আরজি করের ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসকের গণ-ইস্তফা
আরজি করের প্রায় ৫০ জন চিকিৎসক গণ-ইস্তফা দিয়েছেন। কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়ররাও গণ-ইস্তফা দিতে পারেন।
আরজি করের সিনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে তারা সরকারের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ইস্তফাপত্র পাঠাতে পারেন। তবে তারা পরিষেবা দিয়ে যাবেন, কর্মবিরতিরও প্রশ্ন নেই। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাজ্য দ্রুত পদক্ষেপ নিক, এই বার্তা দিতে গণইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিনিয়ররা।
চিকিৎসক সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাস বলেন, এর দায় সম্পূর্ণ সরকারের। দাবিদাওয়াগুলো মিটিয়ে নিলে এরকম গণইস্তফার মতো পরিস্থিতি হতো না। আরো ডাক্তার গণ ইস্তফা দিতে পারেন। গরিব মানুষের স্বাস্থ্যের ব্যবস্থার কথা ভেবে সরকারকে এই দাবিগুলো মিটিয়ে দিতে হবে।
রাত পোহালেই দূর্গাপুজার বোধন হলেও প্রতিবাদের আঁচ রয়ে যাচ্ছে উৎসবের মধ্যে। ধর্মতলায় সাত জুনিয়র চিকিৎসকের অনশন ৬৬ ঘণ্টা পার করেছে। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র চিকিৎসকরা ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে বসেছেন মঙ্গলবার। এদিন আর এক দফা মহামিছিলের ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। উৎসবের কারণে যানজটের আশঙ্কায় পুলিশ মিছিলে অনুমতি দেয়নি। যদিও কর্মসূচি থেকে সরে আসতে নারাজ আন্দোলনকারীরা। বুধবার সিবিআই দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স ঘেরাওয়ের ডাক দেয়া হয়েছে।
কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়র ডাক্তারেরা বলেছেন, জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। তারা রোগীদের পরিষেবা দিচ্ছেন। কিন্তু অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্য নিয়ে সিনিয়ররা খুবই চিন্তিত। জুনিয়র ডাক্তাররা যে দাবি করেছেন, তার সঙ্গেও পুরোপুরি একমত সিনিয়র ডাক্তাররা। বুধবারের মধ্যে সরকার জুনিয়র চিকিৎসকদের আলোচনায় না ডাকলে, গণইস্তফা দেবেন বলে জানিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়র ডাক্তারেরা।
প্রথম চার্জশিট আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ৫৮ দিনের মাথায় প্রথম চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। পুলিশের হাতে ধৃত সঞ্জয় রায়কে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
১৩ অগাস্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। সঞ্জয়কে হেফাজতে নিয়ে লাগাতার জেরা করেছে সিবিআই। গ্রেপ্তার করার ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট না দিলে অভিযুক্তের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ঠিক পুজার মুখে আর জি করে খুনের মামলায় প্রাথমিক চার্জশিট পেশ করলো সিবিআই। আদালতে পেশ করা ৫৫ পাতার চার্জশিটে নথিভুক্ত রয়েছে ২০০ জন সাক্ষীর বয়ান।
এই চার্জশিটে বলা হয়েছে, সঞ্জয় খুন ও ধর্ষণ করেছে। অভিযুক্ত একাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে চার্জশিটে দাবি করেছে তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনার দিন গভীর রাতে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে সঞ্জয়ের ছবি। তারপর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করা হয়েছে চার্জশিটে। ন্যায়সংহিতার ১০৩ (১) ধারায় খুন, ৬৪ ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, অচেতন অবস্থায় ধর্ষণ করা হয়েছে চিকিৎসককে। এজন্য ন্যায়সংহিতার ৬৬ নম্বর ধারাতেও সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে সিবিআই। অপরাধ প্রমাণিত হলে এসব ধারায় অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। কমপক্ষে ২০ বছর কারাবাসের সংস্থান রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছিল, খুন ও ধর্ষণ একজন নয়, একাধিক জনের কাজ। সিবিআই চার্জশিটে অবশ্য আপাতত অন্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যদিও তদন্তকারীদের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, এই ঘটনা গণধর্ষণ নয়, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শেষ হয়নি।
সিনিয়র চিকিৎসক ডা. পুণ্যব্রত গুণ বলেন, আমরা খুব ভাল করে জানি যে প্রশাসন, কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ, সবাই মিলে তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছে। সেই জন্য হয়তো সঞ্জয় ছাড়া কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। সিবিআই যে তদন্ত করছে, তাতে আমরা আশা করছি আরও কিছু পাওয়া যাবে। চার্জশিটে যাই থাকুক না কেন, আন্দোলন তার নিজের মতোই চলবে।
এই মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে আর জি কর মেডিক্যালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ও টালা থানার সাবেক ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এর সঙ্গে পুলিশ যুক্ত ছিল বলে দাবি করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠে এসেছে। আর জি করের আর্থিক অনিয়মের মামলাতেও সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করেছে। নিহত চিকিৎসক কোনো অনিয়মের কথা জানতে পেরেছিলেন বলে তাকে খুন করা হল কি, এই প্রশ্ন উঠেছে।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, মূল ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সিবিআই এতদিনে শুধু সঞ্জয় রায়ের নামে চার্জশিট দিল, যাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তদন্ত চলুক। হয়ত পরে অন্য নাম জুড়বে। কিন্তু আজ মানুন, পুলিশ ঠিক পথেই ছিল। সঞ্জয়ের একার পক্ষে অবাধে, সেমিনার রুমে দীর্ঘ সময় ধরে অপরাধ ঘটানো সম্ভব ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআইয়ের আইনজীবী জানিয়েছেন, যদি সঞ্জয় একাও এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তার নেপথ্যে কি অন্য কারো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা প্ররোচনা ছিল, এটাও তদন্তের আওতায় রয়েছে।
সূত্রের খবর, এই মামলায় পরে অতিরিক্ত বা সংযোজিত চার্জশিট পেশ করবে সিবিআই। তাতে সন্দীপ ও অভিজিৎ ছাড়াও অন্যদের নাম থাকতে পারে। সিবিআইয়ের চার্জশিট নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন অর্ণব তালুকদার বলেন, অভয়াকে যেভাবে খুন করা হয়েছে, ফরেনসিক মেডিসিনের জ্ঞান থাকা যে কেউ বুঝতে পারবে যে, ওরকম আঘাত কোনো একজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়। সিবিআই শেষমেশ যা রিপোর্ট দিলো, তাতে আমরা একদমই খুশি নই, অত্যন্ত হতাশ। আমরা ফার্স্ট ট্র্যাক তদন্তের দাবি আরো জোরদার করছি।
আরটিভি/এএইচ
মন্তব্য করুন