মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন
বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ইয়াঙ্গুনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, দূতালয়ে নবনির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন।
এর বাইরেও ইয়াঙ্গুনের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন। দ্বিতীয় পর্বে আয়োজন করা হয় একটি বর্ণাঢ্য বহুজাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে ১২ দেশের ১৬টি ভাষাভাষী মানুষের অংশগ্রহণে বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মো. মনোয়ার হোসেন দূতালয়ে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রদূত হোসেন ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা এবং বহুভাষিকতার প্রচারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি ও তাৎপর্য উল্লেখ করেন।
এই বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বহুভাষার মাধ্যমে শিক্ষা : প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান চর্চার স্তম্ভ’ তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই দিনটি শুধুমাত্র আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মান করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষই নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ে ভাষা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তারও স্বীকৃতি দেয়।
ইয়াঙ্গুন ইউনিভার্সিটি অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস-এর সাথে যৌথভাবে আয়োজিত ‘মাতৃভাষার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে রাষ্ট্রদূত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর দাও উই হ্নিন, প্রফেসর উইন মায়ো টিন্ট, ড. উইন মিং উং এবং অ্যাকশন এইডের মিয়ানমারের কান্ট্রি ডিরেক্টর শিহাব উদ্দিন আহমেদ আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
আলোচকরা মাতৃভাষার গুরুত্ব এবং সমসাময়িক সমাজে তাদের সংরক্ষণ ও প্রচারের কৌশল তুলে ধরেন।
দিবসটির অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ ছিল বর্ণাঢ্য বহুজাতিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেখানে ভারত, চীন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, লাও পিডিআর, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে ৩০টি দেশের রাষ্ট্রদূত, অন্যান্য কূটনীতিক, মিয়ানমারে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দুই শতাধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০শে ফেব্রুয়ারি, ইয়াঙ্গুন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সহযোগিতায়, দূতাবাস একটি স্কুল প্রোগ্রামের আয়োজন করে যেখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত স্কুলের বাচ্চাদের সাথে মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন এবং তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণে উত্সাহিত করেন।
মন্তব্য করুন