• ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

উন্নত যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি মানুষকে হত্যা ও কারাবন্দি করে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০৯ জুন ২০২০, ২২:০৮
American police shoot, kill and imprison more people than other developed countries
সিএনএন থেকে নেয়া

জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিচার এবং পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনিদের হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে; এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে মানবাধিকার কর্মীরাও। খবর সিএনএনের।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছরই পুলিশের হাতে মারা যাওয়া মার্কিনিদের মধ্যে ফ্লয়েডও একজন। কিন্তু অন্যান্য উন্নত দেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উন্নত অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বেশি পরিমাণে মানুষকে গুলি, গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করে।

যেসব দেশের পরিসংখ্যানের সঙ্গে এই তুলনা করা হয়েছে সেগুলো হয় জি সেভেনের সদস্য বা বৈশ্বিক সম্পদ, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র সূচকে এগুলোর কাছাকাছি। কিন্তু এসব দেশের মধ্যে যখন পুলিশিং এবং ক্রিমিনাল জাস্টিস নিয়ে তুলনা করা হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যতিক্রম সেটা নজর কাড়ে, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ক্ষেত্রে।

গ্রেপ্তার, মৃত্যু ও কারাবন্দিদের সংখ্যা কত, এসব হিসাব উন্নত দেশগুলোতে সমান নয়। তাই অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পার্থক্য কতটুকু সেটা একেবারে নিখুঁতভাবে বলা সহজ না। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে কতজন মানুষ পুলিশের হাতে মারা যায় তা সঠিকভাবে জানা অসম্ভব, কেননা কোনও একক বা দেশজুড়ে এমন কোনও ডাটাবেজ নেই, সেখানে এই তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়।

২০১৫ সালে হাউজ জুডিশিয়ারি কমিটিকে এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেমস কমি বলেন, আমরা কোনও ধরনের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতে পারি না। কারণ আমাদের কাছে কোনও ডাটা নেই। গত সপ্তাহে কেউ একজন মুভি দেখতে গেলে ডাটা আছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ গত মাসে, গত বছর বা ডেমোগ্রাফির হিসাবে কত মানুষকে গুলি করেছে সেটির তথ্য আমার কাছে নেই।

তাই আমাদের অনুমান নির্ভর হওয়া ছাড়া উপায় নেই কিন্তু এর মধ্য দিয়েও নির্মম চিত্র উঠে এসেছে।

ব্যুরো অব জাস্টিস স্ট্যাটিসটিক্স (বিজেএস) এর একটি মিডিয়া রিভিউয়ে দেখা যায়, ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত এই ১০ মাসে গ্রেপ্তার-সম্পর্কিত সম্ভাব্য এক হাজার ৩৪৮টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে ১৩৫ জন বা প্রতিদিন ৪ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। (ফেডারেল এবং ট্রাইব্যুনাল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আওতায় মৃত্যুর হিসাব এই রিভিউয়ে বাদ দেয়া হয়েছে এবং বিজেএস স্বীকার করেছে যে এটা পুরো চিত্র নয়।)

যুক্তরাজ্যের পুলিশের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা জানিয়েছে, কাছাকাছি সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্যে এ ধরনের ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫-১৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে একই ধরনের ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তাদের পরিসংখ্যান অনেকটাই সঠিক। তবে পুলিশের সংস্পর্শে আসার পর হওয়া প্রতিটি মৃত্যুকে হিসাবের মধ্যে নেয় না যুক্তরাজ্য।

অন্য উন্নত দেশের চেয়ে বেশি গুলি চালায় আমেরিকান পুলিশ

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে একজন পুলিশ অফিসার জাস্টিফাইঅ্যাবল হোমোসাইডের সময় ৪০৭ জন মানুষকে গুলি করেছে বলে জানায় এফবিআই, এটা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা কম। তবে হোমোসাইডের সময় পুলিশের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডই রেকর্ড করা হয় না এবং মানবাধিকার গ্রুপের হিসাবে এই সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। যেমন ওয়াশিংটন পোস্টের হিসাবে ২০১৯ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে এক হাজার চারজন। তবে ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্স বলছে, এই সংখ্যাটা এক হাজার ৯৯।

হাউস জুডিশিয়ারি কমিটিতে কমির মন্তব্যে এটা ফুটে ওঠে যে, এফবিআই যে সংখ্যা প্রকাশ করে তা পুরো চিত্র তুলে ধরে না। তবে অনেক উন্নত দেশে পুলিশের গুলি করার ঘটনা খুবই বিচ্ছিন্ন বিষয়। যেমন নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যে (উত্তর আয়ারল্যান্ড বাদে) পুলিশ নিয়মিতভাবে বন্দুক বহন করে না।

পুলিশের গুলির শিকার হওয়ার ঘটনার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভবত বেশি অনুসরণ করে জি সেভেনভুক্ত দেশ কানাডা। কোনও অফিসার অভিযুক্ত হলেই কেবল আনুষ্ঠানিক ডাটা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু সিএনএন অ্যাফ্লিয়েট সিবিসি বলছে যে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কানাডায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ৪৬১ জন।

উন্নত অন্য দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কারাবন্দির সংখ্যাও বেশি

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১০ লাখ ৩১ হাজার ৯৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, অর্থাৎ প্রতি ৩২ জন মার্কিনিদের মধ্যে একজন গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছে। এই সংখ্যাটা যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে অনেক বেশি।

পুলিশের মুখোমুখি হওয়া বা গ্রেপ্তারের শিকার হওয়াদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগের ঘটনা ঘটে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে চলমান প্রতিবাদে এটি বিক্ষোভকারীদের অন্যতম একটি অভিযোগ।

পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে এবং ২০১৬ সালে আমেরিকান জার্নাল অব হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তির চেয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি পুলিশি হস্তক্ষেপের সময় হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি। অন্যান্য দেশের সঙ্গে এই মুহূর্তে এটির তুলনামূলক চিত্র নেই।

সাধারণভাবে, অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ বেশি ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের মুখোমুখি হয় এবং অনেকে কারাবন্দিও হয়।

বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি কারাবন্দি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।ওয়ার্ল্ড প্রিজন ব্রিফের হিসাবে, মাথাপিছু সংখ্যার দিক থেকেও সবচেয়ে এগিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বজুড়ে কত মানুষ কারাবন্দি রয়েছে সেটি বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করে লন্ডন ভিত্তিক এই সংস্থাটি।

যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র চারটি শহরের বাসিন্দার সংখ্যা দেশটির কারাগারে থাকা জনগোষ্ঠীর চেয়ে বেশি। দেশটিতে ২২ লাখের বেশি মানুষ কারাবন্দি, যা ওয়াশিংটন ডিসি, বোস্টন ও মিয়ামির সম্মিলিত বাসিন্দার সংখ্যার চেয়ে বেশি।

কারাবন্দির এই সংখ্যাটা পুরো দেশজুড়েই অনেক বেশি। প্রিজন পলিসি ইনিশিয়েটিভ জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যকে একটি দেশ হিসেবে গণনা করা হতো, তাহলে দেশটির প্রতিটি রাজ্য অর্থাৎ ৩১টি দেশের প্রত্যেকটিই বিশ্বে মাথাপিছু কারাবন্দির হিসাবে এগিয়ে থাকতো। ওকলাহোমা, লুইজিয়ানা ও মিসিসিপিতে মাথাপিছু কারাবন্দির সংখ্যা এক হাজারের বেশি, অর্থাৎ ২০১৮ সালে ওই রাজ্যগুলোতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে একজনের বেশি মানুষ কারাবন্দি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মাথাপিছু কারাবন্দির হিসাবে এত বেশি সংখ্যক প্রিজন পপুলেশন শুধু এল সালভাদরেই আছে, সেখানে প্রতি এক লাখের মধ্যে ৬১৪ জন কারাবন্দি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার মাত্র আটভাগ হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ অথচ দেশটির কারা জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান।

যুক্তরাজ্য ও কানাডাতেও এ ধরনের ইস্যু আছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো এতটা ব্যাপক মাত্রায় না। যে ডাটা রয়েছে তাতে স্পষ্টভাবে উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে এবং কেন পুলিশিং ও জাস্টিস রিফর্ম দীর্ঘদিনের দাবি তা বোঝা যাচ্ছে।

এ/পি

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়