শরণার্থী শিশুদের আপন করে নিয়েছে জার্মান ফুটবল ক্লাব
হ্যার্থা বন নামের পশ্চিম জার্মানির একটি ফুটবল ক্লাব শরণার্থী শিশুদের সমাজে একীভূত করতে সহায়তা করছে। ‘ফুটবল কানেক্টস’ নামের একটি প্রকল্প শুরু করেছে তারা। উদ্যোগটি সম্প্রতি জার্মানির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে।
মাত্র কয়েকটি হাতের ইশারায় সেলিম মেহদাউই বোঝান বন-এর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা কেন্দ্রে জড়ো হওয়া শিশুদের কাছ থেকে তিনি কী চান।
কোচ জানান, বাচ্চারা আমাদের আচার-অনুষ্ঠানে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে৷ সম্মিলিত শুভেচ্ছা ও বিদায়ের মতো বিষয়গুলো চর্চা করছে।
সেলিম জোর দিয়ে বলেন, খেলাধুলার পাশাপাশি এটি অংশগ্রহণকারীদের সামাজিকভাবে একীভূত হওয়ার বিষয়েও সহায়তা করছে। ক্লাবের সামাজিক পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অংশগ্রহণকারীরা শরণার্থীদের জন্য নির্ধারিত নিকটবর্তী একটি প্রাথমিক অভ্যর্থনা কেন্দ্র থেকে আসে।
শরণার্থী আবাসনটির স্বেচ্ছাসেবক ও সমন্বয়কারী অ্যান্টজে নেখিলি বলেন, বাচ্চাদের জন্য এই ধরনের প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, তারা পালিয়ে আসার সময় অনেকেরই খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল৷ তাই মাঝে মাঝেই তাদের আচরণে কিছুটা নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এখানে তাদের পুনরায় সহনশীল হতে শেখানো হয়েছে৷ শিশুরা আবারও ভাল, খেলাধুলাপূর্ণ সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।
নেখিলি এবং হ্যার্থা বন ২০২২ সালের মার্চে ফুটবল কানেক্টস প্রকল্পটি চালু করেন।
দুই বছর আগে যখন এই প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল, তখন সেলিম এখানে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ সেলিম যোগাযোগের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছিলেন৷ বিশেষত তাকে ও তার সহকর্মীদের জন্য শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বেশ কঠিন ছিল।
সেলিম বলেন, এটি আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। আপনি দেখতেই পাচ্ছেন যে বাচ্চারা ভাল করছে। তা দেখে আমি সত্যিই অনুপ্রাণিত।
হ্যার্থা বন-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়োর্গ মিশেল বলেন, অবশ্যই এটি একটি চ্যালেঞ্জ, কারণ ভাষার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং প্রতিটি প্রশিক্ষণে নতুন শিশুরা আসছে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আসে এবং প্রায়ই তাদের মধ্যে কথা বলার কোনো একটি সাধারণ ভাষা থাকে না। এ কারণে কোচদের পক্ষে শিশুদের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে বলে জানান মিশেল।
সেলিম সমস্যাটি মোকাবেলা করেছিলেন এবং সমাধান তৈরি করেছিলেন। যোগাযোগ যখন ইংরেজি বা ফরাসি ভাষায় হয় না তখন সেলিম শিশুদের ছোট ছোট কার্ড দেখিয়ে তাদের সঙ্গে অমৌখিকভাবে যোগাযোগ করেন।
ক্লাবটি ফুটবলকে সাধারণ ভাষা হিসাবে ব্যবহার করে, যা সারা বিশ্বে বোঝা যায়।
স্বল্প সময়ের জন্য থাকলেও শিশুরা সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ পর্বগুলো থেকে উপকৃত হয়। শরণার্থী আবাসনগুলোতে তাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে একটি বিরতি নেয়ার পাশাপাশি তারা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দক্ষতা শেখে এবং জার্মান সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসে।
নেখিলি বলেন, প্রশিক্ষণ সেশনগুলো বাচ্চাদের আচরণ পরিবর্তন করে। যদি তারা ইতিমধ্যেই একজন কিছু জেনে থাকে তাহলে তারা অন্য শিশুদের সাহায্য করতে পারে।
সমাজে একীভূত হওয়ার জন্য একটি ফুটবল ক্লাব কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইয়োর্গ মিশেলের এ প্রকল্পটি। তিনি বলেন, সামাজিকভাবে জড়িত হওয়া ক্লাবগুলোর কর্তব্য হওয়া উচিত। এ কারণেই আমরা নির্দেশিকাগুলি তৈরি করেছি এবং আমরা দেখাতে চাই যে এভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া কতটা সহজ হতে পারে।
আরটিভি/এএইচ
মন্তব্য করুন