লোকসভা নির্বাচনের আগে কৃষক বিক্ষোভের মুখে মোদি
চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। দেশ জুড়ে চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। এর মধ্যেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে কৃষক বিক্ষোভ। নির্বাচনের প্রাক্কালে আন্দোলনের যে তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে পিছিয়ে যেতে পারে ভোটের আয়োজনও।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ‘দিল্লি চলো’ রোডমার্চ শুরু করেছেন ভারতের কৃষকরা। ফসলের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) নিশ্চয়তা দেওয়ার আইন, কৃষকদের জন্য পেনশন, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর বাতিল ও শস্যবিমার দাবিতে হাজার হাজার কৃষক রাস্তায় নেমেছেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকার।
কৃষকদের এই রোডমার্চ ঠেকাতে ইতোমধ্যে রাজধানী দিল্লিকে নিরাপত্তা চাঁদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ। এছাড়া কৃষকরা যাতে ট্রাক্টর, ট্রাক ও ট্রলি নিয়ে সড়কে নামতে না পারে সেজন্য জায়গায় জায়গায় বসানো হয়েছে ব্যারিকেড। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেকোনো জমায়েত ও সমাবেশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দিল্লিজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে সিএপিএফ, ক্রাইম ব্রাঞ্চ ও ব্যাটালিয়নসহ দুই হাজারেরও বেশি সদস্য।
তবে, আন্দোলন ঠেকানোর জন্য মোদি সরকারের কোনও পায়তারাই তোয়াক্কা করছেন না কৃষকরা। দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েই তারা রাজধানী দিল্লির দিকে ধেয়ে যাচ্ছেন বলে খবর দেশটির গোয়েন্দা সূত্রের।
সূত্রের বরাতে ভারতের আনন্দবাজার বলছে, শুধু পঞ্জাব থেকেই ১৫০০টি ট্র্যাক্টর, ৫০০ গাড়ি নিয়ে দিল্লিতে যাচ্ছেন কৃষকেরা। ওইসব গাড়িতে প্রায় ৬ মাসের খাবার নিয়ে যাচ্ছেন তারা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে, তা হলে কি ২০২০ সালের পর আরও একটি দীর্ঘ সময়ের কৃষক আন্দোলন দেখতে চলেছে দিল্লি-সহ গোটা ভারত? ওই সময় দিল্লির সীমানায় যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন কৃষকেরা, সেই আন্দোলন ১৩ মাস ধরে চলেছিল।
এবারও কৃষকেরা সেই পথেই হাঁটতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই আগেভাগেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে দিল্লির সীমানা। পাঞ্জাবের গুরদাসপুরের কৃষক হরভজন সিংহ এনডিটিভিকে বলেন, 'সুচ থেকে হাতুড়ি, সবকিছু ট্রলিতে করে নিয়ে যাচ্ছি আমরা। ব্যারিকেড ভাঙার যন্ত্রও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা ৬ মাসের জন্য খাবার নিয়ে রওনা দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে প্রচুর জ্বালানিও আছে।'
আরও এক কৃষক জানিয়েছেন, এর আগের আন্দোলন ১৩ মাস ধরে চলেছিল। এরপর কৃষকদের দাবি মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি তারা রাখেনি। তার ভাষ্য, 'এবার যত দিন না পর্যন্ত আমাদের দাবিদাওয়া মেনে না নেওয়া হবে, ততদিন আন্দোলন থেকে পিছু হটবো না।'
কৃষকদের এই ‘দিল্লি চলো’ রোডমার্চ রুখে দেওয়ার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষক নেতাদের সঙ্গে দেখা করে বৈঠকও করেন। কিন্তু সূত্রের খবর, সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। সোমবার রাত ১১টার পর বৈঠকে বসে ২০২০ সালের ইলেক্ট্রিসিটি আইন বাতিল করার বিষয়ে কৃষক নেতাদের আশ্বস্ত করেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরির ঘটনায় কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়।
কিন্তু কৃষকদের মূল তিনটি দাবি— ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য, কৃষিঋণ মওকুফ এবং স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাবের রূপায়ণ নিয়ে দুপক্ষ কোনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। বৈঠকে যোগ দেওয়া কৃষকদের এক প্রতিনিধির অভিযোগ, দুই বছর আগে কৃষকদের অর্ধেক দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সে ব্যাপারে কিছুই করেনি কেন্দ্র। কৃষকরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও মোদি সরকার সময় নষ্ট করেছে বলে অভিযোগ তার।
মন্তব্য করুন