ভালোবাসার ফাল্গুনে সাজসজ্জা
পাতা ঝরার দিন শেষ। বসন্তকে বরণ করতে প্রকৃতি সাজতে শুরু করেছে নতুন সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে। প্রকৃতির মতো মানুষের মনে দোলা দেয় ফাগুন। ভালোবাসা আর বসন্তের ছোঁয়ায় একাকার মনের কোণ নিজেকেও রাঙাতে চায় নতুন রূপে। বসন্তদিনে কবি-মন যেমন উদ্বেল, তেমনি পহেলা ফাল্গুনকে বরণ করে নিতে বাঙালিও সাজে বাসন্তী সাজে। নারীরা খোঁপায় জারবেরা, গোলাপ বা গাঁদা গুঁজে হলুদ, লাল বা বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে দল বেঁধে ভিড় জমায় শহরের প্রাণকেন্দ্রগুলোতে। তাদের সঙ্গে মিলিত হয় পরিবারের পুরুষ বা শিশু সদস্যটি। প্রেমিক, বন্ধু, পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে আড্ডা। গান-কবিতায় নেচে ওঠে পুরো শহর।
চলুন জেনে নিন উৎসবের দিনটিতে সাজগোজ নিয়ে কিছু ধারণা-
পোশাক: বাঙালি নারীর কাছে উৎসব মানেই শাড়ি, আর ছেলেদের হলো পাঞ্জাবি। বেশ কয়েক বছর ধরে পহেলা ফাল্গুনের দিনটিতে পোশাকে হলুদ বা বাসন্তী রংকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো। তবে এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সবুজ, মেজেন্টা, গোলাপি, সাদা, চাপা সাদা, পেস্ট, নীল ইত্যাদি হালকা রং। বসন্তের সঙ্গে যখন ভালোবাসার দিনটি মিলে গেছে তাই পোশাকের রঙ্গে ভিন্নতা নিয়ে আসতেই পারেন। আর বাঙালির প্রাণের এই উৎসবের দিনে শাড়ি ছাড়াও আপনার পছন্দ মতন যে কোনটিতেই হয়ে উঠতে পারেন অপরূপা।
ফাল্গুনের পরিচ্ছদ: পোশাকতো গেল, এবার আসা যাক পরিচ্ছদে। পোশাকে-পরিচ্ছদে মিল রাখতে শাড়ির সঙ্গে চাই হাত ভর্তি রিনিঝিনি রেশমি কাঁচের চুড়ি। কপালে ভোর বেলার লাল সূর্যের মতো লাল রঙা টিপ আর খোপায় গাঁদার ফুল। গোলাপ, গাঁদার সঙ্গে জারবেরাও এখন শোভা পায় কানের পাশেই। খোপা না করলে, খোলা চুলে বা এক বেনুনীতে খারাপ লাগবে নাহ। চাইলে ফুলের বেণিতেও সাজিয়ে নিতে পারেন আপনার প্রিয় চুলকে।
ফুলের বেণি- লম্বা চুল বাঁধতে যেমন লাগে দীর্ঘ সময়, তেমনি প্রয়োজন ধৈর্য। তাই, চুল লম্বা হলে আর উৎসবের দিন কোনো ধরনের ঝুটঝামেলায় যেতে না চাইলে সামনের দিকে সুবিধামতো সিঁথি করে পেছনে সহজে একটি বেণি করে নিন। শাড়ি হলুদ বলে যে শুধু হলুদ ফুলই মানাবে, বিষয়টি কিন্তু মোটেও সে রকম নয়। লম্বা বেণিতে একে একে নানা আকার ও রঙের ফুল, যেমন ছোট-বড় চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, তারাফুল ইত্যাদি লাগিয়ে নিতে পারেন। শাড়ি কিংবা সালোয়ার–কামিজ, সবকিছুর সঙ্গেই বেশ মানিয়ে যাবে চুলের এ সাজ।
খোলা চুলে ফুল- প্রাকৃতিকভাবে সোজা চুল হলে যন্ত্র দিয়ে চুল হালকা করে কোঁকড়া করে নিন। হেয়ারস্প্রে ব্যবহার করুন। এতে দীর্ঘ সময় চুল একই রকম থাকবে। এরপর সামনের দিকে ইচ্ছেমতো সিঁথি করে নিন। দুপাশ থেকে অর্ধেক চুল পেছনে নিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। এবার ক্লিপের ওপর ইচ্ছেমতো ফুল লাগিয়ে নিন। পেছনের খোলা কোঁকড়ানো চুলের কয়েকটি জায়গায় ছোট ছোট বিভিন্ন রঙের ফুল কালো ববিপিন দিয়ে লাগিয়ে নিন। দেখে মনে হবে, চুল বেয়ে ঝরে পরছে ফুল। মাঝারি কিংবা ছোট চুলে এই স্টাইল খুব মানাবে।
গয়না- ফুলের মালা না পরতে চাইলে আজকাল বাজারে কাঠ, পুতি, মাটি, মেটাল, পাথর বিভিন্ন ধরনের কারুকার্যময় কানের ও গলার সেট পাওয়া যায়। শাড়ির সঙ্গে এই সেটগুলোও বেশ মানান সই কিন্তু। পায়ে চাইলে আলতা রাঙ্গিয়ে চলার ছন্দ আনতে পরে নিতে পারেন চিকন কাজের নুপুর।
মেকআপ: প্রকৃতি যখন নিজে তার রঙ্গে আপনাকে সাজিয়ে দিচ্ছে সেখানে ভারি মেকআপ না করলেই ভালো লাগবে। আর সারাদিনের মেলার ভিড়ে ভারি মেকআপ বেমানানও বটে। বসন্ত রানীর সাজটা স্নিগ্ধ হলেই তা পরিপূর্ণ লাগবে। মুখে বিবি বা সিসি ক্রিম কিংবা হালকা ফাউন্ডেশন, চোখের পাতায় হালকা রঙের আইশ্যাডো দিয়ে টেনে নিন কাজল ও আইলাইনার। গালে চাইলে ব্লাশন দিতে পারেন। তবে অবশ্যই হালকা রঙের। এক্ষেত্রে হালকা গোলাপি বা ব্রোঞ্জ বেশ সুন্দর লাগবে। ঠোঁট রাঙাতে গোলাপি, কমলা, টেরাকোটার হালকা শেডই ভালো লাগবে। আর যদি গাঢ় রঙ খুব পছন্দ করে থাকেন তবে লাল লিপস্টিকই বাছুন।
ভালোবাসার ফাল্গুনে সাজসজ্জা নিয়ে বলি আরেকটি কথা। পোশাক শাড়ি বা কামিজ যাই হোক না কেন সারাদিনের হাটাহাটির কথা মাথায় রেখে হিল না পরে ফ্ল্যাট জুতা পরাই আরামদায়ক হবে।
মন্তব্য করুন