রেকর্ড সংখ্যক নারী এমপি পাচ্ছে যুক্তরাজ্য
টানা ১৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর বিশাল জয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে যাচ্ছে লেবার পার্টি। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের হটিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তারা। প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন কিয়ার স্টারমার। সেইসঙ্গে এবার রেকর্ড সংখ্যক নারী আইনপ্রণেতা পেতে যাচ্ছে হাউজ অব কমন্স। খবর সিএনএনের।
এ পর্যন্ত ৬৫০ আসনের মধ্যে ৬৪৫ আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে, যেখানে লেবার পার্টি পেয়েছে ৪১০ আসন। বিপরীতে কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১১৭ আসন। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন ৭১ আসনে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী ২৪২ জন নারী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন এবারের নির্বাচনে। এতেই নিশ্চিত হয়ে গেছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রেকর্ড সংখ্যক নারী প্রবেশ করতে যাচ্ছে এবার।
অবশ্য যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের জয় জয়কার দেখা যাচ্ছে গত কয়েক নির্বাচন ধরেই। এর আগে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ২২০ জন নারী আইনপ্রণেতা পায় দেশটি। তারও আগে ২০১৭ সালে ২০৭ জন এবং ২০১৫ সালে ১৯৬ জন নারী হাউজ অব কমন্সে প্রতিনিধিত্ব করার সক্ষমতা অর্জন করেন।
টানা ৬ মাসের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার পর যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল ৭টা থেকে ব্যালটের মাধ্যমে একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয় ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের ৪০ হাজার কেন্দ্রে। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। এর মধ্যে ৩৫টি রাজনৈতিক দল মাত্র একজন করে প্রার্থী দেয়।
যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে রেকর্ড ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একেকটি আসনে গড়ে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন করে। ৩১৭টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েন ৪৫৯ জন।
যুক্তরাজ্যে এবারের সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়নে প্রার্থী হন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবারের নির্বাচনে। লেবারদের বিশাল জয়ের দিনে তাদের হয়ে বিজয় কেতন উড়িয়েছেন চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারীও।
যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেট থেকে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। এবারের নির্বাচনে ২৩,৪৩২ ভোট (৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ) পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ প্রার্থী ডন উইলিয়ামস পেয়েছেন ৮,৪৬২ ভোট। যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব পালন করেন শিশু ও প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক শ্যাডো মন্ত্রী এবং শ্যাডো অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে।
নির্বাচনে ১৮৫৩৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো হাউজ অব কমন্সে বসতে যাচ্ছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আপসানা বেগম। যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনে পপলার এন্ড লাইম হাউজ আসন থেকে লড়েছিলেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রীন পার্টির নাটালি পেয়েছেন ৫৯৭৫ ভোট। আপসানার সাবেক স্বামী অপর ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রার্থী এহতেশামুল হক পেয়েছেন ৪৫৫৪ ভোট।
লেবার পার্টির হয়ে দাপুটে জয় পেয়েছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হকও। ২৮১৩২ ভোট পেয়ে ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টনে তার আসনটি ধরে রেখেছেন তিনি। রূপার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ প্রার্থী জুলিয়ান গ্যালান্ট পেয়েছেন ১৪৮৩২ ভোট।
যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রতিনিধি রুশনারা আলী আবারও জিতেছেন বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে। লেবার পার্টির হয়ে ৪৪ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে রুশনারা এক রকম উড়িয়ে দিয়েছেন কনজারভেটিভদের প্রতিনিধি নিকোলাস স্টোভল্ডকে। রুশনারার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মাত্র ৬ হাজার ৫২৮ ভোট পড়েছে তার ঝুলিতে।
আগামী ৯ জুলাই নতুন পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ গ্রহণ ও স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ জুলাই রাজা তৃতীয় চার্লসের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে নতুন সরকারের।
মন্তব্য করুন