• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
logo

লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে মৃত ৯, আহত প্রায় ৩ হাজার

ডয়েচে ভেলে

  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩:৫৯
লেবানন
সংগৃহীত

লেবাননে বিভিন্ন জায়গায় পেজার বিস্ফোরণে দুই হিজবুল্লাহ সদস্যসহ নয়জন মারা গেছেন। এ ঘটনায় দুই হাজার ৭৫০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইশ জনের আঘাত গুরুতর।

পেজার হলো ছোট একটা ডিভাইস যা যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হয়। হিজবুল্লাহ সদস্যরা পেজারের মাধ্যমে বার্তা বিনিময় করেন।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে পেজার বিস্ফোরণ হয়েছে। মৃতদের মধ্যে একজন নারী।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটারি অফ হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সিরিয়ায় ১৪ জন পেজার বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন।

সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দামেস্কে ১৪ জন পেজার বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন, তবে তারা কোথাকার মানুষ তা জানা যায়নি। লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটা ইসরায়েলের কাজ। তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে এই ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়েছে। ইসরায়েল অবশ্য এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইসরায়েল লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়াতে চাইছে। হিজবুল্লাহ যা বলেছে হিজবুল্লাহও এই বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে।

তারা বলেছে, এই অপরাধমূলক কাজের জন্য ইসরায়েল পুরোপুরি দায়ী। হিজবুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিজবুল্লাহ কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের প্রায় এক বছর ধরে বিরোধ চলছে। তার মধ্যে এটাই হলো সবচেয়ে বড় আক্রমণ। রিপোর্ট বলছে, ইসরায়েল যে এই পেজার বিস্ফোরণের পিছনে আছে, সেই দাবি অসমর্থিত।

গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভিতরে ঢুকে আক্রমণ চালাবার পর থেকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে নিয়মিত সংঘাত চলছে। হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ-সহ বেশ কিছু দেশ।

ঘটনা সম্পর্কে যা জানা গেছে হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, পেজার বিস্ফোরণ একটা সিকিউরিটি অপারেশনের ফল এবং এই যন্ত্রকে টার্গেট করা হয়েছিল। নতুন পেজারে লিথিয়াম ব্যাটারি ছিল। সেগুলিই বিস্ফোরিত হয়েছে।

তার দাবি, এর পিছনে ইসরায়েল আছে। তবে তিনি এই নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

জার্মানির বার্তাসংস্থা ডিপিএ জানিয়েছে, বৈরুতের হাসপাতালে একশরও বেশি মানুষ ভর্তি হয়েছেন। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে হাসপাতালগুলিকে সাবধান করে দিয়ে বলেছে, তারা যেন সতর্ক থাকে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, যাদের কাছে পেজার আছে, তারা যেন ওই ওয়্যারলেস যোগাযোগের যন্ত্র থেকে দূরে থাকেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সত্য উদঘাটিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা যেন পেজার ব্যবহার না করেন।

পেজারের মাধ্যমে মেসেজ বিনিময় করা যায়। মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রথম যুগে পেজার এসেছিল। স্মার্টফোন আসার পর পেজার ব্যবহার খুবই কমে গেছে। তবে এখনো কিছু মানুষ তা ব্যবহার করেন। পেজারের নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি আছে। তাই তা অনেক বেশি নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

বৈরুতের অ্যামেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাকরাম রাবাহ জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস ল্যান্ডমাইন নেটওয়ার্কের স্বার্থে হিজবুল্লাহ পেজার ব্যবহার করে। তাছাড়া সম্প্রতি ইসরায়েল মোবাইল ফোন পরিষেবা হ্যাক করেছিল। তার জন্য তারা পেজার ব্যবহারের দিকে ঝুঁকেছে। কিন্তু এর ফলে তারা নতুন বিপদের মুখে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুল্লাহর সাপ্লাই চেইনে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। না হলে, একই সঙ্গে এত পেজারে বিস্ফোরণ হত না। হিজবুল্লাহ-ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বার্তাসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহ সম্প্রতি এক হাজার পেজার আনিয়েছে। সেগুলিতে বিস্ফোরণ হয়েছে। তাই মনে হচ্ছে, যেখান থেকে তারা এটা আনিয়েছে, সেখানেই বিস্ফোরণের সূত্র খুঁজতে হবে।

প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানত না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, আমি এটা বলতে পরি, এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যোগ নেই। আমরা আগে থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।

মিলার বলেছেন, আমরা ইরানের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, তারা যেন কোনো ঘটনার সুবিধা না নেয়।

জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন, লেবাননে যা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। এর ফলে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে।

আরটিভি/এএইচ

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়