তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাতের এক অনন্য মানব সম্প্রদায়। এ মানব সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের মন-মগজে এক ভিন্ন নেতিবাচক বদ্ধ ধারণা বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে এটি তেমনই একটি ত্রুটি। অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মত তারা আরো বেশি স্নেহ মমতা ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ইসলাম তাদের কখনো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়নি। ইসলাম মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে এবং নামাজের জামাতসহ সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ অনুমোদন দিয়েছে। ইসলামী আইনশাস্ত্রের বই অধ্যয়ন করলে জানা যায়, ইসলাম তাদের একই জামাতে কাতারবদ্ধ হওয়ার অনুমতি দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে সত্য হলো, বর্তমান সমাজব্যবস্থায় হিজড়া সম্প্রদায়ের কোনো স্থান নেই।
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষের জন্ম ও দৈহিক অবয়ব সম্পূর্ণ আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে যেভাবে খুশি সৃষ্টি করেন। দৈহিক পূর্ণতা ও অপূর্ণতা তাঁর ইচ্ছাধীন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (আল্লাহ) মাতৃগর্ভে তোমাদের যেমন ইচ্ছা তেমন রূপ দেন। ...’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের হৃদয় এবং আমলসমূহ দেখেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭০৮)
কোনো মুসলিম পুরুষ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে বিয়ে করতে পারবে কিনা; সে বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়াকে আরবিতে খুনসা বলা হয়। খুনসা সাধারণত দুই রকম হয়: ১. খুনসা মুশকিলাহ, ২. খুনসা গাইরে মুশকিলাহ।
খুনসা মুশকিলাহ: কোনভাবেই যাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নি। তারা পুরুষ না মহিলা বোঝা যায় না। এমন খুনসা বা হিজড়াকে বিয়ে করা বৈধ নয়। (ফতওয়ায়ে শামি: ৬/৭২৯)
খুনসা গাইরে মুশকিলাহ: বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে যাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। অর্থাৎ স্ত্রীবাচক বা পুরুষবাচক কোনো আলামতের মাধ্যমে ধারণা করা যায় তাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) এই ধরণের। এদেরকে বিবাহ করা জায়েজ।
তবে বিবাহের পদ্ধতি হলো- আলামতের মাধ্যমে যদি স্ত্রীগোত্রীয় প্রমাণিত হয় তাহলে পুরুষের সঙ্গে এবং পুরুষগোত্রীয় প্রমাণিত হলে স্ত্রীলোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২০/২০১)
লিঙ্গ নির্ধারণের পদ্ধতি-
১। সাবালক বা সাবালিকা হওয়ার আগে পেশাব করার ধরণ দেখে নেওয়া। অর্থাৎ যদি পুরুষদের মত পেশাব করে পুরুষগোত্রীয়, যদি মেয়েদের মত পেশাব করে তাহলে নারীগোত্রীয় বলে গণ্য হবে।
২। যদি দাড়ি গজায় তাহলে পুরুষগোত্রীয় আর যদি বুক স্ফীত হয় তাহলে নারীগোত্রীয় ধরা হবে।
৩। স্বপ্নদোষ থেকেও আন্দাজ করা যায়। যদি পুরুষালী স্বপ্ন দেখে পুরুষ, যদি মেয়েদের মত স্বপ্ন দেখে নারী।
৪। অনেক সময় হিজড়া নারীর হায়েজ হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে তাকে স্ত্রীলোক বলে গণ্য করা হবে।
অনেক সময় হিজড়া পুরুষ স্ত্রীসম্ভোগের আগ্রহ বা স্ত্রী লোকের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কেবল এই কারণে এক হিজড়া থেকে রাসুলুল্লাহ সা. তার স্ত্রীদের পর্দা করতে বলেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং – ৪৩২৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং – ২১৮০)
দ্বিতীয় প্রকারের হিজড়াকে বিবাহ করা জায়েজ বলে যদিও ফুকাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন; কিন্তু একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছেন, স্বামী-স্ত্রী কেউ যেন অবৈধ পন্থায় তাদের যৌন চাহিদা পূরণ না করে। সুতরাং বিয়ে করার আগে অবশ্যই আবেগকে বিসর্জন দিয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এনএস