সংসদে ধর্ষণের অভিযোগ
মান বাঁচাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন রাজনৈতিক কর্মী
সংসদ ভবনে নিজের সহকর্মীর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অস্ট্রেলিয়ার একটি টিভি চ্যানেলে অভিযোগ তুলেছিলেন ব্রিটানি হিগিন্স নামে এক রাজনৈতিক কর্মী। তিন বছর আগে ঘটনাটি যখন সামনে আসে, হতবাক হয়ে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব। এবার চাঞ্চল্যকর এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে সিডনির একটি দেওয়ানি আদালত।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) রয়টার্স, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ানসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম তথ্যটি নিশ্চিত করে প্রতিবেদন করেছে।
গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার নেটওয়ার্ক টেন টেলিভিশনে ২০২১ সালে ব্রিটানি হিগিন্স নামে পার্লামেন্ট হাউসের ওই রাজনৈতিক কর্মী ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন নিজের সহকর্মী ব্রুস লেহরম্যানের বিরুদ্ধে। তবে ওই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছিলেন ব্রুস। শুধু তা-ই নয়, ব্রিটানির ধর্ষিত হওয়ার অভিযোগটি প্রচারের কারণে সেদিনের উপস্থাপিকা লিসা উইলকিনসনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছিলেন তিনি। এবার ওই মানহানির মামলার লড়াইয়েই হেরে গেলেন ব্রুস লেহরম্যান। সহকর্মী ব্রিটানিকে ধর্ষণের যে অভিযোগ, তার সত্যতা পেয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) ধর্ষণের বিষয়টি সত্যিই ঘটেছিল বলে রায় দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল আদালতের বিচারক মাইকেল লি। রায়ে হিগিন্সকে ধর্ষণের পর ব্রুস লেহরম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
নেটওয়ার্ক টেন টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অশ্রুসিক্ত হিগিন্স বলেছিলেন—২০১৯ সালে কীভাবে এক মন্ত্রীর অফিসের সোফায় তার চেতনা ফিরেছিল এবং চেতনা ফেরার পর শরীরের ওপর তিনি ব্রুসকে দেখেছিলেন। তবে ব্রুস লেহরম্যান দাবি করেন, সেদিন রাতে তারা দুজন ক্যানবেরায় মদ্যপানের পর নিজ নিজ পথে যাওয়ার আগে একটি উবার শেয়ার করে প্রথমে অফিসে এসেছিলেন।
সোমবার ব্রুস লেহরম্যানের মানহানির মামলাটি বাতিল করে দিয়ে নিজের রায়ে বিচারপতি মাইকেল লি বলেন, ব্রুস লেহরম্যান ২৮ বছর বয়সী হিগিন্সের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের জন্য নারকীয় উপায় গ্রহণ করেছিলেন এবং এ বিষয়ে হিগিন্সের সম্মতি আছে কি না সেই বিষয়ে উদাসীন ছিলেন। তবে অফিসে ফেরার সময় হিগিন্স মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপ ছিলেন বলেও মন্তব্য করেছেন বিচারক।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, অস্ট্রেলিয়ার আদালতে সোমবার এমন একটি মামলার আইনি রায় হলো, যা বছরের পর বছর ধরে জাতিকে আতঙ্কিত করে রেখেছে। এ ঘটনার সুবিচারের জন্য হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বলা হচ্ছে, নিজের করা মানহানির মামলার জের ধরেই অতীত অপরাধে ফেঁসে যাচ্ছেন ব্রুস লেহরম্যান। মানহানির বিচার শুরু করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিচারপতি লি বলেছেন, সিংহের ডেরা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মিস্টার লেহরম্যান তার টুপির জন্য ফিরে এসে ভুল করেছেন।
পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলা এই বিচারে এক ডজনেরও বেশি সাক্ষীর কাছ থেকে সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এদের মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে ভাড়া করা একজন ‘ঠোঁট পাঠকের’ বিশ্লেষণ, হিগিন্সের মা-বাবা এবং পার্লামেন্টে ব্রুস ও হিগিন্সের সহকর্মীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য নেন আদালত।
রায়ের পর আদালতের বাইরে কথা বলার সময় নেটওয়ার্ক টেন আউটলেটের উপস্থাপিকা মিসেস উইলকিনসন বলেছেন, ‘আমি আজ অস্ট্রেলিয়ার নারীদের জন্য আনন্দিত বোধ করছি।’
এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক টেনও একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সত্যের বিজয় হয়েছে।
মন্তব্য করুন