'দিল্লি চলো' রোডমার্চে পুলিশের গুলি, কৃষক নিহত
ফসলের ন্যায্যমূল্যসহ বিভিন্ন দাবিতে ভারতে আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা। যতই দিন গড়াচ্ছে বাড়ছে বিক্ষোভের ব্যাপকতা। সর্বশেষ পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত কৃষকদের বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে পাঞ্জাব-হরিয়ানার সীমান্ত শহর খানাউরিতে। গুলি, টিয়ার গ্যাস ছাড়াও ঘটে বিস্ফোরণের ঘটনা।
বুধবারের (২১ ফেব্রুয়ারি) এ সংঘর্ষের ঘটনায় শুভকরণ সিং (২১) নামে একজন তরুণ কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে ১২ জন্য পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
আন্দোলনরত কৃষকদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, উৎপাদিত ফসলের ন্যূনতম মূল্য (মিনিমাম সাপোর্টিং প্রাইস-এমএসপি) বাড়ানোসহ বিভিন্ন দাবিতে 'দিল্লি চলো' রোডমার্চ কর্মসূচিতে যোগ দিতে হরিয়ানা রাজ্য থেকে রাজধানী নয়াদিল্লির পথে রওনা হয় কৃষকদের একটি দল। তাদের থামাতে হরিয়ানা-দিল্লির সব সীমান্তপথে ব্যারিকেড বসিয়েছিল হরিয়ানা পুলিশ।
এরই মধ্যে খানাউরি সীমান্তপথে ব্যারিকেডের সারি দেখতে পেয়ে সেগুলো সরানোর চেষ্টা করছিলেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায় তাদের। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে পুলিশ। সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলেই মারা যান শুভকরণ সিং। এ সময় তিনি ছাড়া আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
হরিয়ানাভিত্তিক কৃষক সংগঠন অল ইন্ডিয়া কিষান সভার (এআইকেএস) নেতারা জানিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে নিকটস্থ পাটিয়ালা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার চিকিৎকরা শুভ করণকে মৃত ঘোষণা করেন।
পাটিয়ালা হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজনকে আনা হয়েছিল মৃত অবস্থায়, বাকি দুজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা এখন শঙ্কার বাইরে।’
প্রসঙ্গত ভারতের কৃষকরা যেন তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য তাদের ফসল একটি নির্ধারিত মূল্যে কিনে নেয় দেশটির সরকার। নির্ধারিত এই মূল্যকে বলা হয় মিনিমাম সাপোর্টিভ প্রাইস (এমএসপি)।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন কৃষি আইন প্রণয়ন করে ভারতের কেন্দ্র সরকার। সেই আইনে এই ব্যবস্থাটির পরিবর্তন ও এমএসপি প্রথাটি পর্যায়ক্রমে অকার্যকর করা হবে লিপিবদ্ধ হয়। এর প্রতিবাদে সেই বছর নভেম্বর থেকে নতুন কৃষি আইন বাতিল এবং বিভিন্ন ফসলের এমএসপি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন ভারতের কৃষকরা।
প্রায় এক বছর ধরে দিল্লিতে কৃষকদের অবস্থান, প্রতিবাদ কর্মসূচী এবং ৭ শতাধিক কৃষকের মৃত্যুবরণের পর ২০২১ সালের নভেম্বরে নতুন কৃষি আইন বাতিল করে মোদি সরকার। সেইসঙ্গে কৃষক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করা হয় দরকারের পক্ষ থেকে।
তবে কৃষকদের অভিযোগ, সেই প্রতিশ্রুতির দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ভুট্টা, তুলা, মাসকালাই, মটর ও মসুর ডালসহ কয়েকটি ফসলের এমএসপি বাড়ানো হয়নি। এসব ফসলের এমএসপি পুনঃনির্ধারণের দাবিতে গত মাসে দিল্লিতে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় ভারতীয় কৃষদের বৃহত্তম দুই জোট কিষাণ মজদুর মোর্চা ও সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।
দুই জোট কর্মসূচি ঘোষণার পর ন্যূনতম এমএসপি নির্ধারণে কৃষক নেতাদের সঙ্গে এ পর্যন্ত ৫ দফা বৈঠক করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডা। কিন্তু কোনও বৈঠকেই মতৈক্যে পৌঁছাতে পারেনি সরকার ও কৃষক পক্ষ।
সংঘর্ষে শুভকরণ সিংয়ের প্রাণহানির পর বিবৃতি দিয়েছে অল ইন্ডিয়া কিষান সভা। তাতে তারা বলেছে, ‘শুভকরণ সিংয়ের মৃত্যুর জন্য পুলিশ এককভাবে দায়ী। এই হত্যা প্রমাণ করে যে মুখে কৃষক-বান্ধব বলে দাবি করা মোদি সরকার আদতে কী পরিমাণ নিষ্ঠুর! হরিয়ানা রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার দিল্লিগামী কৃষকদের শত্রু সৈন্য হিসেবে বিবেচনা করছেন এবং তাদের দমনে নিষ্ঠুর সব কৌশল অবলম্বন করছেন।’
মন্তব্য করুন