আপনি কি এডিএইচডিতে আক্রান্ত? বুঝবেন যে লক্ষণে
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার (এডিএইচডি) হলো এক ধরনের স্নায়বিক আচরণগত সমস্যা, যা সাধারণত শৈশবে দেখা যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্করাও এতে আক্রান্ত হতে পারেন। স্বাভাবিক চঞ্চলতা ও এডিএইচডি এক জিনিস নয়। অতিমাত্রায় এডিএইচডি আক্রান্ত হলে শিশুকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন, আবার কারও ক্ষেত্রে অনেক পরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে পারে।
পুরুষদের মধ্যে এডিএইচডির হার নারীদের তুলনায় চার থেকে ছয় গুণ বেশি। যদিও এর সঠিক কারণ এখনও অস্পষ্ট, তবে বংশগত কারণ, স্নায়ুর রাসায়নিক পরিবর্তন বা ছোটবেলায় পর্যাপ্ত অভিভাবকীয় যত্নের অভাব এর জন্য দায়ী হতে পারে।
এডিএইচডির লক্ষণগুলো নিচে দেওয়া হলো—
- অস্থিরতা: সব সময় ছটফট করা, স্থির হয়ে বসে থাকতে না পারা।
- একাধিক কাজ একসঙ্গে শুরু করা: একটি কাজ শেষ না করেই নতুন কাজ শুরু করা, ফলে কিছুই সম্পূর্ণ না হওয়া।
- মনোযোগের অভাব: সহজেই মনোযোগ হারানো, এক চিন্তা থেকে অন্য চিন্তায় চলে যাওয়া।
- শরীরের অনবরত নড়াচড়া: বসে থাকলেও পা নাড়ানো, টেবিলে আঙুল ঠুকতে থাকা, নখ কামড়ানো, চোখে চোখ রেখে কথা বলতে না পারা, একা একা কথা বলা।
- আচরণগত সমস্যা: মিথ্যা বলা, মারামারি করা, চুরি করা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, অকারণে উদ্বিগ্ন থাকা।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা: নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে থাকা, যেকোনো কাজে সবচেয়ে খারাপ ফল কল্পনা করা।
- অগোছালো জীবনযাপন: কাজকর্ম ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে না পারা।
- বারবার ভুল করা: অসাবধানতার কারণে বারবার ভুল করা, নিয়মকানুন না মানা, অতিরিক্ত কথা বলা।
- ভুলে যাওয়া: সহজে তথ্য মনে না রাখা বা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া।
- সহজেই প্রভাবিত হওয়া: অন্যের কথায় বা প্ররোচনায় দ্রুত প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
- এক স্থানে স্থির হয়ে থাকতে না পারা: খুব তাড়াতাড়ি অস্থির হয়ে যাওয়া বা কিছুক্ষণ ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করাও কঠিন হয়ে যাওয়া।
- সম্পর্কে সমস্যা: ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে সমস্যা হওয়া।
প্রতিকারের উপায়
সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক ওষুধ, মনোবৈজ্ঞানিক থেরাপি এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার মাধ্যমে এডিএইচডি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শৈশবেই এই রোগ নির্ণয় করে ব্যবস্থা নিলে শিশুদের মানসিক বিকাশ ও শিক্ষাজীবন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এডিএইচডি রোগীদের জন্য শুধু ওষুধ নয়, পরিবারের সহায়তা ও বিশেষায়িত শিক্ষা পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত কাউন্সেলিং ও আচরণগত পরিচর্যার মাধ্যমে অনেক রোগী ভালো ফল পাচ্ছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে এডিএইচডির লক্ষণ কমানো সম্ভব। এ ছাড়াও ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে এডিএইচডি শিশুদের জন্য বিশেষ অ্যাপ ও শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে, যা তাদের মনোযোগ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এডিএইচডির ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, উন্নত চিকিৎসা ও গবেষণার মাধ্যমে আগামী দিনে এডিএইচডির আরও কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যাবে।
আরটিভি/জেএম
মন্তব্য করুন