নিয়মিত যে ব্যায়াম করলে সুস্থ থাকবেন হার্টের রোগীরা

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ , ১১:০৮ এএম


নিয়মিত যে ব্যায়াম করলে সুস্থ থাকবেন হার্টের রোগীরা
ছবি: সংগৃহীত

দিন দিন হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে।  জীবন পদ্ধতির পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাসে বদল ও কায়িক শ্রমের অভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সময়মতো সচেতন না হলে যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আর হৃদরোগ মানেই সামান্য পরিশ্রমেও বিপদের ভয়। আর হাত ধরে কোনো কষ্টসাধ্য ব্যায়াম করা যাবে না, এমন করেই ভাবেন অধিকাংশ মানুষ।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, বিষয়টা মোটেও এমন নয় বরং নিয়ন্ত্রিত ব্যায়ামই হৃদরোগে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। তবে তা একেবারেই তাড়াহুড়ো করে শরীরকে জোর করে মানিয়ে নয়। বরং কী ভাবে ব্যায়াম করছেন আর কী কী ব্যায়াম করছেন তার ওপরেই নির্ভর করবে আপনি হৃদরোগের সঙ্গে কত সক্রিয় ভাবে লড়তে পারবেন।

জানেন কি, কেমন হবে হৃদরোগীর ব্যায়ামের নিয়ম?

বিজ্ঞাপন

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘হঠাৎ করে কিছু করবেন না। ধীরেসুস্থে এগোন, বিশেষ করে ব্যায়ামের অভ্যাস যদি না থাকে, বয়স বেশি হয় এবং হাইপ্রেশার বা হাঁটু–কোমর ব্যথা থাকে তা হলে আরও বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বরং বিশেষজ্ঞের কাছে জেনে নিন কোন ধরনের ব্যায়াম আপনার শরীরে এঅকান্তই প্রয়োজন।’’

কোল্যাটারাল সার্কুলেশন

ব্যায়াম করলে মূল করোনারি ধমনীগুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু ধমনী থাকে যারা সচরাচর তেমন কাজ করে না৷ নিয়মিত ব্যায়াম করলে আস্তে আস্তে এরা সজীব হয়।রক্ত সঞ্চালন শুরু হয় এদের মধ্যে দিয়ে। যত তা বাড়ে, তত তরতাজা হয় হার্ট। ধকল সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ে।

বিজ্ঞাপন

হৃদরোগ ঠেকাতে

হৃদয় ও ফুসফুসকে ভালো রাখতে দরকার কিছু কার্ডিও এক্সারসাইজ। অর্থাৎ হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার, খেলাধুলা ইত্যাদি। শুয়ে–বসে থাকার অভ্যাস থাকলে তা আগে ত্যাগ করুন। বরং হাঁটতে পারলে ব্যায়ামের প্রাথমিক ভাগটা শুরু করুন হাঁটা দিয়ে। প্রথমে ধীরে, তারপর অভ্যাস হয়ে গেলে মাঝারি গতিতে। দিনে অন্তত আধঘণ্টা হাঁটুন। শরীর তৈরি না থাকলে প্রথম দিকে মিনিট পনেরো হাঁটলেও চলবে। সম্ভব হলে দিনে দু’বার হাঁটুন। হাঁটার জন্য কিছু নিয়ম মানুন।

একই গতিতে একটানা হাঁটুন। সকালের দিকে ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে পারলে ভালো। সকালে সময় না পেলে বিকেলে বা সন্ধেয় হাঁটুন। শীতের ভোরের কুয়াশা ও ধুলো–ধোঁয়ার মিশ্রণ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। কাজেই একটু রোদ উঠলে বের হতে পারেন। বিকেলে হাঁটলে চেষ্টা করুন আলোকিত ও পরিচিত রাস্তায় হাঁটতে। যে গতিতে হাঁটলে শীতকালে অল্প ঘাম হয়, শ্বাসের হার ও নাড়ির গতি বাড়ে, একটু হাঁপিয়ে যান সেই গতিতে হাঁটুন। যদি খুব হাঁপিয়ে যান, বেশি ঘাম হয়, সারাদিন ক্লান্ত–অবসন্ন লাগে, বুঝবেন বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তখনই ব্যায়াম কমাতে হবে। আলাদা করে হাঁটার সময় না পেলে অফিস বা বাজার–হাট সেরে ফেরার সময় আধঘণ্টার মতো পথ হেঁটে আসতে পারেন। হাঁটুতে সমস্যা না থাকলে লিফ্‌টের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন। কাছাকাছি কোথাও যেতে হলে হেঁটে বা সাইকেলে যান। ঘরে নিজের কাজ নিজে করতে পারলে ভালো৷ মাঝেমধ্যে ঘর–বাড়ি বা গাড়ি ধোয়ামোছা করতে পারেন৷ নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে দিনে ২০–৩০ মিনিট জগিং করতে পারেন৷ দৌঁড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার, ট্রেডমিল করা যেতে পারে সবই।

ইসকিমিক হৃদরোগের সাবধানতা

কত দূর হাঁটলে বুকে ব্যথা হয় না, তা বুঝে ততটুকু হাঁটুন। বিশ্রাম নিন৷ আবার হাঁটুন। আবার বিশ্রাম নিন। কিছুদিন পর হার্ট আগের চেয়ে বেশি ধকল নিতে পারবে।গতির ব্যাপারেও এক নিয়ম। যে গতিতে হাঁটলে কষ্ট হয় না, সেই গতিতে হাঁটুন। সময়ের সঙ্গে গতি বাড়বে। ক’ধাপ সিঁড়ি ওঠার পর বুকে চাপ ধরে তা বুঝে উঠুন ধীরেসুস্থে। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে স্ট্রেচিং, যোগা, মেডিটেশন করতে পারেন। এতে যে শুধু মানসিক উদ্বেগ কমে ও শরীরের নমনীয়তা বাড়ে এমন নয়, হৃদরোগের প্রকোপও কম থাকে।

এর বাইরে কোনও ব্যায়াম করতে চাইলে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ মতো ট্রেডমিল টেস্ট করে নিন ও তার পরামর্শ মেনে চলুন।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, বাইপাস বা হার্ট অ্যাটাকের পরের সাবধানতা

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পর প্রথম ১–২ সপ্তাহ সাইক্লিং বা পায়ের অন্য ব্যায়াম, ভারী জিনিস তোলা বা ঠেলা বারণ। হাঁটাচলা করতে পারেন। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে বন্ধ পথ খুলে দিলে ও হার্ট ঠিকঠাক পাম্প করলে বয়স ও ফিটনেস অনুযায়ী যা যা ব্যায়াম করা যায়, সব করতে পারেন। তবে ডাক্তারের মতামত নিয়ে৷

বাইপাস সার্জারির পর এক–দেড় মাস ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যায়াম করুন। যেমন, ঘরে হালকা পায়চারি করা, বাড়ির সামনে অল্প হাঁটা, একতলা সিঁড়ি ওঠানামা করা, বাইরে একটু–আধটু বের হওয়া৷ এভাবে এগতে এগতে একটা সময় আসবে যখন অফিস, মর্নিংওয়াক সবই করতে পারবেন৷ হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা ঠিক থাকলে জিম, সাঁতার, ট্রেকিংও করা যায়৷

হার্ট অ্যাটাকের পর মাস খানেক গ্রেডেড এক্সারসাইজ করার পর ব্যায়ামের অনুমতি দেওয়া হয়। ট্রেডমিল টেস্ট করে অবস্থা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তার। তবে হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গেলে কিছু বিধিনিষেধ থাকে।

হার্ট ভিলোভাবে পাম্প করতে না পারলে কী করবেন:

বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হালকা যোগা, স্ট্রেচিং ও শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। তবে খুব সাবধানে। ভারী জিনিস তোলা, ঠেলা বা পরিশ্রমের কাজ করবেন না। সকালে বা বিকেলে হাঁটুন। রক্ত সঞ্চালন বেড়ে হার্টের সমস্যা কমতে শুরু করবে।

হার্ট অ্যাটাক হলে :

রোগীদের প্রথমে শুইয়ে দিতে হবে। এরপর জিহ্বার নিচে একটি এ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখতে হবে। যদি পাওয়া যায় তবে এ্যাসপিরিনের পাশাপাশি একটি সরবিট্রেট ট্যাবলেট রাখতে হবে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই হার্টের মাংসপেশির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission