ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

৩০ ঘণ্টায় ট্রেনের জিম্মি দশার অবসান, যাত্রীদের মুখে রোমহর্ষক বর্ণনা

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ০১:২৯ পিএম


loading/img

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য বেলুচিস্তানে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) জাফর এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন ছিনতাই করে এর যাত্রীদের জিম্মি করেছিল ওই রাজ্যের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে সব হামলাকারীকে নিধন করে ট্রেনটির ৪৫০ যাত্রীকে উদ্ধার করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

বিজ্ঞাপন

ট্রেন ছিনতাইয়ের মিশনে অংশ নিয়েছিলেন বিএলএ’র ৩৩ জন সশস্ত্র যোদ্ধা। তাদের সবাই সেনা অভিযানে নিহত হয়েছেন। এর আগে হামলাকারীরা ২১ যাত্রীকে হত্যা করেন। এ ছাড়া অভিযান চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য নিহত হয়েছেন।

জিম্মি হওয়া ট্রেন থেকে মুক্তি পেয়ে বিবিসি এএফপি ও নিউইয়র্ক টাইমসের কাছে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন যাত্রীরা। বিদ্রোহীদের হাত থেকে বাঁচতে কীভাবে তারা লুকিয়েছিলেন, কীভাবে প্রতিনিয়ত সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন, কী কী দেখেছেন, মুক্তির পর সেই ঘটনাবলির ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন অনেকে। 

বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন

ইশাক নুর নামের এক যাত্রী মুক্তির পর বিবিসিকে বলেন, ‘গুলির পর গুলি চলছিল। আমরা কোনোরকমে দম বন্ধ করে বসেছিলাম। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’ 

বিজ্ঞাপন

সন্তানদের আড়াল করে বসেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফ ও তার স্ত্রী। যাতে কোনোভাবে গুলি তাদের দিকে চলে এলে আগে বাবা-মায়ের গায়ে লাগে।

সন্তানেরা যাতে বেঁচে যায়। আশরাফ বলেন, ‘যাত্রীরা সকলে প্রচণ্ড ভয়ে ছিলেন। যেন মনে হচ্ছিল, এটাই পৃথিবীর শেষ দিন।’ আরেক এক যাত্রী এএফপিকে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বন্দুকধারীরা যাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন কারা বেলুচিস্তান প্রদেশের, আর কারা বাইরের। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পর যাত্রীদের সামনেই কয়েকজন সেনাকে গুলি করেন বিদ্রোহীরা।

মোহাম্মদ নাভিদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, প্রথমেই আমাদের ট্রেন থেকে নামিয়ে সন্ত্রাসীরা পুরুষ ও নারীদের আলাদা করে দাঁড় করায়। তারপর নারী এবং বয়স্কদের চলে যেতে বলে। ট্রেন নিজেদের দখলে নেওয়ার পর বেলুচ বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা করছিলেন, মুক্তির পর তাও জানিয়েছেন বন্দিরা। 

মুশতাক মোহাম্মদ বলেন, বিদ্রোহীরা মূলত বেলুচ ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। তাদের নেতা বার বার সতর্ক করে দিচ্ছিলেন। সকলকে সজাগ থাকতে বলছিলেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধির দিকে নজর রাখতে বলা হচ্ছিল। 

আরও পড়ুন

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা জেলার বাসিন্দা নোমান আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি ওই ট্রেনে ঈদের জন্য বাড়ি ফিরছিলেন।তার কথায়, ‘আমরা যখন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায়, তখন গুলি থেকে বাঁচতে ট্রেনের কামরার দরজা বন্ধ করে দেই। কিছুক্ষণ পর একজন সন্ত্রাসী এসে বাকি যাত্রীদের থেকে নারী এবং বয়স্কদের আলাদা করে নিয়ে যায়। কয়েকজন আহত যাত্রী ট্রেনের মধ্যে থেকে যায়। তারা বের না হতে চাওয়ায় সন্ত্রাসীরা তাদের ওপরে গুলি চালায়।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ট্রেনটিতে মোট ৪৪০ জন যাত্রী ছিল। অভিযানে ৩৩ সন্ত্রাসীর সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অভিযানের সময় কোনো যাত্রী নিহত হননি। তবে এর আগেই ২১ যাত্রীকে হত্যা করেন হামলাকারীরা।

পেশোয়ারগামী যাত্রী গত মঙ্গলবার দুপুরে হামলা চালায় সশস্ত্র একটি গোষ্ঠী। বেলুচিস্তানের বোলান এলাকার কাছে তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে যাত্রীদের জিম্মি করে।

নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, হামলাকারীরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে ‘বিদেশি সহায়তাকারী’দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাদের মধ্যে আফগানিস্তানে থাকা একজন ‘মাস্টারমাইন্ড’ রয়েছেন। এ ছাড়া তারা ট্রেনে থাকা নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। এ কারণে অভিযানে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

আরও পড়ুন

এদিকে যাত্রীবাহী ট্রেনে ‘সন্ত্রাসী হামলার’ তীব্র নিন্দা জানান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এক বিবৃতিতে শাহবাজ শরিফ বলেন, এই পবিত্র রমজান মাসে নিরীহ যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো প্রমাণ করে, ওই সশস্ত্র ব্যক্তিদের ইসলাম, পাকিস্তান ও বেলুচিস্তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।

আরটিভি/এআর/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |