মণিপুরে আবারও উত্তেজনা, ৬ মরদেহ উদ্ধার
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে ছয় নারী ও শিশুর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত ব্যক্তিরা সবাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়ের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়ার পর থেকেই ওই রাজ্যে নতুনভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ কয়েকটি এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।
সোমবার ( ১৮ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মেইতেই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ওই মৃত ব্যক্তিদের কয়েকদিন আগে সংখ্যালঘু কুকি গোষ্ঠীর সদস্যরা অপহরণ করেছিল। তবে পুলিশ এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে কোনো তথ্য দেয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মেইতেই ও কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে গত বছরের মে মাস থেকে চলা এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। এর মধ্যে গত শনিবার রাজ্যের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অন্তত এক ডজন আইনপ্রণেতার বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল উপত্যকা ও বিষ্ণুপুর জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ওই রাজ্যে পাঠিয়েছে কেন্দ্র সরকার। রোববার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক করেছেন। তবু রাজ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। চলতি মাসে দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। গত ৭ নভেম্বর কুকি সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের পর জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এতে পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনার চার দিন পর, মেইতেই সম্প্রদায়ের শরণার্থী শিবির ও একটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালানো হয়। মেইতেই সম্প্রদায় এই হামলার জন্য কুকিদের দায়ী করেছে।
ওই দিনই ১০ জন সন্দেহভাজন সশস্ত্র ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ। তাদের কুকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য বলে দাবি করা হলেও কুকি সংগঠনগুলো এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিরা তাদের সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী ‘সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক’। শরণার্থী শিবিরে হামলার পর থেকে একটি পরিবার নিখোঁজ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন এক বৃদ্ধা, তার দুই মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনি। মেইতেই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কুকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের অপহরণ করেছে।
এরপর শুক্রবার, পুলিশ ছয়টি মরদেহ উদ্ধারের খবর জানায়। তাদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মরদেহগুলো নিখোঁজ ব্যক্তিদের হতে পারে। সহিংসতা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিক্ষোভকারী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের মে মাসে মেইতেই সম্প্রদায়ের আদিবাসী মর্যাদার দাবির বিরুদ্ধে কুকি সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিক্ষোভ শুরু করে। সেই থেকে সংঘাতের সূচনা। এই মর্যাদা আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে। সেই থেকে রাজ্যটি সহিংসতা ও অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে মেইতেইরা ইম্ফল উপত্যকায় ও কুকিরা পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছে।
আরটিভি/কেএইচ/এস
মন্তব্য করুন