করেছে, যে কার্টুন প্রকাশের জেরে ২০১৫ সালে তাদের অফিসে হামলা চালানো হয়েছিল।

কথিত ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, শার্লি এব্দোতে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দুই ভাইয়ের চালানো বন্দুক হামলায় সহযোগিতা করেছিল এই ১৪ জন।

সুপরিচিত কার্টুনিস্টসহ ১২ জন ওই হামলায় নিহত হয়। এর কয়েকদিন পর প্যারিসে এই ঘটনা সংক্রান্ত আরেকটি হামলায় পাঁচজন মারা যায়।

এই হামলার পর ফ্রান্স জুড়ে জিহাদিদের উপর্যুপরি হামলার ঘটনা শুরু হয়।

শার্লি এব্দোর সর্বসাম্প্রতিক সংস্করণের মলাটে মহানবী (সা.) এর সেই মূল ১২টি কার্টুন চিত্র আবার ছাপা হয়েছে। এই কার্টুনগুলো শার্লি এব্দোয় প্রকাশের আগে সেগুলো ডেনমার্কের একটি সংবাদপত্রেও ছাপা হয়েছে।

ম্যাগাজিনের সম্পাদকীয়কে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মহানবী (সা.) এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপানো অব্যাহত রাখার জন্য তাদের কাছে প্রায়ই অনুরোধ এসেছে।

সেখানে বলা হয়, আমরা সবসময়ই এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছি। আইনত এ ধরনের কার্টুন প্রকাশে কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু এ ধরনের কার্টুন প্রকাশের জন্য কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে, এমন কোনও কারণ যা বিতর্কের খাতিরে সামনে আনা যুক্তিসঙ্গত হবে। যেহেতু ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ওই সন্ত্রাসী হামলার বিচার এ সপ্তাহে শুরু হচ্ছে, তাই কার্টুনগুলো পুনঃপ্রকাশ করা আমরা দরকার বলে মনে করেছি।

মামলায় কি বলা হচ্ছে?

শার্লি এব্দোর প্যারিসের দপ্তরে এবং পরবর্তীতে ইহুদীদের একটি সুপারমার্কেট ও একজন পুলিশ অফিসারের ওপর হামলায় সহযোগিতার জন্য ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা বন্দুকধারীদের অস্ত্র এবং অন্যান্য সহযোগিতা করেছে।

অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজনকে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার করা হবে। কারণ তারা উত্তর সিরিয়া এবং ইরাকে পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।

ফ্রান্সের আরএফআই সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এবং আইনজীবী মিলিয়ে প্রায় ২০০ ব্যক্তি এই মামলায় সাক্ষ্য দেবে।

এ বছর মার্চ মাসে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবার কথা ছিল, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়। এই বিচার কাজ নভেম্বর পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।

কি হয়েছিল ২০১৫ সালে?

সাঈদ এবং শেরিফ কুয়াচি নামের দুই ৭ জানুয়ারি শার্লি এব্দোর দপ্তরে অতর্কিতভাবে ঢুকে পড়ে এবং গুলি চালাতে শুরু করে। সাময়িকীর সম্পাদক স্তেফানি শার্বনিয়ার যিনি শার্ব নামে বেশি পরিচিত ছিলেন, তিনি এবং আরও চারজন কার্টুন শিল্পী মারা যান।

বাকি নিহতদের মধ্যে ছিলেন দুজন কলাম লেখক, একজন কপি এডিটর, একজন অতিথি যিনি একটি বৈঠকে যোগ দিতে সেখানে গিয়েছিলেন এবং অফিসের কেয়ারটেকার। সম্পাদকের দেহরক্ষী এবং একজন পুলিশ অফিসারও ঘটনায় নিহত হন।

পুলিশ ওই দুই ভাইকে যখন খুঁজছিল, তখন প্যারিসের পূর্বাঞ্চলে আরেকটি অবরোধের ঘটনা শুরু হয়। ওই দুই ভাইকে পরে হত্যা করা হয়।

কুয়াচি ভ্রাতৃদ্বয়ের পরিচিত আমেদী কুলিবালি নামে এক ব্যক্তি ইহুদিদের একটি সুপারমার্কেটে কয়েকজন ব্যক্তিকে পণবন্দী করে এবং তার আগে একজন পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে। ওই ব্যক্তি ৯ জানুয়ারি চারজন ইহুদি ব্যক্তিকে হত্যা করে। এরপর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

একটি ভিডিও বার্তায় কুলিবালি বলেন, ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর নামে এই হামলা চালানো হয়েছে।

শার্লি এব্দো কেন লক্ষ্যবস্তু?

শার্লি এব্দো প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ব্যঙ্গ কার্টুন প্রকাশ করে থাকে। তারা চরম ডানপন্থীদের ব্যঙ্গ করে এবং ক্যাথলিক খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্ম এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশ করে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সময়ে বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছে।

তবে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের পর সাময়িকীর সম্পাদকমণ্ডলীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এর আগে ২০১১ সালে সাময়িকীর বিভিন্ন দপ্তরে একবার পেট্রল বোমা হামলাও চালানো হয়েছিল।

শার্ব তাদের সাময়িকীতে এ ধরনের কার্টুন প্রকাশের পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, এসব কার্টুন বাক স্বাধীনতার প্রতীক। তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, আমাদের ছবি দেখে মুসলিমরা যে মজা পাবেন না, হাসবেন না, সেটা আমি জানি। তবে আমি ফরাসি আইনের অধীনে জীবনযাপন করি, কুরআনের আইনের অধীনে নয়।

সাময়িকীর পরিচালনা সম্পাদক জেরার্ড বায়ার্ড বিবিসিকে ২০১৬ সালে বলেন, ম্যাগাজিনটি আন্তর্জাতিক প্রতীক হিসেবে আবার আত্মপ্রকাশ করার পর এর বিতর্ক সৃষ্টির ধারা এবং প্ররোচনামূলক প্রকাশ নতুন করে আবার সমালোচনার জন্ম দেয়। বহু মানুষ বলে সাময়িকীটির ভিন্ন মত, ভিন্ন বিশ্বাস এবং ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়