ট্রাম্পের দৃষ্টি থেকে দারিদ্র লুকোতে চাইছে গুজরাট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন সফরের আগে ভারতের আহমেদাবাদে যেভাবে গরীব বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করা শুরু হয়েছে, শহরের অনেকেই তার তীব্র সমালোচনা করছেন।
যে মোতেরা স্টেডিয়ামে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একযোগে ভাষণ দেবেন বলে স্থির আছে, তার ঠিক সামনেই একটি বস্তির শদুয়েক বাসিন্দাকে উচ্ছেদের নোটিশ ধরানো হয়েছে।
এর আগে শহরে রাস্তার ধারের মলিন ঝুগ্গি-ঝোপড়িগুলো উঁচু দেয়াল তুলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চোখের আড়াল করারও চেষ্টা হয়েছে, সেখানেও বস্তিবাসীরা তাতে প্রবল ক্ষুব্ধ।
এক কথায়, মি ট্রাম্পের সফরের জন্য আহমেদাবাদ তার দারিদ্রের ছবি লুকোনোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের গুজরাটে পা রাখতে আর সপ্তাহখানেকও বাকি নেই, তার আগে যথারীতি সাজো সাজো রব পড়ে গেছে গোটা আহমেদাবাদ জুড়ে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে এই শহরের মোতেরায়, সেখানেই আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি 'নমস্তে ট্রাম্প' অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তার আগে ওই স্টেডিয়ামের কাছে একটি বস্তির গোটা পঞ্চাশেক পরিবারের দুশো লোককে উচ্ছেদের নোটিশ ধরিয়েছে আহমেদাবাদ পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভার ধরানো কাগজ দেখিয়ে ওই বস্তির বাসিন্দা রমা মেদা বলছিলেন, "কর্পোরেশনের সাহেব এসে জোর করে এই কাগজ আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে গেছে সাত দিনের মধ্যে এই এলাকা খালি করতে হবে।"
"কিন্তু আমরা যাবটা কোথায়? আমরা থাকার জন্য তো আর বাংলো চাইছি না, চাইছি শুধু এক টুকরো জমি!"
বস্তির প্রবীণ আরেক বাসিন্দা বলছিলেন, "গেল বিশ-পঁচিশ বছর ধরে এখানে থেকে মজদুরি করে খাচ্ছি। আজ হঠাৎ করে উঠে যাও বললে আমরা কোথায় যাব? আমাদের তাহলে অন্য কোথাও বসত করার জায়গা দিক।"
পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে, বস্তিবাসীরা ওই জমি জবরদখল করে রেখেছেন বলেই এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
তবে গেল কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ধরে যে জমি তাদের হাতছাড়া হয়ে আছে, সেটা এখনই উচ্ছেদ করার কেন তাড়া সে প্রশ্নের সদুত্তর তাদের কাছেও নেই।
এদিকে এর মাত্র কদিন আগেই শহরের শরনিয়াবাস বা দেবশরণ বস্তিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রুট থেকে আড়াল করার জন্য রাস্তার পাশে প্রায় সাড়ে চার ফিট উঁচু দেয়াল তুলেছে আহমেদাবাদ কর্পোরেশন।
সেখানেও ক্ষুব্ধ বস্তিবাসীরা বলছিলেন, "রাষ্ট্রপতি এই রাস্তা দিয়ে যাবেন বলে আমাদের গরীব লোকগুলোকে ঢেকে দিতে হবে কেন?"
"দেয়াল তোলার বদলে অন্য কোনও উন্নয়ন তো করলে পারত বরং!"
কেউ কেউ আবার বলছেন, "এর চেয়ে বরং আমাদের কদিনের জন্য বের করে দিত - ঝোপড়পট্টির লোকজনকে এভাবে অপমান করার কী দরকার ছিল?"
শহরের সুপরিচিত প্রবীণ অ্যাক্টিভিস্ট নির্ঝরী সিনহাও বলছিলেন, এই সব ব্যাপার-স্যাপার দেখে তিনি অত্যন্ত বিরক্ত ও হতাশ।
তিনি বলছিলেন, "যে রাস্তার পাশে দেয়াল তোলা হয়েছে, সেটা এয়ারপোর্ট থেকে শহরে আসার পথেই পড়ে।"
"এর আগেও চীনা প্রেসিডেন্ট বা জাপানি প্রধানমন্ত্রীর গুজরাট সফরের সময় সেগুলো তেরপলের চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হত - কিন্তু এবার কংক্রিটের দেয়াল তোলার কী হলো বুঝলাম না।"
"এমন কী আশেপাশের ছোটখাটো বহু পান ও চায়ের দোকানও কয়েকদিনের জন্য বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।"
"আমরা তো একটা গরীব দেশ, শুধু আমরা বিদেশি অতিথিদের জন্য মাত্রাতিরিক্ত খরচই করছি না - গরীব মানুষের রুটিও কেড়ে নিচ্ছি।"
আহমেদাবাদের বাসিন্দা শাহিনা শেখও মনে করেন, ট্রাম্পের সফরের নামে শহরে অনেক ভুলভাল খরচও হচ্ছে।
তিনি বলছিলেন, "ট্রাম্প আসছেন শোনার পর থেকেই দেখছি শহরের যে রাস্তাগুলো ভালো ছিল সেগুলোকেই আরও ভালো করা হচ্ছে, অথচ যে খারাপ রাস্তাগুলোর মেরামত দরকার সেগুলো যে-কে-সেই পড়ে আছে।"
"সবাই তো জানেন এখানে রাজনীতির কারকারবার, সেই অনুযায়ীই এসব হচ্ছে আর কী!"
"আর এই যে ট্রাম্পকে 'শো অফ' করার জন্য রাস্তা সারানোর নামে ভালো রাস্তাগুলোতেই খরচ করছে, এই টাকা তো আমাদের জনগণের পকেট থেকেই যাবে?"
কাজেই একদিকে সুন্দর রাস্তাকে আরও চকচকে করে তুলে, আর অন্যদিকে গরীব বস্তিকে প্রেসিডেন্টের নজর থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে আহমেদাবাদ।
সূত্র- বিবিসি বাংলা
এম
মন্তব্য করুন