জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ ধারণ করতে চলেছে ইতোমধ্যে। দুই সপ্তাহ ধরে চলা হুমকি-ধমকির পর এবার বাস্তবিকই পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরের কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার (৬ মে) গভীর রাতে পরিচালিত এ অভিযানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়েছে দেশটি। বুধবার (৭ মে) সকাল থেকে হামলার জবাব দিতে উঠেপড়ে লেগেছে পাকিস্তানও।
এরই মধ্যে খবর, পাকিস্তানে বড় ধরনের সাইবার হামলা চালাতেও তৎপর হয়ে উঠেছে ভারতীয় হ্যাকাররা। তবে, তাদের প্রথম প্রচেষ্টাটি বানচাল করে দিয়েছে পাকিস্তান।
বুধবার (৭ মে) পাকিস্তানের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী শাজা ফাতিমা খাজার বরাতে এ তথ্য দিয়েছে দ্য ডন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (পিটিএ) এবং কারিগরি শাখাসহ সমস্ত প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় আছে এবং সাম্প্রতিক ভারতীয় সাইবার আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করেছে।
ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে একটি সংবাদ চ্যানেলের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ফাতিমা খাজা জোর দিয়ে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ভারতের কোনো সাইবার আক্রমণ সফল হতে দেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের কোনো প্রচেষ্টা প্রতিরোধে সতর্ক রয়েছে পাকিস্তান।
এ সময় ভারতীয় আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের এ মন্ত্রী বলেন, অন্ধকারের আড়ালে বেসামরিক নাগরিকদের উপর ভারতের আক্রমণ একটি কাপুরুষোচিত কাজ। ভারতের এই ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা চালানোর পুরোনো ইতিহাস রয়েছে, কিন্তু আমাদের বাহিনী সর্বদা উপযুক্ত পদ্ধতিতে জবাব দিয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং যেকোনো ধরণের শত্রুতার বিরুদ্ধে তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা অব্যাহত রাখবে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করেছে যা এখন। বুধবার (৭ মে) সকালে এক ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর কোটলি, ভাওয়ালপুর, মুরিদকে, বাগ ও মুজাফফরাবাদে ‘কাপুরুষোচিত’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। ইতোমধ্যে এর বদলা নিতে শুরু করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
একইদিন সকালে আরেক বিবৃতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি সেনাদের গোলাবর্ষণে তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এর আগে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে হামলার পর ভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করেছে। এর আওতায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের ৯টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে।
তবে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কোনো স্থাপনাকে এ অভিযানে নিশানা বানানো হয়নি উল্লেখ করে ভারত দাবি করছে, মূলত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল্লাহ মুজাহিদীন গোষ্ঠীর অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা, যেখানে অন্তত ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।
আরটিভি/এসএইচএম