যে নিষিদ্ধ কাজগুলোয় মানুষের অবাধ বিচরণ
কোরআন ও হাদিসে নিষিদ্ধ কাজ থেকে মুসলমানদের বিরত থাকতে কঠোরভাবে বলা হয়েছে, যা মেনে চলা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক। বর্তমানে কিছু নিষিদ্ধ কাজকে অনেক মুসলমান ভ্রুক্ষেপ করছেন না। মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ হলেও বিষয়গুলো দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। নিম্নে এমন কয়েকটি নিষিদ্ধ বিষয় তুলে ধরা হলো।
সুদের উপার্জন : ইসলামে সুদকে হারাম করেছে। এমনটি সুদের সকল কার্যক্রমকেও হারাম উল্লেখ করা হয়েছে। সুদের বিপরীতে আল্লাহ বেচাকেনাকে হালাল করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (সুরা বাকারা: ২৭৫)
সুদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হজরত মুহাম্মদ (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন। যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, যে সাক্ষী থাকে এবং যে ব্যক্তি সুদের হিসাব-নিকাশ বা সুদের চুক্তিপত্র ইত্যাদি লিখে দেয় সবার প্রতি হজরত মুহাম্মদ (সা.) লানত করেছেন। (তিরমিজি: ১২০৬)
হস্তমৈথুন : বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট সহজ হওয়ায় যে কেউ যেকোনো কিছু অনুসন্ধান এবং দেখার সুযোগ পাচ্ছে। এখানে খারাপ আসক্তির শিকার হচ্ছে যুবসমাজ। উত্তেজনাকর বিষয়গুলো দেখে অনেকেই হস্তমৈথুন করছেন; যা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইসলামে এটি নিষিদ্ধ কাজ। মুসলমানের জন্য একে জিনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে বিয়ে করতে পারে তার বিয়ে করে নেওয়া উচিত। কারণ, এটি হচ্ছে চোখকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচাবার এবং মানুষের সততা ও চারিত্রিক পবিত্ৰতা রক্ষার উৎকৃষ্ট উপায়। আর যার বিয়ে করার ক্ষমতা নেই তার সাওম পালন করা উচিত। সাওম মানুষের দেহের উত্তাপ ঠাণ্ডা করে দেয়। (বুখারি: ১৯০৫, মুসলিম: ১০১৮)
পুরুষের রেশম ও স্বর্ণ ব্যবহার : ইসলামে পুরুষের জন্য রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ব্যবহার নিষিদ্ধ। এর ওপর ইজমা রয়েছে। আলি (রা.) বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) একবার রেশমের পোশাককে ডান হাতে রাখেন এবং স্বর্ণকে বাম হাতে রাখেন। অতঃপর বলেন, এগুলোকে আল্লাহ কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। (আবু দাউদ: ৪০৫৭)
আত্মহত্যা : বিশ্বে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে তরুণ-তারণীসহ নানা বয়সের মানুষ এই কাজ করছে। ইসলাম আত্মহত্যাকারীর চূড়ান্ত স্থান জাহান্নাম বলে উল্লেখ করেছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারাল কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে। (বুখারি: ৪৪৬)
স্ত্রীর সঙ্গে জোর জবরদস্তি করা : ইসলামের বিধান অনুসারে স্ত্রীকে জবরদস্তি করা সবচেয়ে বড় পাপের একটি। হজরত মুহাম্মদ (সা.) স্ত্রীর সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ হতে শিখিয়েছেন। তিনি স্ত্রীকে সেরা বন্ধু বানানোর কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেন, তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। (সুরা নিসা: ১৯)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি। (ইবনে মাজাহ: ১৯৭৭; তিরমিজি: ৩৮৯৫)
মাদক ও জুয়া : আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, হে ইমানদারগণ, মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর হচ্ছে শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সুরা মায়েদা: ৯০)
অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, দুটোর মধ্যেই আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও। আর এ দুটোর পাপ উপকারের চাইতে অনেক বড়। (সুরা বাকারা: ২১৯)
আল্লাহ মুসলমানদের হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মন্তব্য করুন