মানুষ মাত্রই তার ইমোশন থাকবে। ইমোশন এক্সপ্রেস করা অবশ্যই ভালো, তবে অফিসে কাজ করার সময় এই ইমোশনই আপনার জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে। কর্মক্ষেত্রে ইমোশনাল হয়ে পড়া একটি স্বাভাবিক ব্যাপার কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত প্রকাশ কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যখন আপনি কোনো ইমোশনের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেন না, তখন সেটি আপনার পেশাগত দক্ষতা, মনোযোগ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যা থাকে। এই সমস্যাগুলো বিভিন্নভাবে প্রফেশনাল লাইফে এফেক্ট ফেলতে পারে। ফ্রাস্ট্রেশন, দুশ্চিন্তা, রাগ, কাউকে অপছন্দ করা বা নিজে ভালো না থাকা- সবই কোনো না ভাবে ইমোশন। তাই আগে বুঝতে হবে আপনি কী ধরনের ইমোশনাল প্রবলেম ফেইস করছেন এবং কীভাবে সেটি কাটিয়ে উঠবেন।
ইমোশনাল হয়ে কাজের ক্ষতি না করে কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায় চলুন দেখে নেওয়া যাক—
নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বোঝা: আপনি যে ইমোশনাল প্রবলেম ফেইস করছেন সেটা বোঝার জন্য আগে বুঝতে হবে আপনি কেমন আছেন। আমাদের মস্তিষ্কের আগে শরীর বুঝতে পারে আমরা কেমন আছি। চোখ লাল হয়ে যাওয়া, স্বাভাবিকের তুলনায় বুকে ধড়ফড় বেশি হওয়া এগুলো ইমোশন এক্সপ্রেস করারই একটি লক্ষণ। যদি বুঝতে পারেন অন্য সময়ের তুলনায় বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছে অথবা মন খারাপ হয়ে আছে, তাহলে যে কোনো অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার ভাবুন। এ সময়গুলোতে যদি একা থাকতে ভালো না লাগে তাহলে অফিসেই ক্লোজ কোনো সহকর্মীর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন।
রিল্যাক্স থাকা: কর্মক্ষেত্রে রিল্যাক্স থাকা অনেক জরুরি। সুযোগ পেলে চেষ্টা করুন নিজেকে একটু সময় দেওয়ার। ডিপ ব্রিদিং কিন্তু রিল্যাক্স হওয়ার খুব ভালো একটি উপায়। দুশ্চিন্তা, ফ্রাস্ট্রেশন, রাগ ঝেড়ে ফেলার জন্য এই পদ্ধতিটি বেশ কাজে দেয়। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এভাবে ১০ পর্যন্ত গুণে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। এছাড়া হাঁটাহাঁটি বা রিল্যাক্সিং মিউজিক শুনলেও বেশ আরাম লাগে। কারও সঙ্গে কথা বলতে যদি ভালো লাগে তবে সেটাও করতে পারেন।
পছন্দের কাজ করা: কাজের সময় মেন্টাল স্ট্রেস নতুন কিছু নয়। যে কোনো কারণেই স্ট্রেস হতে পারে। যে সময় এমন হচ্ছে, হতে পারে তখন কথা বলার জন্য আশেপাশে কাউকে পাচ্ছেন না। তখন আপনার নিজেকেই নিজের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। ছোট একটি জার্নাল পড়া, স্টিকি নোটে নিজের কথা লিখে রাখা, পছন্দের কোনো ভিডিও দেখা বা গান শোনা, কাগজে আঁকিবুঁকি- সে কোনো কিছুই হয়ে উঠতে পারে আপনার ইমোশন নিয়ন্ত্রণের উপায়।
কলিগদের প্রতি সম্মান থাকা: আপনি নিজেকে যেমন সম্মানিত হিসেবে দেখতে চান, আপনার কলিগকেও ঠিক একইভাবে ট্রিট করুন। যদি কেউ রুড আচরণ করে, জরুরি নয় আপনাকেও তার মতো হতে হবে। বরং রাগ না করে তাকে আপনার মতামত বোঝানোর চেষ্টা করুন।
ক্ষমা চাওয়া: ইমোশনাল হয়ে রাগ করা খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। যদিও উচিত নয়, তবু কাজ করতে করতে এমন যদি কখনো হয়েও যায়, তবে চেষ্টা করুন দ্রুত ক্ষমা চাওয়ার। একদম ডিফেন্সিভ হয়ে যে কিছু বলতে হবে এমন নয় কিন্তু! ‘আমি আমার আচরণের জন্য দুঃখিত’ – এমন একটি কথাও অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
নিজের দোষ স্বীকার করা: যদি আপনার ভুলের কারণে কোনো মিস কমিউনিকেশন অথবা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই রিয়েক্ট করা যাবে না। নিজের ভুল স্বীকার করে নিতে হবে।
নেগেটিভ ইমোশন বাড়ি পর্যন্ত না নিয়ে যাওয়া: কথাটি শুনতে একটু অবাক লাগলেও চেষ্টা করুন দিনের যত রাগ, মন খারাপ আছে সেগুলো অফিসেই শেষ করে ফেলতে। যদি এই খারাপের রেশ বাড়ি পর্যন্ত থাকে, তাহলে ভিতরে ভিতরে আপনি নিজেই হতাশ হয়ে যাবেন। অফিস শেষ করে বাড়ি ফেরার আগে সম্ভব হলে বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে বাইরে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন। এতে অনেকটা হালকা লাগবে।
নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া: কাজের শেষে পরিমিত বিশ্রাম ক্লান্তি যেমন দূর করে, তেমনই অনেক নেতিবাচক অনুভূতি ঠেকিয়ে রাখতেও সাহায্য করে। ঘুম ভালো হলে শরীর ভালো থাকবে, সাথে ইমোশন কন্ট্রোল করাও ইজি হবে। রাতে দেরি করে ঘুমানো, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, সকালে দেরি করে অফিসে যাওয়া – এগুলো টেনশন অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাই চেষ্টা করুন সময়মতো ঘুমিয়ে সকাল সকাল উঠে পড়তে।
নিজেকে দোষ না দেওয়া: অনেকেই যে কোনো নেগেটিভ ঘটনার কারণে নিজেকে দোষী মানতে থাকেন। এমনটি করা একদমই উচিত নয়। সব সময় পরিস্থিতি আপনার হাতে থাকবে না এটা মেনে নেওয়া শিখতে হবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, সেটা সামাল দিতে পারা জরুরি। এতে যে কোনো সময় নিজেকে যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে।
১০ পর্যন্ত গোণা: অফিসে ইমোশনাল হয়ে যদি কখনো রাগ হয় বা ফ্রাস্ট্রেশন কাজ করে অথবা তার চেয়েও খারাপ কিছু হয়, তখন মনে মনে ১০ পর্যন্ত গুণতে শুরু করুন। যদি বুঝতে পারেন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেন না তখন এই মেথড ইউজ করুন। যদি কোনো ঘটনার জন্য আপনি দায়ী হয়ে থাকেন, তবে কিছুটা সময় একা থাকুন। তবে হ্যাঁ, কিছু সময় পর অবশ্যই যে কারণে এমনটি হয়েছে সেটি নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
এক নজরে অফিসে ইমোশন কন্ট্রোল করার উপায়
নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বুঝতে পারা
বাড়তি চাপ না নিয়ে কর্মক্ষেত্রে রিল্যাক্স থাকা
১০ পর্যন্ত গোণা
স্টিকি নোটে কিছু লেখা অথবা পছন্দের গান শোনা, ভিডিও দেখা
নেগেটিভ ইমোশন বাড়ি পর্যন্ত না নিয়ে যাওয়া
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া
ইমোশন প্রতিটি মানুষের ইম্পরট্যান্ট একটি পার্ট। আবেগ না থাকলে আমরা কেউই টিকে থাকতে পারবো না। এর মানে এই নয় যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইমোশনকেই প্রায়োরিটি দিতে হবে। অফিসে যদি ইমোশন কন্ট্রোলে রাখতে পারেন, তবে কর্মস্থলে যেমন আপনি ভালো থাকবেন, তেমনই কাজ করাও আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
আরটিভি/এফআই