• ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১
logo

যে কারণে বলপ্রয়োগ করে হলেও গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা চান ট্রাম্প

আরটিভি নিউজ

  ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:২৪
যে কারণে বলপ্রয়োগ করে হলেও গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা চান ট্রাম্প
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন মালিকানা প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালেও আর্কটিক অঞ্চলের খনিসমৃদ্ধ এ দ্বীপটির দিকে নজর ছিল তার। সবশেষ গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বরফাচ্ছন্ন দ্বীপটিতে পা রাখেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। যদিও সফরটিকে ‘আনন্দভ্রমণ’ বলছেন তিনি, কিন্তু বিষয়টি ঘিরে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে বেশ।

এ প্রসঙ্গে বুধবার ট্রাম্পের ফ্লোরিডা রিসোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার যে চেষ্টা তিনি করছেন, সেই প্রক্রিয়ায় সফল হতে কোনো ধরনের সামরিক ও অর্থনৈতিক বল প্রয়োগ করবেন না—বিশ্বকে তিনি এমন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন কি না।

জবাবে কোনো রাখঢাক না করেই নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, না, ওই দুটোর কোনোটির বিষয়ে আমি আপনাদের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তবে আমি এটা বলতে পারি, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের ওই দুটিই (পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ড) প্রয়োজন।

গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ‘জরুরি’ হওয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অজুহাত দিলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে তার অন্যান্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যেমন দ্বীপটি হলো প্রাকৃতিক সম্পদের এক ভান্ডার। এর মধ্যে পৃথিবীর বিরল কিছু ধাতুও রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে যেভাবে উষ্ণতা বাড়ছে, তাতে বরফ গলে গিয়ে এখান থেকে এসব সম্পদ আহরণ করা আরও সহজ হয়ে উঠতে পারে।

গ্রিনল্যান্ড হলো বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ, যার জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজারের কিছু বেশি। একসময় ডেনমার্কের উপনিবেশ থাকলেও এখন দ্বীপটি একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ভূরাজনৈতিক দিক থেকে বিবেচনা করলে বেশ গুরুত্ব আছে দ্বীপটির। কারণ, এর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মাঝখানে। গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক। শহরটি যতটা না ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের কাছে, তার চেয়ে বেশি কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের।

‘ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক আলরিক প্রাম গাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডের মালিকানাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়, বিশেষ করে রাশিয়া থেকে হামলা ঠেকানোর ক্ষেত্রে। জাহাজ চলাচলের পথ ‘দ্য নর্থওয়েস্ট প্যাসেজ’ গ্রিনল্যান্ড উপকূল হয়ে গেছে। তাছাড়া কৌশলগত সামুদ্রিক এলাকা গ্রিনল্যান্ড-আইসল্যান্ড-যুক্তরাজ্যেরও অংশ এ দ্বীপ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা প্রকাশকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পই প্রথম নন। তার আগে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন ১৮৬৭ সালে যখন আলাস্কা কেনেন, তখন গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ও বিবেচনা করছিলেন তিনি। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে দ্বীপটি কিনতে ডেনমার্ককে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের প্রশাসন।

এসব ধারণা বা প্রস্তাবের কোনোটিই সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে ১৯৫১ সালে প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে গ্রিনল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে একটি বিমানঘাঁটি গড়তে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘাঁটি বর্তমানে ‘পিটুফিক স্পেশ বেস’ নামে পরিচিত। মস্কো ও নিউইয়র্কের মাঝামাঝি অবস্থিত এটি। অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কব্যবস্থা রাখা হয়েছে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সর্ব-উত্তরের এ ঘাঁটিটিতে।

প্রাম গাদ সিএনএনকে বলেন, গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ বৈরী মনোভাবাপন্ন কোনো বৃহৎ শক্তির হাতে যেন না যায়, তা নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে দ্বীপটি।

ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও দ্বীপটিতে আছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের মজুত। যার মধ্যে রয়েছে তেল ও গ্যাস। আরও আছে পৃথিবীর বিরল কিছু ধাতু, যেগুলোর বৈদ্যুতিক গাড়ি ও বায়ুকলের পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে উচ্চ চাহিদা রয়েছে।

বিশ্বের বিরল সব ধাতু উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এগিয়ে আরেক পরাশক্তি চীন। দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণকে সামনে রেখে চীন ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার হুমকি দিয়েছে।

বিষয়টি উল্লেখ করে রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ভূরাজনীতির অধ্যাপক ক্লাউস ডডস বলেন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমাণ প্রভাবে ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা যে খুবই উদ্বিগ্ন, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। গ্রিনল্যান্ড এসব গুরুত্বপূর্ণ খনিজের একটি সম্ভাব্য সমৃদ্ধ ভান্ডার।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ানক প্রভাব পড়ছে গ্রিনল্যান্ডের ওপরও। আর্কটিকের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে এবং পৃথিবীর সর্ববৃহৎ দ্বীপটির বরফ ক্রমশই গলছে। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে গ্রিনল্যান্ডের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ঘটলেও তাতে অর্থনৈতিক সুবিধা দেখছেন কেউ কেউ।

আর্কটিকে বরফ গলতে থাকায় সেখানে নতুন নতুন জাহাজ চলাচলের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে। গত এক দশকে এ অঞ্চলে জাহাজের চলাচল বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। আর্কটিক কাউন্সিলের মতে, জাহাজের চলাচল এতটা বেড়ে যাওয়ার আংশিক কারণ গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়া।

সিএনএনকে অধ্যাপক ডডস বলেন, আমি মনে করি, ট্রাম্পের এটা জানা আছে, আর্কটিকের বরফ গলছে এবং এটি একটি সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।

ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ডরহামের ভূগোলের অধ্যাপক ফিলিপ স্টেইনবার্গ বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বরফ গলতে থাকলে গ্রিনল্যান্ড থেকে প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ সহজতর হবে। যদিও জলবায়ু সংকট এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে মোড় ঘোরানো কোনো সুযোগ এনে দেয়নি।

অবশ্য হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পর ট্রাম্প তার গ্রিনল্যান্ড কেনার আকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দিবেন, কিংবা আদৌ সক্ষম হবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে ড্যানিশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রাম গাদ বলেন, এটি কি শুধুই ট্রাম্পের সাহসিকতা প্রদর্শন, কিছু পাওয়ার হুমকি, নাকি প্রকৃতই এমন কিছু, যা তিনি বাস্তবে ঘটাতে চান—কেউ জানেন না।

আরটিভি/এসএইচএম

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিল মার্কিন কংগ্রেস
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর পদত্যাগের বিষয়ে যা বললেন ট্রাম্প
ট্রাম্পের হোটেলের সামনে সাইবার ট্রাকে বিস্ফোরণ, নিহত ১
ইতিহাস গড়ার লড়াইয়ে শেষ হাসি ট্রাম্পের