গাজায় ইসরায়েলি ‘গণহত্যা’ তদন্তের আহ্বান জানালেন পোপ ফ্রান্সিস
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা ‘গণহত্যা’ কি না, তা নির্ধারণের জন্য তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিস। এ জন্য তিনি জুরিস্ট ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের সমন্বয়ে গঠিত এক তদন্ত কমিটি গঠনের জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন। রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোনটিফের ৫০তম বার্ষিকীর আগে আসন্ন নতুন বই থেকে রোববার (১৭ নভেম্বর) প্রকাশিত উদ্ধৃতিতে এই আহ্বান জানান তিনি।
ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম ডেইলি লা স্ট্যাম্পার বরাত দিয়ে আমেরিকান বার্তাসংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, গাজায় যা ঘটছে তাতে গণহত্যার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি আইনবিদ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রণীত প্রযুক্তিগত সংজ্ঞার সঙ্গে মেলে কি না, তা নির্ধারণেরর জন্য আমাদের সাবধানে তদন্ত করা উচিত। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম ফ্রান্সিস গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে গণহত্যার অভিযোগ তদন্তের জন্য খোলাখুলি আহ্বান জানালেন।
২০২৫ সালে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোনটিফের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) একটি বই প্রকাশিত হবে। এ বইটির নাম রাখা হয়েছে, হোপ নেভার ডিসপোয়েন্টস, পিলগ্রামস টোয়ার্ডস এ বেটার ওয়ার্ল্ড (আশা কখনই হতাশ হয় না, একটি উন্নত বিশ্বের দিকে তীর্থযাত্রী)। পোপ ফ্রান্সিসের সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই বইটি লিখেছেন- হারনান রয়েস অ্যালকেইড। রোববার বইটির সংক্ষিপ্তাসার নিয়ে ইতালির দৈনিক লা স্ট্যাম্পায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ফ্রান্সিসের বছরব্যাপী এই জয়ন্তী পবিত্র বছর উদযাপনের জন্য রোমে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি তীর্থযাত্রীদের আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন বইয়ে অভিবাসন এবং তাদের স্বাগতিক দেশগুলোতে অভিবাসীদের একীভূত করার সমস্যা সম্পর্কেও কথা বলেছেন পোপ। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে, কোনো দেশকে একা রাখা যাবে না। কেউই বিধি-নিষেধমূলক এবং দমনমূলক আইনের মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান করার কথা ভাবতে পারে না, কখনও কখনও ভয়ের চাপে বা নির্বাচনী সুবিধার সন্ধানে এসব আইন অনুমোদিত হয়। বর্তমানে যে উদাসীনতার বিশ্বায়ন চলছে, আমাদের অবশ্যই দাতব্য ও সহযোগিতার বিশ্বায়নের সঙ্গে সাড়া দিতে হবে।
এ সময় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়েও কথা বলেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের ক্ষত হাজার হাজার মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করেছে। বিশেষ করে সংঘাতের প্রথম মাসগুলো হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ফ্রান্সিস গাজা যুদ্ধের মধ্যে বসবাসরত ফিলিস্তিনি এবং জিম্মি ইসরায়েলিদের আত্মীয়দের সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেছিলেন। পোপ ওই বৈঠকের পরে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয়ের দুর্ভোগের কথা বলেছিলেন। পরে ইসরায়েল-হামাস জিম্মি চুক্তি হয় এবং গাজায় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপরে পরে গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বলেছিলেন, গাজা এবং লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণগুলো ‘অনৈতিক’ এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। দেশটির সামরিক বাহিনী যুদ্ধের নিয়মের বাইরে চলে গেছে। এদিকে, গত সপ্তাহে ইসরায়েলি জিম্মিদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেন পোপ। তার নতুন এই বইতে ভুক্তভোগীদের দুঃখকষ্ট ও ভোগান্তি নিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সাক্ষাৎকারটিও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরটিভি/কেএইচ-টি
মন্তব্য করুন