যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি নির্বাচনের বিতর্ক আজও
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে একটি। দীর্ঘ এ সময়ে দেশটিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকে থাকার পেছনে চালিকা শক্তি হচ্ছে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও বস্তুনিষ্ঠতা। যদিও সবকটি নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ২০০ বছরের ইতিহাসে ন্যূনতম তিনবার নির্বাচনের ফল নিয়ে বাদানুবাদ হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসে সেই তিনটি নির্বাচনের মধ্যে প্রথমেই এনেছে ২০২০ সালের ক্যাপিটল কাণ্ডটি।
এ নির্বাচনে বিজয়ী হন জো বাইডেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত হন। বাইডেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখ ভোটে এগিয়ে থাকেন। ইলেক্টোরাল কলেজেও জিতে যান তিনি। তারপরও বাধ সাধে ট্রাম্প। ভোটের ফল মেনে নিতে অস্বীকার করে বসেন তিনি। এ নিয়ে অসংখ্য মামলা করেন। নির্বাচনের ফল বদলানোর জন্য কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন কর্মকর্তা, বিচারবিভাগ ও তার নিজের ভাইস প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন।
তারপরও বসে থাকেননি তিনি। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প তার সমর্থকদের ক্যাপিটলের দিকে যাত্রা করার উসকানি দেন। সেখানে তখন কংগ্রেসে ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হচ্ছিল। ট্রাম্পের সমর্থকরা মার্কিন পার্লামেন্ট ক্যাপিটলে জোর করে ঢুকে পড়ে। সংঘাতে জড়িয়ে অনেকেই আহত হন। পরবর্তীতে পুলিশ উপস্থিত ট্রাম্প-ভক্তদের ছত্রভঙ্গ করা হয়।
শেষমেশ কংগ্রেস বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
তার পরেই যে নির্বাচনের কথা বিতর্কের টেবিলে আসে তা হচ্ছে ২০০০ সালের ৫৩৭ ভোট। সেই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী আল গোর সার্বিকভাবে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে বেশি ভোট (পপুলার ভোট নামে পরিচিত) পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি তিনি। শেষমেশ ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ফলেই বিজয়ী হন বুশ। সেখানে সামান্য ব্যবধানে গোরকে হারান তিনি।
গোর এই অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি কাউন্টিতে ভোট গণনা প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করেন। কিন্তু ৩৬ দিনের আইনি লড়াই শেষে এ বিতর্কের অবসান হয়। মাত্র ৫৩৭ ভোট বেশি পেয়ে ফ্লোরিডায় জয়ী হন বুশ। গোর বলেন, এটাই চূড়ান্ত ফল। আমি মেনে নিলাম।
তারপরেই যে নির্বাচন সামনে আসে তা হচ্ছে ১৮৭৬ সালের। ইতিহাস ঘাটলে যা দাড়ায়, গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটার প্রায় এক দশক পরের কথা। যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে মতভেদ রয়েই যায়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সামুয়েল টিলডেন ও রিপাবলিকান পার্টির রাদারফোর্ড বি. হেইসের মধ্যে নির্বাচনের কে জিতবেন, তা পরিশেষে দক্ষিণের তিন অঙ্গরাজ্যের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই তিন অঙ্গরাজ্যে ভোটের ফল নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এসব অঙ্গরাজ্যের সমর্থন ছাড়া উভয় প্রার্থীর কেউই ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছিলেন না।
যার ফলে, অচলাবস্থা নিরসনে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে একটি কমিটি নির্ধারণ করা হয়। সেই কমিটি দুই প্রার্থীর মধ্যে একটি চুক্তির ব্যবস্থা করে। চুক্তি অনুযায়ী, রাদারফোর্ড প্রেসিডেন্ট হলেন।
বিনিময়ে সাবেক কনফেডারেসির আওতাধীন দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার।
আরটিভি/এএইচ-টি
মন্তব্য করুন