করোনা থেকে বেঁচে যাওয়া একটি পরিবারের গল্প
বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নানা নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সেগুলো প্রায় সবাই জেনে গেছি। এমনকি করোনা থেকে রক্ষা পেতে সে নিয়মগুলো পালনও করে যাচ্ছি।
যেমন— বাইরে থেকে এসে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা, সবসময় বাসা কিংবা অফিসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা, একে অপরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা, বাইরে থেকে বাসায় ফিরে গোসল করা, জামা কাপড় গরম পানিতে ধুয়ে ফেলা, সবসময় হালকা কুসুম পানি ব্যবহার করা ইত্যাদি। এছাড়া কেউ আক্রান্ত হলে তাকে আলাদা করে বা আইসোলেশনে রাখা।
কিন্তু এর ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। একই পরিবারের তিনজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে একজন সুস্থ ব্যক্তি কোনোরকম দ্বিধা কিংবা ভয় ছাড়াই কাটিয়েছেন পুরোটা সময়। আমরা জানবো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীতে বসবাসকারী তেমনি একটি পরিবারের কথা।
সদ্যবিবাহিত স্বামী-স্ত্রী দুজনই প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। লকডাউনের সময় হঠাৎ জানতে পারলেন তাদের বাবা-মা দুজনই করোনায় আক্রান্ত। তাই কালক্ষেপণ না করে স্বামী-স্ত্রী দুজনই করোনা টেস্ট করান। এতে দেখা যায় স্ত্রীর করোনা পজেটিভ। কিন্তু বেঁচে যান স্বামী। তাই নির্ভয়ে গত ১৭-১৮ দিন ধরে বাবা-মা ও স্ত্রীর সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেই ব্যক্তিটি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তার মধ্যে করোনা সংক্রান্ত কোনো ধরনের উপসর্গ দেখতে পাননি।
এই ১৭-১৮ দিনের পরিচর্যা শেষে তারা সকলেই আজ সুস্থ। যদিও এখনো তাদের দ্বিতীয়বার পরীক্ষা বাকি। এই কয়দিনে তিনি এমন কী করলেন যে তারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও বাসায় থেকে সুস্থ হয়ে গেলেন? আসুন জেনে নিই সেই পরিবারটি কীভাবে করোনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন।
সাহস নিয়ে পাশে থাকা
প্রথমত সুস্থ ব্যক্তিটি তার বাবা, মা ও স্ত্রীকে সাহস জুগিয়েছেন বেঁচে থাকার। তিনি ও তাদের পাশের পরিবারগুলো সবসময়ই তাদের পাশে ছিলেন। কেউই তাদের ছেড়ে যাননি। যেখানে আমরা সাধারণত পত্র-পত্রিকা কিংবা টিভির খবরে বিভিন্ন সময় দেখি স্বামী তার স্ত্রীকে, বাবা-মা তার সন্তানকে, সন্তান তার বাবা-মাকে ফেলে রেখে চলে যান।
আইসোলেশনে কী করেছেন তারা?
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তারা সকলেই এই সময়টাতে আইসোলেশনে ছিলেন। এসময় তারা প্রত্যেকেই বাসায় গরম পানি, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেন। প্রতিদিনই তারা লবণ মিশ্রিত হালকা কুসুম পানিতে গার্গোল করতেন। লেবু, আদা, রসুন, কালোজিরা, জিরা, লবঙ্গ, গোলমরিচ, তেজপাতা, এলাচ, সরিষার তেল এগুলোর মিশ্রণে গরম পানির মাধ্যমে দিনে চার থেকে পাঁচবার গলায় ভাপ নিতেন। ভিটামিন সি জাতীয় খাবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন। লেবু, মালটা, পেয়ারা ইত্যাদি ছিল তাদের নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের অংশ।
বাঁচার আশা জাগায় পারিবারিক বন্ধন
সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ তিনি যে বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েছেন তা হলো পারিবারিক বন্ধন। তার বক্তব্য হলো- এক্ষেত্রে রোগীকে ছেড়ে চলে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং পাশে থেকে তাকে উৎসাহ জোগানোটাই সুস্থ হওয়ার জন্য যথেষ্ট কার্যকরী ওষুধ। তিনি মনে করেন, অনেকেই অযথা ভয় পান। এজন্যে আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা। এসময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। ভেঙে পড়লে চলবে না। সাহস ও অটুট মনোবল নিয়ে পরিবারের পাশে থাকাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
এস/পি
মন্তব্য করুন