কেন বনবিড়ালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া?
দেখতে আকর্ষণীয় ও নরম লোম বিশিষ্ট হলেও বনবিড়াল এখন অস্ট্রেলিয়ায় এক নম্বর গণশত্রু। এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটি। ২০২০ সালের মধ্যে অবাধে বিচরণকারী দুই মিলিয়ন বিড়াল হত্যা করতে চায় দেশটির সরকার।
শুক্রবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম সিএনএন। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, দেশটিতে বর্তমানে দুই থেকে ছয় মিলিয়ন বনবিড়াল আছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু অঞ্চলে এক্ষেত্রে নেয়া পদক্ষেপ আরও গুরুতর। দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে এক একটি বনবিড়ালের মাথার বিনিময়ে অস্ট্রেলীয় ১০ ডলার করে প্রদান করার ঘোষণা দিয়েছে একটি কাউন্সিল।
এই উদ্যোগকে ‘নির্মমতা’ হিসেবে উল্লেখ করে এর প্রতি নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংগঠন পিপল ফর দ্য এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস। প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর বিপরীত মেরুর বাসিন্দারা বিড়ালকে কেন এতো অপছন্দ করে।
উত্তরটা খুবই সহজ। বিড়াল, বিশেষ করে বনবিড়াল হলো অন্যান্য প্রাণি শিকারি। ১৭ শতকের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বনবিড়ালের আগমন ঘটে বলে মনে করা হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত এদের সংখ্যা অত্যধিক মাত্রায় বেড়েই চলেছে।
যদিও দেশটিতে বনবিড়ালদেরকে গৃহপালিত বিড়ালদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবু তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বনে থাকে এবং বাঁচার জন্য অন্যান্য প্রাণি শিকার করে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপন্ন প্রজাতির জাতীয় কমিশনার গ্রেগরি অ্যান্ড্রুস স্থানীয় গণমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে বলেন, ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা বনবিড়ালদেরকে পরিচিত করানোর পর থেকে এ পর্যন্ত এসব প্রাণির কারণে প্রায় ২০টি স্তন্যপায়ী প্রাণি বিলুপ্ত হয়েছে।
অ্যান্ড্রুসের মতে, এটাই বনবিড়ালকে অস্ট্রেলিয়ার দেশীয় প্রাণির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিতে পরিণত করেছে। কিন্তু কয়েক হাজার বছর পৃথিবীর অন্য অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা দ্বীপজাতি অস্ট্রেলিয়ার জন্য এসব প্রাণি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।
একটি হিসাব অনুসারে, এখন অস্ট্রেলিয়ার ৮০% স্তন্যপায়ী প্রাণি এবং ৪৫% পাখি দেশটি ছাড়া পৃথিবীর আর কোনও দেশের বনে খুঁজে পাওয়া যায় না। এদিকে দেশটির দেশীয় প্রাণিগুলো খুব সহজের শিকার করে ফেলে বিড়ালগুলো।
অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ ও জ্বালানি দপ্তরের এক মুখপাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার বরাত দিয়ে সিএনএনকে বলেন, বিড়ালেরা প্রতিদিন অস্ট্রেলিয়াজুড়ে এক মিলিয়ন দেশীয় পাখি এবং এক দশমিক সাত মিলিয়ন সরীসৃপ প্রাণি হত্যা করে।
এছাড়া দেশটির খরগোশ ও ইঁদুরসহ অন্যান্য প্রজাতির প্রাণির টিকে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব বিড়াল। তাই দেশটির সরকার সোনালি রঙের এক ধরনের বড় ইঁদুরকে বিপন্ন প্রাণি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।
এই বিষয়ে দেশটির বিপন্ন প্রজাতির জাতীয় কমিশনার অ্যান্ড্রুস বলেন, যে প্রাণিগুলোকে আমরা ভালোবাসি এবং যেসব প্রাণি আমাদেরকে একটি জাতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, তাদের রক্ষার্থে আমরা বিড়ালগুলো হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কে/পি
মন্তব্য করুন