ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মৃত্যুঝুঁকিতে চট্টগ্রামের ৫৮ ভবনের হাজারো মানুষ

সরোয়ার আমিন বাবু ও শাহীনুজ্জামান, চট্টগ্রাম

রোববার, ১৪ মে ২০১৭ , ০২:৩৩ পিএম


loading/img

চট্টগ্রামে স্কুল, বাণিজ্যিক ভবন ও আবাসিক ভবনসহ প্রায় ৫৮টি ভবনে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অবস্থান করছে কয়েক হাজার মানুষ। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় থাকা সত্ত্বেও এগুলো ভাঙার ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ বিশেষজ্ঞসহ অনেকের।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(সিডিএ) ৮৭টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে চসিককে একটি তালিকা দেয়। এর মধ্যে ৬৪টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চসিকের অভিযানে এ পর্যন্ত ৬টি ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে বাকি ৫৮টি ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এখনো অবস্থান করছে কয়েক হাজার মানুষ।

সিডিএ’র কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আরটিভি অনলাইনকে জানান, জরিপ করে মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা চসিকের কাছে হস্তান্তর করেছি। এখন ভবনগুলোকে চূড়ান্তভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া চসিকের দায়িত্ব।

বিজ্ঞাপন

চসিকের সরবরাহ করা তালিকা অনুযায়ী, অবশিষ্ট ৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ৬টি, দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ৬টি, ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডে ৪টি, আলকরণ ওয়ার্ডে ৬টি, বক্সিরহাটে ৬টি, মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৩টি, উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ১টি, উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে ৪টি, পাঠানটুলি ওয়ার্ডে ২টি, শুলকবহর ওয়ার্ডে ৭টি, দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ১টি, এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে ৪টি, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১টি, চকবাজার ওয়ার্ডে ১টি, জামালখান ওয়ার্ডে ৩টি এবং মহানগরীর বাইরে ৩টি। 

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির সড়কের পাহাড়িকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। দু’তলা এ ভবনের নিচ তলায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, অফিস গোডাউন ও শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে ক্লাসও চলে।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক তমিজুদ্দীন আরটিভি অনলাইনকে জানান, সিটি করপোরেশন যদি মনে করে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, তবে ভেঙে ফেলতে পারে। তবে ভবনটি পুরোনো হলেও অনেক মজবুত বলে দাবি করেন তিনি। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে রাধামাধব মন্দির। 

বিজ্ঞাপন

বৌদ্ধ মন্দির সড়কে আরো একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হলো কক্সবাজার সমিতি ভবন। ভবনের নিচতলায় সমিতির অফিস এবং পেছনের অংশে বাস করছে একটি পারিবার।

বিজ্ঞাপন

পরিবারের সদস্য জোছনা বেগম জানান, ৫৭ বছর ধরে লিজ নিয়ে আমরা এখানে বাস করছি। এ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ না।

চসিক ও সিডিএ’র ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় এটি রয়েছে এ তথ্য জানালে তিনি বলেন, তারা এমনিতেই এগুলো বলছে।

ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ফুলকি নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিস। সেখানে অবশ্য তাদের দুজন কর্মচারী থাকে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, চসিক যেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বলছে, সেগুলো মূলত অনেক পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত ভবনগুলো ভেঙে ফেলা উচিত। নয়তো যেকোনো সময় বিপর্যয় ঘটতে পারে।  

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া আরটিভি অনলাইনকে বলেন, যদি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়ে থাকে তবে জাতীয় স্বার্থে দ্রুত এগুলো ভেঙে ফেলা উচিত। নয়তো ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে।

তিনি আরো বলেন, চসিক ও সিডিএ’র উচিত চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা। কারণ, এর সঙ্গে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় জড়িত।   

চসিকের প্রধান নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শামশুদ্দোহা আরটিভি অনলাইনকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব ভবন মালিকদের অসহযোগিতার কারণে অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কেউ কেউ মামলা করার কারণে অনেক ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। 
তবে বাকি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে খুব শীঘ্রই ফের অভিযান শুরু করা হবে।

কে/এসজে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |