ঢাকাThursday, 05 June 2025, 22 Jyoishţho 1432

আর্তমানবতার সেবায় ‘মুনীর ফাউন্ডেশন’

বৃহস্পতিবার, ০২ জুন ২০২২ , ০৩:৩৭ পিএম


loading/img
ক্যানসার আক্রান্ত এক রোগীর স্বজনকে ফাউন্ডেশন থেকে দুই লাখ টাকার চেক প্রদান

সামাজিক কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ‘মুনীর ফাউন্ডেশন।’ ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু। কয়েক বছরে ফাউন্ডেশনের নাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপী। সংগঠনটি মূলত আর্তমানবতার সেবায় দরিদ্র মুমূর্ষু রোগীদের পাশে এগিয়ে আসে। 

বিজ্ঞাপন

 

ফাউন্ডেশনের নাম ‘মুনীর ফাউন্ডেশন’ কেন? এর পেছনেও রয়েছে এক ট্র্যাজেডিক গল্প। 

বিজ্ঞাপন


মুজাহিদুল ইসলাম মুনীর। একজন সাধারণ মানুষ। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং পরিবার আন্তপ্রাণ। ২০১৭ সালে ক্যানসার বা লার্জ ডিফিউজড বি-সেল লিম্ফোমায় আক্রান্ত হন। চিকিৎসার পর সুস্থও হন। ২০১৯ সালই পৃথিবীতে তার শেষ বছর। ২০১৯-এর জুন মাসের ২৯ তারিখ ভারতের একটি ক্যানসার সেন্টারে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে মুনীর। 


ক্যানসার আক্রান্ত মুনীরের প্রথমদিকে পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করে চিকিৎসা চললেও, দ্বিতীয়বার ক্যানসার ধরা পরলে পারিবারিক সামর্থ্য না থাকা মুনীরের পরিবার ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে চিকিৎসা করার চেষ্টা করেন। এ সময় সবার সহায়তায় আপ্লুত মুনীর আশা করেছিলেন যে, তিনি যদি সুস্থ হয়ে উঠবেন, তবে সবাই তাকে যেভাবে সহায়তা করেছে, ঠিক একিভাবে তিনিও অন্য অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়াবেন, যাতে আর্থিক সমস্যা থাকলেও প্রত্যেকেই চিকিৎসা করার সুযোগ পায়।

মুনীর মারা যাওয়ার পর কিছু উদ্যমী যুবক এই সংস্থা গঠন করেন। নাম দেন মুনীরের নামেই ‘মুনীর ফাউন্ডেশন।’ বিরামহীন চলছে কার্যক্রম। ২০১৯ সাল থেকে অদ্যবধি ৯৭ জন কিডনি, ক্যানসার ও চোখের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মুনীর ফাউন্ডেশন। শুধু ক্যানসার আক্রান্তরাই নন, সুচিকিৎসায় সামর্থহীন বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত শত শত দরিদ্র রোগীর পাশেও আর্থিক সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

 

বিজ্ঞাপন

 

বিলকিস আক্তার। স্বামী আরেকটা বিয়ে করে অন্য কোথাও সংসার শুরু করেছে। স্বামীর সঙ্গে বিলকেসর এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পরিবারের মা, ছেলে ও মেয়েসহ চারজনকে নিয়ে বিলকিসের বসবাস। বাবার পেনশনের টাকায় বিলকিসের কোনোমতে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০১৮ সালে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তার কোমড়ের হাড় ভেঙে যায় এবং অপারেশন করা হয়। যদিও তিনি এরপর আর নিজে থেকে হাঁটতে পারেনি। হুইল চেয়ার ভর করেই চলাফেরা করতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তার অপারেশনের সময় যে স্ক্রু ছিল সেটা তার স্পাইনালে রগ ভেদ করে চলে গিয়েছে। ধীরে ধীরে তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং পা বেঁকে যাচ্ছে। এ জন্য তার দ্রুত অপারেশন করতে হবে। প্রয়োজন আড়াই লাখ টাকা। নিঃস্ব পরিবারটির এবার আর কোনো উপায় নেই। উপায় একমাত্র ছিল মুনীর ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশন থেকে পঞ্চান্ন হাজার টাকার আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে চিকিৎসা চালিয়ে বিলকিস এখন মোটামুটি সুস্থ। চিকিৎসা চলছে। ভবিষ্যতেও বিলকিসের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে মুনীর ফাউন্ডেশন। 

 

আটত্রিশ বছর বয়সী রাজীব কুমার বিশ্বাস (৩৮) ব্ল্যাড ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। চার বছর ধরে অসুস্থ তিনি। পরিবারের ছোটো ভাই আপাতত তাদের সংসার খরচ চালাচ্ছেন। এই সংসার এবং চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে তাদের পরিবারকে খুবিই হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এর মধ্যে ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্যে রাজিবকে দুই মাসের মধ্যে  বোনমেরু ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে হবে। খরচ হবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা; যা তাদের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভবই বলা চলে। রাজিবের চিকিৎসার খরচ মেটাতে মুনীর ফাউন্ডেশনের তহবিল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

মুনীর ফাউন্ডেশন ফেসবুক পেজ গ্রুপ লিংক 

শুধু স্বামী পরিত্যক্তা বিলকিস আর রাজিবই  নয়, এ রকম অনেক বিলকিস-রাজিবের পাশে দাঁড়িয়েছে মুনীর ফাউন্ডেশন। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশন ১২ জন গুরুতর আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করছে। 


 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |