আগস্টটা সত্যিই শোকের মাস। বাঙালি জাতির জন্য আরও বেশি শোকের এবং অভিশপ্ত এ মাস। কারণ, এই আগস্টেই বাঙালির আবেগ মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকরা নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে।
এই আগস্টেই দেশের ৬৩ জেলায় একসঙ্গে সিরিজ বোমাহামলা। এই আগস্টেই গ্রেনেড হামলা। আগস্ট এলেই যেন থমথম করে চারদিক। অবিসংবাদিতদের হারানোর হাহাকার যেন করুণ সুর তোলে।
তারেক মাসুদ; শুদ্ধ চলচ্চিত্র বলতে যার নাম হৃদয়ে দাগ কেটে যায়। সেই মহান পুরুষ ‘মাটির ময়না’ ‘মুক্তির গান’ এবং ‘রানওয়ে’র স্রষ্টা, এই আগস্টেই চলে গেছেন। সমাজের উপকারে আসে এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই বাঁচে। রবি ঠাকুরও কিন্তু এই আগস্টেই পারি জমিয়েছেন। এপার-ওপার দুই বাংলার প্রাণের কবি নজরুল, তিনিও এই আগস্টেই ধুঁকে ধুঁকে চলে গেলেন। আজব শহরের কবি শামসুর রাহমানও এই আগস্টেই।
ক্ষুদিরামকেও এ মাসেই হত্যা করেছিল ইংরেজরা। যে কিশোর ক্ষুদিরাম বোমা মেরে ইংরেজ সৈনিকদের গাড়ি উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। নেতাজী সুবাস চন্দ্র বোসও এই আগস্টেই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
এই আগস্ট এলেই মনে পড়ে জাপানের হিরোশিমা, নাগাসির কথা। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমাতে লিটল বয় নামে নিউক্লিয়ার বোমা ফেলে মেরে ফেলা হয় লক্ষাধিক মানুষ এবং নাগাসিতে প্রায় ৭০ হাজার। এই আগস্ট এলেই জাপানের বৃদ্ধ মানুষেরা এখনও কেঁপে কেঁপে ওঠে।
এই আগস্টেই চলে গেছেন ‘মহাকবি আলাওল’ ‘সিরাজদ্দৌলা’ ‘শকুন্তলা উপখ্যান’-এর মতো বিখ্যাত নাটকের স্রষ্টা সিকান্দার আবু জাফর। উপন্যাসিক আবু জাফর শামসুদ্দিনও এই আগস্টেই চলে গেছেন। ষাটের দশকে আবির্ভূত সৃজনশীল কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরীও পারি জমিয়েছেন এই আগস্টে। ‘বাবলি’, ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’, ‘কুমুদিনী’, ‘খেলা যখ’ এবং ‘ঋজুদা’র মতো সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলা কথাসাহিত্যকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন তুলনারহিত আঙ্গিকে, তিনি বুদ্ধদেব গুহ। প্রবাদপ্রতীম এই সাহিত্যিকও নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন এই আগস্টেই। সবশেষ কবি মোহাম্মদ রফিক।
আগস্টটা সত্যিই শোকের মাস।