ভারতে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে ভারতে ডেল্ট ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। তবে নতুন ভ্যারিয়েন্টটি প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং বিশ্বের বহু দেশকে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে।
ব্রিটেনে নতুন করে অনেক মানুষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু ব্রিটেন নয় পুরো ইউরোপ জুড়ে এ ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ডে রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক জেমস নেইস্মিথ।
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকহারে টিকা কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়েও সেদেশে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
মে মাস থেকেই নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় নতুন করে ভারতীয় ধরণ ছড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে নেপাল। নেপালে দ্রুতহারে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বাংলাদেশ সহ ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয় সংক্রমণ।
সরকারি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে গত মে মাসের ২৫ তারিখ থেকে ৭ই জুন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় যতজন করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে, তাদের ৬৮ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল। সংক্রমণ সামাল দিতে দেশজুড়ে এখন কঠোর লকডাউন চলছে।
তবে সরকার অনেক দেশের আগেই টিকা কর্মসূচি শুরু করলেও, গতি এখনও খুবই মন্থর। ভ্যাকসিনের অভাবে এপ্রিলে টিকা দেওয়া স্থগিত করে দিতে হয়। ভারত থেকে পাওয়া এবং কেনা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৬ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার পর ভারত তাদের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।
এরপরই চীন সহ অন্যান্য দেশ থেকে টিকা পাওয়ার জোর চেষ্টা চালায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৭ লাখ টিকা দেশে এসেছে। যা দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে পুরোমাত্রায় টিকা দেওয়া শুরু হবে।
ইন্দোনেশিয়া
সংক্রমণ বাড়ায় ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে ২০শে জুলাই পর্যন্ত কঠোর লক-ডাউন জারি রয়েছে। সে দেশের সরকার জানিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই এই পরিস্থিতি। ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে গত তিন সপ্তাহে যতজন কোভিড পজিটিভ রোগী সনাক্ত হয়েছে তাদের ৬০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে।
অন্য দিকে রেডক্রস জানিয়েছে, হাসপাতালের বেড এবং অক্সিজেনের অভাব যেভাবে প্রকট হচ্ছে তাতে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইন্দোনেশিয়া।
ইন্দোনেশিয়ায় এখনও পাঁচ শতাংশ লোককেও পুরোপুরি ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো বলেছে, দিনে ১০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
থাইল্যান্ড
থাই সরকার বলছে সেদেশে সম্প্রতি যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তার অন্যতম প্রধান কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। রাজধানী ব্যাংকক ছাড়াও ফুকেতের মত কিছু দ্বীপেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত মাত্র চার শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গোলিয়া
চীন থেকে পাওয়া সিনোফার্ম টিকার বদৌলতে মঙ্গোলিয়া টিকা কর্মসূচিতে অসামান্য সাফল্য দেখিয়েছে। ৫০ শতাংশ মানুষ সেদেশে টিকা নিয়েছে। তারপরও সম্প্রতি যেভাবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার বাড়ছে তাতে সেখানে বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।
ফলে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে চীনা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তবে মঙ্গোলিয়ার একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন চীনা ভ্যাকসিন নয়, জুনে লক-ডাউন তুলে নেওয়ার পরই সংক্রমণ বেড়েছে।
ইন্দোনেশিয়াতেও ৮৫ শতাংশ ভ্যাকসিনই চীনের তৈরি। সেখানে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া বেশ কজন স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুর পর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রামক রোগ বিষয়ক ইন্সটিটিউটের প্রধান এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উপদেষ্টা ড. অ্যান্টনি ফাউচি শনিবার টিভি সাক্ষাতকারে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সারা দেশে না হলেও যে সব অঙ্গরাজ্য টিকা কর্মসূচিতে পিছিয়ে সেসব জায়গায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৪ শতাংশ মানুষে ইতোমধ্যে এক ডোজ করে করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিটি দেশের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া না গেলে এই ভ্যারিয়েন্ট সামাল দেওয়া যাবে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
জেএইচ