স্টারমারের নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের খালা তথা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সদস্যরা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার প্রতিনিধিত্বকারী কর্মীরা ছায়া মন্ত্রিসভায় থাকাকালীন প্রধানমন্ত্রীর জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তার শাসনামলে, বিরোধীদের আক্রমণ, গ্রেপ্তার এবং গোপনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের একটি যুক্তরাজ্য শাখা রয়েছে, যার সদস্যরা অতীতে টিউলিপ সিদ্দিকের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আহাদ চৌধুরীসহ বিশিষ্ট কর্মীরা স্যার কিয়ের স্টারমারের জন্য তার হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাস নির্বাচনী এলাকায় প্রচার করেছিলেন, যেটি আবার টিউলিপ সিদ্দিকের হ্যাম্পস্টেড আসনের পার্শ্ববর্তী এলাকা। আওয়ামী লীগের কর্মীরা দরজায় দরজায় স্টারমারের নাম সম্বলিত লেবার লিফলেট বিলি করেছিলেন এবং তার পার্টিকে সমর্থন করে প্ল্যাকার্ড বহন করেছিলেন। তারা একই দিনে টিউলিপ সিদ্দিকের হয়েও প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রচারণা দলের মধ্যে এমন কর্মীও অন্তর্ভুক্ত ছিল যারা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে নিজেদের দাবি করে এসেছে। দলটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তহবিল সংগ্রহ অভিযানের সময় একটি রেস্তোরাঁয় আবদুল আহাদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখাও করেছিলেন স্টারমার। গত বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের দিন তিনি স্টারমারের সাথে করমর্দনের একটি ছবিও পোস্ট করেছিলেন, যার ক্যাপশন ছিল- ‘ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার।’
দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, ছবিটি কখন তোলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। ২০১৯ সালের ইলফোর্ডে লেবার প্রার্থী স্যাম টেরির পক্ষে প্রচারের সময় কিয়ের স্টারমার আব্দুল শহীদ শেখের সঙ্গেও পোজ দিয়েছেন, যিনি নিজেকে আবার আওয়ামী লীগের জনসংযোগ কর্মী বলে বর্ণনা করেছেন। সেই একই কর্মী এখন উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেনারের সঙ্গেও দেখা করেছেন। আওয়ামী লীগের সদস্যরা একাধিকবার সিদ্দিকের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। আবদুল আহাদ চৌধুরী, শাহ শামীম আহমেদ, যিনি নিজেকে অফিস সেক্রেটারি হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ২০১৯ সালে হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্ন -এর এমপির পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সদস্যরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতি জনসমর্থন প্রকাশ করলেও, তারপর থেকে তার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের সাথে লেবারের সম্পর্ক নিয়ে নতুন প্রশ্ন সামনে এসেছে যখন বাংলাদেশের তদন্তকারীরা টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যাংকের বিশদ তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা আর্থিক অভিযোগে বিপর্যস্ত যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপের ওপর চাপ বাড়াতে পারে।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং এজেন্সি দেশের প্রধান ব্যাংকগুলোকে তার অ্যাকাউন্ট ও লেনদেনের তথ্য সরবরাহ করতে বলেছে। দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশন একটি তদন্ত শুরু করেছে। টিউলিপ সিদ্দিক অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পর্যন্ত তার পরিবারকে আত্মসাৎ করতে সহায়তা করেছিলেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও টিউলিপ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি লন্ডনে তার খালার সমর্থকদের সঙ্গে যুক্ত সম্পত্তি ব্যবহার করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের নীতি উপদেষ্টাদের কাছেও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।বাংলাদেশ সফরের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক নিয়েও তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছেন স্টারমার। ২০১৬ সালে ঢাকা ও সিলেটে সাত দিনের সফরটি, যার জন্য খরচ হয়েছিল ১২০০ পাউন্ড, আয়োজন করেছিল সিদ্দিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত একটি গ্রুপ ‘লেবার ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’।
দ্য টেলিগ্রাফ জানায়, বাংলাদেশের মিডিয়ার ছবি মোতাবেক স্টারমারকে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে দেখা গেছে, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিপরিষদের তিন মন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন। যদিও এ বিষয়ে লেবার পার্টির তরফে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
আরটিভি/এসএপি
মন্তব্য করুন