লাতিন আমেরিকার দুই ফুটবল পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সাথে ইউরোপীয় দুই আলোচিত দলের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা৷ দুটি খেলায় ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও নাটকীয়তায় ভরপুর। ইতিমধ্যে জেনে গেছেন টাইব্রেকারে মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণে প্রথম খেলায় ক্রোয়েশিয়া ৪-২ গোলে ব্রাজিলকে এবং আর্জেন্টিনা ৪-৩ গোলে নেদারল্যান্ডসে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেছে। অভিনন্দন ক্রোয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনা। বিদায় ব্রাজিল ও নেদারল্যান্ডস।
আজ কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ইউরোপীয় রানারআপ ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এবারই প্রথম ইউরোপের দুই বড় দল নকআউট পর্বে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। এর আগে গ্রুপ পর্বে দু'দলের দেখায় ইংল্যান্ড জয়ী হয়েছিল। আমার মনে হয় নকআউট পর্বে সবচেয়ে হাই ভোল্টেজ ম্যাচ এটি। ফাইনালের আগে আরেকটি ফাইনাল। দুদলই খেলার ধারাবাহিকতায় সেমিফাইনাল বা ফাইনালে যাওয়ার দাবী রাখে কিন্তু নকআউট পর্বের নিয়মে কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি।
কথাগুলো বলার কারণ দুই দলের অবস্থান ও সক্ষমতা। টুর্নামেন্টের শুরুতে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে বাদ পড়েন মূল একাদশের পল পগবা, এনগোলো কান্তে আর ব্যালেন ডি'অর জয়ী কারিম বেনজেমা কিন্তু ফ্রান্স দলে একজন কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন। দুর্দান্ত খেলছেন, গোল করছেন, গোল করাচ্ছেন। আছেন অলিভার জিরু। দারুণ খেলছেন আঁতোয়া গ্রিজমান। সবমিলিয়ে ফ্রান্স ফেবারিট হিসেবে খেলছে। আর বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ও কোচ দেশম জানেন কিভাবে চ্যাম্পিয়ান করাতে হয়! কিন্তু ইংল্যান্ড খেলছে বিচক্ষণ কোচ সাউথগেটের অধীনে। ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ২০২০ ইউরোর ফাইনালে খেলা ইংল্যান্ড এবার আরো ক্ষুরধার ও ভারসাম্যপূর্ণ দল। অধিনায়ক হ্যারি কেইন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নজর কেড়েছেন জুড বেলিংহাম ও ফিল ফোডেল। প্রমাণ করে যাচ্ছেন হ্যারি ম্যাগুয়ার। টুর্নামেন্টের এখনো পর্যন্ত অপরাজিত দল হচ্ছে ইংল্যান্ড। ফলে ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় একটি ম্যাচের হতে যাচ্ছে ফ্রান্স বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যেকার খেলাটি। এই খেলায় যে দলই জিতুক সেই দল ফাইনালে খেলছে নিশ্চিত কিন্তু চ্যাম্পিয়ান হবে কিনা বলা যাচ্ছে না!
আফ্রিকা মহাদেশের দলগুলো বিশ্বকাপ এলেই জ্বলে উঠে, হিসেব উলটপালট করে দেয়াই যেন তাদের দায়িত্ব। পূর্ববর্তী বিশ্বকাপগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া, সেলেগাল এর পথ ধরে এবার মরক্কো উত্থান ঘটছে। বিশ্বকাপে শিরোপা প্রত্যাশী দল বেলজিয়ামকে বিদায় করে দিয়ে, ক্রোশিয়াকে পেছনে ফেলে গ্রুপ পর্বে শীর্ষ স্থান দখল করে টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স মরক্কো। কাতার বিশ্বকাপ যেভাবে খেলছে এবং আশরাফ হাকিমি, হাকিম জিয়েখওরা যেভাবে মাতিয়ে রেখেছেন তাতে বোঝা যাচ্ছে বড় দলগুলোকে পরাস্ত করেই চমক দেখাতে চান।
কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর প্রতিপক্ষ পর্তুগাল। তারকা খেলোয়াড় রোনালদো, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পেশাদার গোল করা এই খেলোয়াড়কে বাইরে রেখে টপ সিক্সটিন ম্যাচে ৬ গোল দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে। রোনালদোর জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া গনসালো রামোস করেছেন কাতার বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিক। ৩৯ বছর বয়সী পেপের নেতৃত্বে অসাধারণ খেলে পর্তুগাল। গ্রুপ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারের পর এমন প্রত্যাবর্তন সেমিফাইনালের অন্যতম দাবীদার হিসেবে মনে করছেন অনেকেই। অবশ্য মরক্কোর ডিফেন্স ও গোলকিপার ইয়াসিন বুনোর কারণে খুব সহজ হবেনা পর্তুগালের জন্য। জয়ের ভবনায় দু'দলের সুযোগ থাকছে সেমিফাইনালে যাওয়ার।
লেখক: প্রোগ্রাম হেড, আরটিভি