• ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
logo

হংকংয়ের চলমান বিক্ষোভ নিয়ে ‍উদ্বিগ্ন সেখানকার বাংলাদেশিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৫:১৮
হংকং, বাংলাদেশি, উদ্বিগ্ন
ছবি: সংগৃহীত

হংকংয়ে প্রায় তিনমাস ধরে চলা গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন দমনের জন্য চীনের হস্তক্ষেপ নিয়ে আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ নিলে তা চীনের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে তাও এই মুহূর্তে অনুমান করা কঠিন।

তবে বিবিসির চীন বিভাগের সম্পাদক হাওয়ার্ড ঝ্যাং বলছেন, হংকং সঙ্কট মোকাবেলায় চীন হস্তক্ষেপের জন্য যে প্রস্তুতি নিচ্ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

গত কয়েকদিনে চীন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান শক্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ম ভাষায় মন্তব্য করেছে, এমনকি তাদের ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে তুলনা করেছে।

হংকংবাসীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো উপর্যুপরি ১১ সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে হংকংয়ের অর্থনীতিতে। হংকংয়ের অর্থনীতির প্রায় ২০ শতাংশ পর্যটন এবং খুচরা ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। আর এই বিক্ষোভের ফলে এই দুটি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

হংকংয়ের বড় একজন ব্যবসায়ী বাংলাদেশি সৈয়দ ইকরাম ইলাহী। তিনি হংকংয়ে ২৪ বছর ধরে বসবাস করছেন। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, তার ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে হংকংয়ের যে পরিচিতি, সুনাম ছিল, তা তার ভাষায় অনেকটাই খর্ব হয়েছে।

ইলাহী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের ক্রেতারা ভীত। তারা আমাদের ব্যবসা দিতে একটু ভয় পাচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা। তারা দেখছে আমাদের এখানে এরকম সমস্যা চলছে।

তিনি বলেন, তারা চিন্তিত যে আমরা আসলে তাদের মাল ঠিকমত রপ্তানি করতে পারব কিনা। তারা আমাদের ফ্যাবরিক আর অ্যাকসেসরিসরের অর্ডার দিয়ে থাকেন। আমরা যদি ঠিক সময়মত সেগুলো এক্সপোর্ট করতে না পারি, তারা তো তাদের গার্মেন্ট শিপমেন্ট করতে পারবেন না।

এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীরা যে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন তাদের উদ্বেগ নিয়ে, তারও কোনও সুযোগ নেই বলে জানালেন সৈয়দ ইকরাম ইলাহী। কারণ এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তার মতে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ বা হংকং সরকার কোনও কিছুই করতে পারছে না।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ সবাই এই আন্দোলনে সায় দিয়েছে। অনেকে প্রতিবাদে নেমেছে। যতদিন পরিস্থিতি শান্ত না হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য খারাপ থাকবে। শেয়ার সূচকও পড়তির দিকে, যা আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ।

বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, হংকংয়ের আর্থিক খাতের কর্মকর্তারা, বিমানবন্দরের কর্মীরা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মচারীরা এই বিক্ষোভকে সমর্থন করছেন- বিক্ষোভ এবং হরতালে যোগ দিয়েছেন। যার ফলে এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে।

বিবিসির চীন বিভাগের সম্পাদক হাওয়ার্ড ঝ্যাং বলছেন, চীন যদি হংকংয়ে হস্তক্ষেপ করে, বিক্ষোভকারীদের দমনে সেখানে সেনা নামায় তাহলে তার জন্য চীনকে কড়া মূল্য দিতে হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র এবং মুক্ত বন্দর এলাকা বলে হংকংয়ের যে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।

---------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ’: দাবি ত্রিপুরার চাকমাদের
---------------------------------------------------------------------

‘চীনকে আন্তর্জাতিক স্তরে বড় ধরনের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে, পশ্চিমা দেশগুলো চীনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাববে এবং বিশ্বে চীনের অবস্থান ও দেশটির অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলেও জানান তিনি।

হংকংয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সৈয়দ ইকরাম ইলাহীরও ধারণা চীন কড়া হাতে এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নেবে না।

হংকং বাণিজ্যের একটা মূল কেন্দ্র এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় শহর

তিনি বলেন, মনে হয় না চীন সরাসরি নাক গলাবে। চীন হংকংয়ে অনেক বিনিয়োগ করেছে। হংকংয়ের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য চীনের অবদান অনেক। হংকংয়ে ব্যবসার ক্ষতি হয়, সেটা চীন হতে দেবে না। কারণ চীন ব্যবসার জন্য হংকংয়ের ওপর নির্ভরশীল। আশা করছি একটা সমাধান নিশ্চয়ই হবে।

পাঁচ বছরের ওপর হংকংয়ে থাকেন বাংলাদেশি গৃহবধূ ফাহমিদা মজুমদার। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, হংকং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য তো বটেই এমনকি বসবাসের জন্যও শান্তির ও নিরাপদ শহর ছিল।

সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভ তাকে এবং তার মতো সেখানে বসবাসরত বহু বাংলাদেশি পরিবারের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, হংকংয়ের এই বিক্ষোভের পরিণতি কী হয়- পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। মা হিসেবে আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। বর্তমানে আমরা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ফাহমিদা আরও বলেন, আমার সন্তানদের অনেক বন্ধুবান্ধব হংকংয়ের বাসিন্দা। তারা বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। আমার ছেলেমেয়েরা এই বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়বে কিনা সেটা নিয়ে অবশ্যই উদ্বেগ আছে। চীন যদি হস্তক্ষেপ করে, হংকংয়ের প্রশাসন যদি চীনের হাতে চলে যায়, আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে এসব নিয়ে অনিশ্চয়তা আর আশঙ্কায় দিন কাটছে আমাদের।

তিনি বলেন, হংকংয়ে বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশ নানা ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই বিক্ষোভ দীর্ঘায়িত হলে এবং তা অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেললে সেটা বাংলাদেশিদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

হংকংয়ে বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিষয়ক এক আইনের বিরোধিতা করে শুরু হওয়া এই আন্দোলন অবসানের আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি হংকংয়ের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী লি কা-শিং সেখানকার সংবাদপত্রে অনেকগুলো পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন দিয়েছেন।

উত্তেজনা প্রশমন এবং সহিংসতা বন্ধের ডাক দিয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হংকংয়ের আরও অনেক বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভারতে ৮ বাংলাদেশি আটক
দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার (২৩ ডিসেম্বর)
দিল্লিতে অবৈধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ