ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন
লন্ডনে টিউলিপকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট দেন আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী
যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে দেশটির রাজধানী লন্ডনে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন একজন আবাসন ব্যবসায়ী। তার নাম আবদুল মোতালিফ। তবে ওই ফ্ল্যাটের বিনিময়ে টিউলিপ সিদ্দিককে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হয়নি।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিপত্রে। টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) হিসেবে দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে আছেন। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।
বিনামূল্যে টিউলিপকে এই ফ্ল্যাট দেওয়ার খবর এমন সময় সামনে এসেছে, যখন ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মাসে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধনসংক্রান্ত নথিতে বলা হয়েছে, বিনা মূল্যে পাওয়া ওই ফ্ল্যাট লন্ডনের কিংস ক্রস এলাকার কাছে অবস্থিত। ২০০৪ সালে ফ্ল্যাটটি তাকে দেওয়া হয়। এর আগে ২০০১ সালে সেটি ১ লাখ ৯৫ হাজার পাউন্ড (বর্তমানে পাউন্ডের বিপরীতে টাকার দর অনুযায়ী যা প্রায় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) দিয়ে কেনা হয়। ফ্ল্যাটটির বর্তমান দাম নথিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে একই ভবনের আরেকটি ফ্ল্যাট গত আগস্টে ৬ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে (প্রায় ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা) বিক্রি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, চলতি শতকের শুরুর দিকে কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন টিউলিপ সিদ্দিক। এরপর বেশ কয়েক বছর সেখানে তার ভাই-বোনেরা ছিলেন। পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে টিউলিপের দাখিল করা আর্থিক বিবরণীতে দুটি ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা আছে এমন এক ব্যক্তি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, আবাসন ব্যবসায়ী আবদুল মোতালিফের দুর্দিনে তাকে আর্থিক সহায়তা করেছিলেন টিউলিপের মা-বাবা। তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ নিজের মালিকানায় থাকা ‘একটি সম্পদ’ টিউলিপকে দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনে বসবাস করেন বর্তমানে ৭০ বছর বয়সী আবদুল মোতালিফ। তার ভোটার নিবন্ধনসংশ্লিষ্ট নথি থেকে জানা গেছে, ওই এলাকায় মোতালিফের ঠিকানায় মজিবুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বসবাস করেন। মজিবুলের বাবা ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে কিংস ক্রসের ওই ফ্ল্যাট কেনার কথা স্বীকার করেছেন আবদুল মোতালিফ। পরে সেটি নিয়ে কী করেছেন, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে টিউলিপের ওই ফ্ল্যাট পাওয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার খবর ‘ভুল’ বলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে দাবি করেন তার (টিউলিপ) একজন মুখপাত্র।
আরটিভি/কেএইচ
মন্তব্য করুন